ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতাঃ
ঝিনাইদহের আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা ফ্যাসিষ্ট আ’লীগের দোসর খ ম আমীর আলীকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০২২ এর ৫(২) ধারাবলে কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, অবৈধ সোনা চোরাচালান ও ব্যাংকের পেঅর্ডার জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে জানা গেছে। এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খ.ম. আমির আলীর নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)/৪ ধারায় মামলা আছে, বনানী থানার মামলা নং ১৪। ওই মামলায় তিনি ৮ নং আসামী। ২০১২ সালে আমির আলীসহ একটি প্রতারক চক্র একটি ভুয়া কোম্পানী খুলে স্বর্ণ ব্যবসার নামে চেক ও পে-অর্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত এক অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা খ ম আমীর আলী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সদস্য পদ পাওয়ার পরে নানান অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। গোপনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য কাড়ি কাড়ি অর্থ হানিয়ে নেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের আমিরুল ইসলাম তার লিখিত অভিযোগ উল্লেখ করেন, খ ম আমীর আলী তার পিতা রুস্তম আলীকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর আশ^াস দিয়ে এক লাখ ৭৮ হাজার টাকা গ্রহন করেন। কিন্তু রুস্তম আলীকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি। এখন পাওয়ানা টাকা চাইলে তিনি ফেরৎ দিচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র জীবন থেকেই আমির আলী ধ্রæত প্রকৃতির। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হওয়ার পর তার ভাগ্য বদলে যায়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করানোর প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশে তিনি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। ঝিনাইদহের একাধিক রাজনৈতিক সুত্রে জানা গেছে, আমির আলী ছাত্রলীগের রাজিনীতর সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আ’লীগ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকীর বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমির আলীর ভয়ে সবাই তটস্থ থাকতেন। অপর এক লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলক‚পা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মনোয়ার হোসেন মালিতার মাধ্যমে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ইনসুরেন্স করার নামে ২৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এই অপকর্মের সঙ্গে খ ম আমীর আলীও জড়িত বলে দাবী করা হয়। ওই অভিযোগপত্রে মোঃ ফরিদ রেজা, মোঃ নাজিমুদ্দীন, মোঃ আবু দাউদ, মোঃ মেহের আলী ও আসাদুজ্জামানসহ ১৪ জন স্বাক্ষর করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে খ ম আমীর আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়। ইনসুরেন্স কম্পানীর টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এর সঙ্গে শৈলকুপার মনোয়ার হোসেন মালিথা জড়িত। তিনি বলেন, নলডাঙ্গা গ্রামের আমিরুল ইসলাম যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা। সেকেন্দার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা এই অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, কি কারণে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তা তার জানা নেই। এ ভাবে তো কাউকে বাদ দেওয়া যায় না। কোনো কারণ ছাড়াই তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আদালত খুললে তিনি উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিবেন বলেও জানান।
আতিকুর রহমান
ঝিনাইদহ
Leave a Reply