গোপালগঞ্জে ‘ল’ কলেজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আ-ত্মসাৎ-এর অভি-যোগ

কে এম সাইফুর রহমান, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

গোপালগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব থানাপাড়া কবরস্থান সড়কে প্রতিষ্ঠিত শেখ ফজলুল করিম সেলিম “ল” কলেজের পূর্ণ সংস্কার সহ অবৈধ শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জনস্বার্থে এ সংক্রান্তে গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং তারিখে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন আহম্মদ খান, আবুল কাশেম মিয়া, রফিক শেখ ও লিজন অধিকারী। এছাড়াও অভিযোগ পত্রে সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে মাননীয় আইন উপদেষ্টা, মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), গোপালগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও গোপালগঞ্জ প্রেসক্লাবের নাম উল্লেখ রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শেখ ফজলুল করিম সেলিম “ল” কলেজের শুরুতে নাম ছিলো ন্যাশনাল “ল” কলেজ, গোপালগঞ্জ। উক্ত “ল” কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট বাবু রনজিৎ কুমার বাড়ৈ গামা। উক্ত কলেজের উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ আজগার আলী খান। “ল” কলেজের নিজস্ব কোন ক্যাম্পাস/ভবন না থাকায় পূর্ব থানাপাড়া কবরস্থানে অবস্থিত অধ্যক্ষ মহোদয়ের নিজের বাসার নিচ তলায় আন্ডার গ্রাউন্ডে ব্যবহার অনুপযোগী ছোট্ট একটি কক্ষে অধ্যক্ষ মহোদয়ের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনুযায়ী তাহার অনুগত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ব্যতীত কতিপয় হিন্দু/মুসলমান অ্যাডভোকেটদের দ্বারা তিনি এল.এল.বি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়াতেন। ক্লাস নেওয়া শিক্ষকগণ উক্ত “ল” কলেজের তালিকাভুক্ত শিক্ষক না হওয়ার কারণে তাদেরকে তিনি কোন প্রকার বেতন ভাতা বা সম্মানী দিতেন না এবং উক্ত কলেজের কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব তিনি শিক্ষকদেরকে দেখান নাই বলে অভিযোগ রয়েছে। বিগত ২০২৪ সালের ২২ মার্চ উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ বাবু রনজিৎ কুমার বাড়ৈ গামা অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর পর থেকে অধ্যক্ষের স্ত্রী জুনিয়র অ্যাডভোকেট মমতা রানী কির্ত্তনীয়া উক্ত “ল” কলেজের কোন স্টাফ বা শিক্ষক না হওয়া সত্ত্বেও বাৎসরিক লক্ষ-লক্ষ টাকার লোভে অবৈধ ও বে-আইনীভাবে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করে ভুয়া সই/স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে উক্ত কলেজের বিভিন্ন কাগজপত্রে তা ব্যবহার করে অতি গোপনে ভুয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে উক্ত কলেজের পক্ষে প্রতি সেশনের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ভর্তি, ফরম- ফিলাপ ও ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার আনুষাঙ্গিক আর্থিক খরচ-খরচা বাবদ প্রতি বছর প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার উর্ধ্বে আয় করে কলেজ উন্নয়নের পক্ষে বা অন্য কোন প্রয়োজনীয় খাতে তেমন কোন ব্যয় না করে চরম প্রতারণাও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়া তার স্বামীর মৃত্যুর পর হইতে এ পর্যন্ত এক বছর যাবত প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মূল অধ্যক্ষ তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কলেজের পক্ষে আয় কৃত ১৫/২০ কোটি টাকা ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্যায় ও অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছেন। “ল” কলেজের দৈনন্দিন বা সাপ্তাহিক বা মাসিক বা বাৎসরিক হিসাব-নিকাশের কোন খাতা পত্র বা রেজিস্ট্রার নেই বা আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব সংরক্ষণ করেননি বা কার্যকরী পরিষদের কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রয়াত অধ্যক্ষ মহোদয় সাবেক এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের একান্ত বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে উক্ত “ল “কলেজের নাম পরিবর্তন করেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতা রানী কির্ত্তনীয়া “ল” কলেজের নামে অর্জিত বরাদ্দকৃত ও আয়কৃত কোটি টাকা অন্যায় অবৈধ বে-আইনিভাবে আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান। “ল” কলেজের স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতা রানী কির্ত্তনীয়া জাল- জালিয়াতি ও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা অর্জন ও আত্মসাৎ এর পথ প্রদর্শক বা নাটের গুরু হিসেবে জালজালিয়াতির প্রশিক্ষক বা সম্রাট হিসেবে খ্যাত উক্ত কলেজের নিয়োগ বিহীন স্বঘোষিত অফিস সহকারী বা পিয়ন হিসেবে নিয়োজিত মিন্টু বর (৩২) এবং জাহিদ হোসেন সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে। এরা বিভিন্ন জেলা থেকে ঘুষ- দালালীর মাধ্যমে এল.এল.বি পড়ুয়া সহজ-সরল শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বছরে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা আদায় করা ও কলেজে ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে চরম জালজালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আর এ কাজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত রয়েছেন, তাদের জোগসাজস ছাড়া এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে ধারণা অভিযোগকারীদের।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট সংস্কারের সূত্র ধরে উক্ত শেখ ফজলুল করিম সেলিম “ল” কলেজের নাম পরিবর্তন করে গোপালগঞ্জ “ল” কলেজ রাখা সহ অবৈধ স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং নিয়োগ বিহীন অবৈধ অফিস সহকারী বা পিয়নদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেখ ফজলুল করিম সেলিম “ল” কলেজের স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতা রানী কির্ত্তনীয়ার নিকট জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই “ল” কলেজটি তারপর প্রয়াত স্বামী অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেবা তার স্বামী কোন দুর্নীতি অনিয়মের সাথে জড়িত নন। তিনি কিভাবে উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছেন শেখ সংক্রান্তে জানতে চাইলে তিনি জানান তিনি রেজুলেশনের মাধ্যমে বৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি যদি বৈধ না হবেন তাহলে কলেজের দাপ্তরিক কাজকর্ম তিনি কিভাবে করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ব্যাপারে অবহিত রয়েছেন। তবে তিনি এ দাবির স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। প্রসেসিং এ রয়েছে বলে জানান, একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদেরকে ম্যানেজের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বলেন, এ বিষয়ে আপাতত কোন নিউজ করার প্রয়োজন নেই। কাগজপত্র ঠিক হলে পরে আপনারা আমাদের পক্ষে নিউজ করে দিবেন আমরা আপনাদেরকে উপযুক্ত সম্মানি দিবো।

এছাড়াও এ বিষয়ে অভিযুক্ত অফিস সহকারী/ পিয়ন মিন্টু বর ও জাহিদ হোসেনের বক্তব্য নিতে আমাদের প্রতিনিধি উক্ত “ল” কলেজে একাধিকবার গিয়ে তাদেরকে না পাওয়ায় তাদের কারোরই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, “ল” কলেজের নামে ছোট্ট একটি সাইনবোর্ড অতীতে দৃশ্যমান থাকলেও বর্তমানে সেখানে গিয়ে সেই সাইনবোর্ডটি আর দেখা যায়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন “ল” কলেজের নাম পরিবর্তন হয়েছে। আমরা নতুন সাইনবোর্ড তৈরি করতে দিয়েছি।

উক্ত কলেজের উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব মোঃ আজগার আলী খান সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তি প্রদান সহ “ল” কলেজটির কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *