গোদাগাড়ীর ইউএনওর ব-দলীর আ-দেশ স্থ-গিতের দাবীতে বিশাল মা-নববন্ধন ও বিক্ষো-ভ

নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মানবিক ফয়সাল আহমদের হটাৎ বদলীর আদেশ স্থগিতের দাবীতে গোদাগাড়ীর সর্বস্তরের জনগনের ব্যনারে বিশাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।

শনিবার সকাল ১১ টার সময় রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ এর বদলি আদেশ স্থগিত করে বর্তমান কর্মস্থলে রাখার লক্ষ্যে উপজেলার জনসাধরণের প্রাণের দাবি চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত গোদাগাড়ী উপজেলায় নির্বাহী অফিসার হিসেবে দেখতে চান গোদাগাড়ীবাসী। জনস্বার্থে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছেন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকারীগন।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ এর ৭ মাসে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমের বেশ কিছু চিত্র মানববন্ধনে শোভা পায়।

চাঁপাই নবাবগঞ্জ মহানগরী সড়কের দুপাশে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন হাজার খানিক নারী, পুরুষ, ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, কিশোর কিশোরী, ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামীপরিত্যক্তা, মুক্তিযুদ্ধা এবং তাদের সন্তান, বিভিন্ন খেলোয়াড়, কৃষক, শ্রমিক, ভ্যানচালক, রিকসা চালক, অটোচালক, চাকুরীজীবি, জনপ্রতনিধিসহ সর্বস্তরের জনগন।

মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ইউএনও ফয়সাল আহমেদ এর হঠাৎ বদলীতে মাদক ব্যবসায়ী, খাসপুকুর, ভেজাল সিন্ডিকেটের সদস্যগণ খুশি হলেও গোদাগাড়ী পৌরসভা ও উপজেলাবাসী খুশি হতে পারেন নি। তারা রীতিমতো হতাশ হয়েই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। তার বদলীর আদেশ স্থগিত করা না হলে আরও কঠিন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান।

মাত্র সাত মাসে গোদাগাড়ীর গরীব, দুস্থ, বিধবা, মুক্তিযুদ্ধা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রসমাজ, নির্যাতিত মানুষ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক কর্মী, যুবসমাজের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠা মানবিক ইউএনওর এমন বদলী কোনভাবেই সাধারণ জনগণ মেনে নিতে পারছেন না। তারা গোদাগাড়ীর গনমানুষের উন্নয়ন ও ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সরকারের উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের নিকট দাবী করছেন আরও কয়েক মাস উপজেলা নিবাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিয়ে সাড়ে ৪৫০ খাসপুকুর ইজারা দিয়ে সরকারের কোটি কোটি রাজস্ব আয় করার ব্যবস্থা করা। মাদকের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার।

বদলিতে বিষন্নতা নেমে এসেছে সাধারন মানুষের মাঝে। তার অফিসে কারো অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় নি। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, গরীব, দুস্থ মহিলা, ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, আদিবাসী সবাই অফিসে যেতেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ মনোযোগ সহকারী সবার কথা শুনতেন। সমাধান দিতেন। বাল্য বিয়ে, যৌতুক, মাদক,
দখলবাজী, চাঁদাবাজী, চুরি, ছিনতাই অনেক অংশে কমে এসেছিল। ভেজাল বিরোধী অভিযানে তিনি শতভাগ সফল। তিনি একজন প্রশাসক হিসেবে নয়, সামাজসেবক, গোদাগাড়ীবাসীর কামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার, শনিবারও অফিসে কাজ করতেন, দিন রাত পরিশ্রম করতেন, ভেজাল, মাদক, বাল্যবিয়ে, অবৈধভাবে পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতেন।

নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য নিয়েছেন বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ, সেলাই, মালি, মুচিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন বাসীর জন্য করেছেন স্পিড বোর্ডের ব্যবস্থা যেখানে চর থেকে পার হতে সময় লাগতো প্রায় ১ ঘন্টা সেখানে ১০/১৫ মিনিট জরুরী সেবার ব্যবস্থা করেছেন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পৌর সদরসহ গোল চত্তরে করেন সিসি ক্যামেরায় স্থাপন। যুবকদের মাদক থেকে সরিয়ে আনতে খেলাধুলার উপর গুরুত্ব দিয়ে ২ পৌরসভা, ৯ ইউনিয়নে ৯৯ টি ক্লাব গঠন, খেলধুার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন, প্রতিটি পৌরসভায় শিশুদের বিনোদনের মিনি শিশুপার্ক তৈরী করছেন। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলায় যোগদানের পর থেকে ছুটে গিয়েছেন গোদাগাড়ীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

নিজ কার্যালয়ে বসে গণশুনানি করে মিটিয়েছেন অনেক বড় বড় বিরোধ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে ইউএনওর বদলির আদেশটি ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করে বলেন, গোদাগাড়ীবাসী হারালেন একজন যোগ্য প্রশাসক ও অভিভাবক।

সাধারণ গোদাগাড়ীবাসী বলছেন আরও কয়েক মাস সময় ইউএনও ফয়সাল আহমেদ সুযোগ পেলে উন্নয়ন কসর্মকাণ্ডগুলোর সুফল পেত, আসার আলো দেখত গোদাগাড়ীবাসী। অবিলম্বে বদলীর আদেশ স্থগিতের জোর দাবী জানাই।

