শিক্ষা বাণি-জ্যের গো-পন চুক্তি ফাঁ-স, ঝিনাইদহে নি-ষিদ্ধ গাইড বইয়ের র-মরমা ব্য-বসা

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতাঃ
শিক্ষা আর নৈতিকতা এখন যেন সুদূর অতীতের গল্প! ঝিনাইদহের স্কুল-কলেজগুলোতে চলছে শিক্ষার নামে ভয়ংকর এক বাণিজ্য। নিষিদ্ধ গাইড কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এক গোপন আঁতাত গড়ে তুলেছেন একদল অসাধু প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ। এর শিকার হচ্ছে নিরীহ শিক্ষার্থীরা, যাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঝিনাইদহের বাজারগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে লেকচার, ব্যতিক্রম, পাঞ্জেরী, আর অ্যাডভান্সের মতো নামীদামি প্রকাশনীগুলোর গাইড বই। শুধু বইয়ের দোকান নয়, ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে অনলাইন মার্কেটপ্লেস—সবখানেই চলছে এই অবৈধ পণ্যের কেনাবেচা।অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঝিনাইদহের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাথা গুনে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে চুক্তি করছেন এই গাইড মাফিয়াদের সঙ্গে। ফলে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীদের এই গাইড বইগুলো কিনতে হচ্ছে, যা তাদের সৃজনশীলতা ও মেধার বিকাশকে পুরোপুরি থামিয়ে দিচ্ছে।
টাকার খেলা ও সিন্ডিকেটের জাল
এই অবৈধ ব্যবসার মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে কয়েকটি নাম। উদয়ন লাইব্রেরির মালিক রাকিবুল ইসলাম রণি একাই ১২টি নিষিদ্ধ গাইড কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।
অভিযোগ আছে, তিনি ২০২৬ সালের জন্য শতাধিক কোচিং সেন্টারের সঙ্গে ১ থেকে ২ কোটি টাকার গাইড বই বিক্রির চুক্তি করেছেন। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য জেলার ৬টি উপজেলার ৪২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রকাশনা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ডোনেশন নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক চুক্তির পরিমাণ রীতিমতো চোখ কপালে তোলার মতো:
* ঝিনাইদহ কাঞ্চননগর স্কুল এন্ড কলেজ: লেকচার কোম্পানির প্রতিনিধি মঞ্জুরুল ইসলামের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা।
* হাট গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
* কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি একাই লেকচার কোম্পানির কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন!
অভিভাবকদের ক্ষোভ, প্রশাসনের নীরবতা ভুক্তভোগী অভিভাবকরা বলছেন, “বই না কিনলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ক্লাসেই ঢুকতে দেওয়া হয় না!” এক অভিভাবক আক্ষেপ করে জানান, তাঁর ছেলেকে দশম শ্রেণীতে নিষিদ্ধ গাইড ও টেস্ট পেপার কিনতে ৮ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে।এই অবৈধ বাণিজ্যের বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান এটিকে সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
শিক্ষা ও আইসিটির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ.বি.এম. খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেছেন, তথ্য-প্রমাণ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং দ্রুতই এই নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই শিক্ষাবাণিজ্যের জাল কি সত্যিই ছিন্ন করা সম্ভব? নাকি কিছু প্রধান শিক্ষক ও অসাধু প্রকাশকদের যোগসাজশে আগামী দিনেও এভাবে শিক্ষার্থীদের মেধা ও অর্থ দুটোই নষ্ট হতে থাকবে?

আতিকুর রহমান
ঝিনাইদহ।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *