September 17, 2025, 6:36 pm
রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩৫০ টি খাস পুকুর শক্তিশালী সিন্ডিকেট জালিয়াতি করে রিটের মাধ্যমে বছরের পর বছর ভোগদখল করে আসছিল। রিট বাতিল হওয়ায় পুকুর সিন্ডিকেটের মাথায় বাজ পড়েছে। পুকুর গুলি এখন ইজারা প্রদানে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা না থাকায় ইজারা দিয়ে শত কোটি টাকার রাজস্ব পেতে যাচ্ছে সরকার যার প্রভাব পড়বে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে।
ভূয়া চালান, জাল দলিল সৃজন করে পুকুর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওইসব দলিল উপস্থাপন করে উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত তাৎক্ষণিভাবে দলিলের বৈধতা ও সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেন না।
রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে একটা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেন। সারা বছরে এসব রিটের আর কোনো খোঁজখবর থাকে না। কিন্তু ওই সবপুকুর ইজারার জন্য তালিকা প্রকাশ করে শেষ মূহূত্বে রিটের কারেনে আর ইজারা দিতে পারেন না।
এপুকুর পুকুর চুরির ব্যপারটি গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ বুঝতে পেরে পুকুর জালিয়াতিরঙ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। গত ২৫/০৩/২০২৫ খ্রি. তারিখে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমদের সভাপতিত্বে গোদাগাড়ী উপজেলা জরমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান নেয়া হয়। ১০৪৪৬/২০২৩ নং রিট বাতিল করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। মাধবপুর রাংগামাটি মৎসজীবিসমবায় সমিতি লি. গোদাগাড়ী, নিয়ম বহির্ভূতভাবে নতুন সদস্য অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এবং সমিতির কাগজপত্র ব্যবহার করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সুপ্রিম কোটে রিট হয়েছে। এ সংক্রান্ত কোন তথ্য বা অভিযোগ ইতিপূর্বে সমিতি কর্তৃপক্ষ দ্বারা উপজেলা সমবায় অফিসারকে অবহিত না করায় উত্ত সমিতির বিরুদ্ধে নিবন্ধন বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফয়সাল আহমেদ জানান, রিট পিটিশন বাতিল হওয়ার কারণে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব পেতে যাচ্ছে। ৩ বছর থেকে প্রায় ৪৫০ টির অধিক ছোট বড় পুকুর ইজারা দিতে না পারায় বিশাল পরিমান রাজস্ব বঞ্চিত ছিল সরকার। রিট পিটিশন বাতিল হওয়ায় পুকুরগুলি ইজারা দিতে কোন প্রকার বাধা নেই। কিছু দিনের প্রায় ৩ হাজার পুকুর ১ বছরের জন্য খাস কালেকশনের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হবে। বিগত দিনে ভূয়া চালান ধরা পড়ায় ৫৫ টি পুকুরের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। এখন উপজেলা ভূমি অফিসের নাজিরের মাধ্যমে টাকা আদায় করে সাথে সাথে ব্যাংকে জমা দেয়া হচ্ছে এতে জালিয়াতির কোন সুযোগ নেই। কিছু দিনের প্রায় ৩ হাজার পুকুর ১ বছরের জন্য খাস কালেশনের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হবে। এতে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব পাবেন। বিগত দিনে ভূয়া চালান ধরা পড়ায় ৫৫ টি পুকুরের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। এখন উপজেলা ভূমি অফিসের নাজিরের মাধ্যমে টাকা আদায় করে সাথে সাথে ব্যাংকে জমা দেয়া হচ্ছে এতে জালিয়াতির কোন সুযোগ নেই।
উপজেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির
সদসাচিব ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শামসুল ইসলাম জানান, রিট বাতিল হওয়ায় এটা সরকারের বিশাল বিজয়। পুকুরগুলি রিট করে একটি সিন্ডিকেট বছরের পর বছর লিজ প্রদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বিনালিজে পুকুর ভোগ করেছেন।
গোদাগড়ী উপজেলা ভূমি অফিসের সায়রাত সহকারী মোসাঃ জুলেখা খাতুন বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমদের ভূয়া চালান, জাল দলিল পুকুর সিন্ডিকেট বিরুদ্ধে কঠোর মনভাব এবং রিট বাতিলের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।
প্রায় ৪ শতাধিক খাস পুকুরের রিট বাতিল হওয়ায় এখন পুকুরগুলি বিধিমোতাবেক ইজারা দেয়া হলে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় হবে। ভূয়া চালান, একই চালানে দুই বা ততোধিক পুকুরের বিপরীতে ব্যবহার করা হওয়ায় ৫৫ টি পুকুরের লিজ বাতিল করা হয়েছে। সাড়ে ৪ শ পুকুর লিজ দিয়ে রাজস্ব আয় হবে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সুপ্রিম কোর্ট অফ বাংলাদেশের
অ্যাডভোকেট মোঃ আব্দুল বারী জানান,
এটি প্রত্যয়িত করা হচ্ছে যে আবেদনকারী পূর্বে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগের কাছে তাৎক্ষণিক রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন, যা ০৬.০৪.২০২৩ তারিখের বিবাদী নং ৫ কর্তৃক জারি করা আপত্তিকর স্মারক নং ০৫.৪৩.৮১৩৪.০০০.১১.০০৪.২৩-১৩৪ (৫০) কে চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা হয়েছিল, যেখানে বিবাদী নং ৫ কর্তৃক জারি করা হয়েছিল, যা ১৪৩০ থেকে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত কার্যকরভাবে সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০০৯ (সংশোধন-২০১২) (সংযোজনী-খ) অনুসারে ৩ বছরের জন্য জলমহাল ইজারা দেওয়ার দাবি করেছিল, যতদূর পর্যন্ত এটি প্রশ্নবিদ্ধ পুকুরগুলির সাথে সম্পর্কিত, সিরিয়াল নং ৬, ৪০, ৪৭, ৫০, ৫৭, ৭৫, ৮২, ৯৮, ১৩৩, ১৩৬, ১৫৫, ১৬৩, ১৬৪, ১৮৩, ১৯৪, ২০৫, ২৩৩, ২৩৬, ২৬৮, ২৭০, ২৭১, ২৯০, ৩১১, ৩৬০, ৩৬৪, ৩৭৩, ৩৭৪, ৪০৩, ৪০৪, ৪২৪, ৪৪১, ৪৪২, ৪৪৪, ৪৫০, ৪৫৮, ৪৮৮, ৪৯১, ৫০৫ এবং ৫১১ এবং ২৭.০৮.২০২৩ তারিখে মাননীয় আদালতের লর্ডশিপ জনাব বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী এবং জনাব বিচারপতি মোঃ আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চ শুনানির পর, আপত্তিকর স্মারক নং – এর রুল এবং স্থগিতাদেশ জারি করে সন্তুষ্ট হন। ০৫.৪৩.৮১৩৪.০০০.১১.০০৪.২৩-১৩৪ (৫০) তারিখ ০৬.০৪.২০২৩ (সংযোজন-খ এবং ১দ) তারিখ থেকে ৬(ছয়) মাসের জন্য আবেদনকারীর সাথে সম্পর্কিত।
এরপর আমি বিবাদী নং ৫-আবেদনকারীর পক্ষে স্বাক্ষর করে ২৭.০৮.২০২৩ তারিখের স্থগিতাদেশের আদেশ বাতিলের জন্য একটি আবেদন দাখিল করি এবং ১৫.০৯.২০২৫ তারিখে বিষয়টি আদেশের জন্য ৭০ নং আইটেম হিসাবে দৈনিক কারণ তালিকাতে আসে। এই শুনানির পর, তাদের লর্ডশিপ বিচারপতি মোঃ মজিবুর রাহিনান মিয়া এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত এই মাননীয় আদালতের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ২৭.০৮.২০২৩ তারিখে প্রদত্ত স্থগিতাদেশের আদেশ বাতিল করতে সন্তুষ্ট হন। ফলে খাসপুকুর, জলমহালের ব্যপারে সরকারের বড় বিজয় সিন্ডিকেটের পরাজয়।
পুকুর খাসপুকুর-দিঘি, বিল-জলাশয় ইজারার প্রক্রিয়া শেষের পথে। তবে প্রতিবছর বাংলা সন শুরুর আগে এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি আদালতে ছোটাছুটি শুরু করেন। টাকা-পয়সা ঢেলে আদালতের একটা কাগজ নিয়ে ছুটে যান উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয়ে। উদ্দেশ্য যে কোনো উপায়ে খাস পুকুরের ইজারা ঠেকানো। এই প্রক্রিয়ায় খাসপুকুর ইজারা না হওয়ায় বছরে শতকোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।