তিনি মাদকপ্রবন এলাকা গোদাগাড়ীতে এসে প্রথমেই শুরু করেন মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান,বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, ভেজাল খাদ্য, ভেজাল তেল, নমেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ, পুকুর খনন, রাস্তা চলাচলে প্রতিবন্ধকতাসৃষ্টকরীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করে গোদাগাড়ীর আইকনে পরিনত হয়েছন। গোদাগাড়ীর শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করা।
গোদাগাড়ী পৌরসভার জন্মলগ্নে শিক্ষাবৃত্তি চিল না। চালুকরে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

তবে বদলির বিষয়ে কথা হয় গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সরকারি কর্মকর্তা দেশের স্বার্থে দেশের জনগণের স্বার্থে সরকার যেখানে চাইবে এখানেই আমাদের যেতে হবে তবে গোদাগাড়ীবাসীর ভালোবাসার কথা সারাজীন মনে থাকবে। আমি আপনাদের প্রশাসক হিসেবে নয় কামলার মত কাজ করেছি। দিন রাত সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি। এখানে যতদিন রিজিক ছিল ততদিন ছিলাম, ভালকাজ করার চেষ্টা করেছি।

এব্যাপরে গোদাগাড়ী সরকারী স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান মাসুম বলেন, উনি অনেক ভালো মনের মানুষ। আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন। তার বদলীর আদেশ স্থগিতের জোর দাবী জানান।
সেলাই প্রশিক্ষনের মাষ্টার ট্রেনার শাহানারা বিশ্বাস শাহিনুর বলেন, গতকাল ফয়সাল আহমেদ স্যারের বদলীর আমাদের সাবার
মনখারাপ হয়েছে। তাইতো আমরা গোদাগাড়ীর সর্বস্তরের গন স্যারের বদলীর আদেশ স্থগিতের দাবীতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করচ্ছি, উদ্ধোর্তন কতৃপক্ষের নিকট স্মারকলিপি দেয়া হবে ইনসাল্লাহ। গোদাগাড়ী সার্বিক উন্নয়নে কারো সাথে তুলনা করা যাবে না। সাত মাসে উনি যা করেছেন ১৭ বছরে তা করতে পরেন নি।

বিধবা সুরভী বলেন, দেড় বছর আগে স্বামী মারা গেছেন, দুইটি ছেলে নিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাই। অনেক আশাভরসা নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষনে অংশ গ্রহন করেছিলাম স্যারের বদলীতে সবশেষ। স্যারের বদলীর আদেশ স্থগিতের জোরদাবী জানাচ্ছি।

কুলসুম বেওয়া জানান, স্বামী ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনা মারা যান।
১ ছেলে ও ১ মেয়ে কষ্ট করে হাঁস – মুরগী পুষে ( পালন করে) ডিম বিক্রি করে সংসার চালাই। বাড়ীতে সেলাই মেশিন নেই। কেনার সামর্থ নেই। মাষ্টার ট্রেনার শাহানারা বিশ্বাস শাহিনুর ম্যাডাম যে কাজ দেন সেই কাজ সুঁই সুতা ব্যবহার করে করি। ফয়সাল আহমেদ স্যারের বদলীতে সব স্বপ্ন ভঙ্গ হলো, স্যার যেন গোদাগাড়ীতে থাকতে পারেন সে দাবী জানাই সরকার প্রধানের নিকট।

সমাজসেবক, মাহাফুজুল বারী বলেন, এই দেশের সিস্টেমই খারাপ। কারো ভালো কাজ সহ্য হয় না। ১৭ বছরে কেউ যেটা করেনি টাকার লোভ না করে ইউ এনও ফয়সাল আহমেদ সেটা করে ৪৫০ টির বেশি খাস পুকুর অবমুক্ত করেছেন। এই দেশে ভালো মানুষের জায়গা নেই এটাই তার প্রমাণ। অবিলম্বে বদলী আদেশ স্থগিতের দাবী জানাই।

প্রতিবন্ধী কামরুল ইসলাম ও ঝর্না বলেন, আমি কাজ জানি, কিন্তু শিখার শেষ নেই। তাই তো উচ্চতর সেলাই প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহন করেছি। ইউএনও মহোদয়ের বদলীতে আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আমাদের সেলাই প্রশিক্ষনের ভবিষ্যৎ শেষ। এমন কোন বিভাগ নেই যেখানে উন্নয়নের ইউএনও মহোদয় এর ছোঁয়া লাগেনি। তাই ইউএনও বদলীর স্থগিতের জোর দাবী জানাই।

সাংবাদিক মুন বলেন, অনেক ভালো মানুষ ছিল। একজন যোগ্য অফিসারকে গোদাগাড়ীবাসী হারাতে চাই নি তাইতো আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

গোদাগাড়ীবাসী এখনো আসায় বুকবেঁধে আছেন যে হয়তো তাহার বদলির আদেশটি স্থগিত হবে। যদি হয় তবে মাদক ব্যবসায়ী, খাসপুকুর, ভেজাল সিন্ডকেট হেরে যবে। বেঁচে যাবে গোদাগাড়ী বাসী। উন্নয়ন কাজগুলি সঠিকভাবে শেষ হবে। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বলেন দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী ।।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *