আরিফ রববানী ময়মনসিংহ।।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হল হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ভোর থেকেই মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় দেখা যায়। ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে বিজয়ার প্রার্থনা করেন। পরে বিকাল থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
এর আগে বিহিত পূজা আর সিঁদুর খেলার আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুর্গাপূজার দশমীর প্রস্তুতি। সকাল থেকে ময়মনসিংহ নগরীসহ জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নারী ভক্তরা দেবীর চরণে সিঁদুর নিবেদন করেন এবং পরস্পরের সঙ্গে সিঁদুর খেলায় মাতেন। পূজার শেষ দিনে ভক্তদের মাঝে ছিল আবেগঘন পরিবেশ। দেবীর চরণে প্রণাম করে তাঁকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি চলে সারা দিন ধরে। সিঁদুর খেলার পর ভক্তরা দেবীর কাছে পরিবার ও সমাজের কল্যাণ কামনা করেন।
সিদুর নিবেদন অনুষ্ঠানে সাধারণত বিবাহিত নারীরা দেবীর চরণে সিঁদুর দান করেন এবং তা কৌটায় রেখে সারা বছর ব্যবহার করেন। এ সময় তারা একে অপরের কপাল ও চিবুকে দেবীর চরণ স্পর্শ করা সিঁদুর লাগিয়ে দেন।
বিকেল থেকে ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনা ছাড়া বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে নগরীর কাচারী এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের তীরে বিসর্জন ঘাটে নিয়ে বিসর্জন দেয়া হয় প্রতিমা। একই সময়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চলে বিসর্জন। সড়কে পুলিশের টহল ও নদীতে ছিল নৌপুলিশের টহল। ফায়ার সার্ভিসের টিমও দায়িত্ব পালন করে।
এর আগে দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য এক বিজয়া শোভাযাত্রা। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুরের পর থেকেই ভক্তরা ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন দুর্গাবাড়ী মোড়ে।
পরে শত শত ট্রাক প্রতিমা নিয়ে কাচারীঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। দুর্গাবাড়ী মন্দির থেকে শুরু করে প্রতিমা যাত্রাটি কাচারী ঘাটে পৌঁছে। রাস্তায়, বিভিন্ন ভবনে পুলিশ ছিল সতর্কাবস্থায়। রাস্তার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বলছে, গত বছরের চেয়ে এ বছর আনন্দ, শান্তিতে পূজা উদযাপন হয়েছে। ময়মনসিংহের কাচারী ঘাটে কড়া নিরাপত্তায় বিসর্জন হয়েছে দুর্গাপূজার প্রতিমা। বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ প্রস্তুতি নেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সদস্য। আর বিসর্জনের সময় নৌ দুর্ঘটনা রোধে টহল দিচ্ছে নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড।
বিসর্জন ঘাট পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, ডিআইজি আতাউল কিবরিয়া, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম,পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজিদ,
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) আব্দুল্লাহ আল মামুন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম প্রিন্স,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোঃ মোহাইমেনুর রশিদ,সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম, প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান, প্রকৌশলী আজারুল ইসলাম
সদর সার্কেল মোঃ সোহরাওয়ার্দী হোসেন, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) আবু নাছের মোহাম্মদ জহির, বিএনপি নেতা অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, বিএনপির নেতা মোঃ মাহবুব আলম, সিটি কর্পোরেশনের খাদ্য ও স্যানিটেশন কর্মকর্তা দীপক মজুমদার এবং বর্জ্য কর্মকর্তা মোহাব্বত আলীসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা,সেনাবাহিনী, পুলিশ ও মহানগর সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দরা।
শাস্ত্রীয় মতে, ২০২৫ সালে মা দুর্গা হাতির পিঠে চড়ে মর্ত্যে আগমন করে এবং দোলায় চড়ে কৈলাসে ফিরেন।
Leave a Reply