ভূয়া চালানের কপি, জাল দলিল সৃজন ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে উচ্চ আদালত থেকে কোনোভাবে একটা অন্তর্বর্তী আদেশ এনে যুগের পর যুগ ধরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় শত শত সরকারি খাস পুকুর-দিঘি ও জলাশয়ের ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এভাবেই বছরের পর বছর অবৈধভাবে ভোগ দখল করা হচ্ছে পুকুর, দিঘি, জলাশয়। এতে সরকারের শত কোটি টাকার রাজস্ব হতে বঞ্চিত হয়েছে সরকার অবৈধভাবে ভোগ দখলে এলাকায় গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা। ভূমি বিভাগের কর্মচারীরাও সিন্ডিকেটের ভেতরে রয়েছেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভূমি রাজস্ব বিভাগের সূত্রে জানা যায়, নিলাম ডেকেও রাজশাহীর কয়েক হাজার খাস পুকুর জলাশয় শেষ মুহূর্তে ইজারা দেওয়া যায় না। কারণ জাল দলিল সৃজন করে পুকুর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওইসব দলিল উপস্থাপন করে উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত তাৎক্ষণিভাবে দলিলের বৈধতা ও সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেন না। রিট মামলার পরিপ্রেক্ষিতে একটা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেন। সারা বছরে এসব রিটের আর কোনো খোঁজখবর থাকে না। সরকারি ভূমি বিভাগও এসব রিট নিষ্পত্তির বিষয়ে মনোযোগী ছিল না। ফলে শুধু একটা অন্তর্বর্তী আদেশ নিয়ে রিটকারী বছরের পর বছর ধরে সরকারি পুকুর-দিঘি, জলাশয় দখলে রেখে ভোগ করছেন। রিট বাতিল হওয়ার ফলে পুকুর সিন্ডিকেটদের মাথায় হাত পড়েছে।
জেলার গোদাগাড়ীতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সরকারি খাসপুকুর। এর আয়তন মোট ২ হাজার ৫৮০ একর। গোদাগাড়ীতে ২০ একর আয়তনের কম খাস পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫৭টি। অন্যদিকে ২০ একরের বেশি আয়তনের খাসপুকুর দিঘি জলাশয় রয়েছে শতাধিক। আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশের ফলে প্রায় অর্ধেক খাস পুকুর ইজারা দিতে পারেন না উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার।
সূত্র জানায়, গোদাগাড়ীতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে খাস পুকুর ইজারায় কারসাজি করে আসছে। ইজারা নিতে এলাকায় এলাকায় তৈরি করা হয়েছে শতাধিক ভুয়া মৎস্যজীবী সমিতি। এসব কাগুজে সমিতিতে নেই প্রকৃত কোনো মৎস্যজীবী। মৎস্যজীবীরা পুকুর সিন্ডিকেটের কাছ থেকে চড়া দামে পুকুর কিনে মাছ চাষ করেন। কৌশলে খাস পুকুর দখলে নিয়ে গোদাগাড়ীতে ক্ষমতাসীন কয়েকজন নেতা গত কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এতদবন শত শত খাস পুকুর প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় এসব পুকুরের পানি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা। প্রভাবশালীরা এসব পুকুরের পানি জমিতে কৃষকের সেচ দিতে দেয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদাররা কৃষকের কাছে এসব পুকুরের পানি বিক্রিও করে থাকেন। অথচ সরকারি এসব পুকুরের পানি ব্যবহার উন্মুক্ত থাকার কথা। এলাকার মানুষ গৃহস্থালি ও পশুপালনে আগে এসব পুকুরের পানি ব্যবহার করতে পারতেন। বেদখল থাকায় এখন এলাকাবাসী পুকুরগুলোতে নামতে পারেন না। এ রিট বাতিলের ফলে পুকুর গুলি থেকে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব পেতে যাচ্ছে।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।