September 14, 2025, 12:16 am
নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী: রাজশাহীর দুর্গাপুর, বাগমারার উপজেলার সরকারি খাদ্য গুদাম গুলোতে বিপুল পরিমাণ খাওয়ার অনুপযোগী পচা চাল পাওয়ার পর এবার পচা চালের সন্ধান পাওয়া গেছে গোদাগাড়ী এলএসডি রেলবাজার খাদ্য গুদামে।
খাদ্যগুদামের বাস্তব চিত্র দেখে রীতিমত অবাক সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গোদাগাড়ীর মানুষের আলোচনার কেন্দ্রীয় বিন্দুতে উঠে এসেছে।
এদিকে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার ভবানীগঞ্জ সরকারি খাদ্যগুদামের চারটি সংরক্ষণাগারে অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করেছেন। এসব চালের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। খাওয়ার অনুপযোগী চাল গুদামে ঢুকানোর অভিযোগে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ২৬ আগস্ট দুর্গাপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিন ১৩২ বস্তা পচা চাল জব্দ করেছিলেন। তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বাগমারার গুদামে পচা চাল থাকার খবর পেয়ে চারটি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গোদাগাড়ীর এলএসডি খাদ্য গুদামের চিত্র এককই ভাবে উঠে আসলো।
খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রিত সিদ্ধ চালের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। নিম্নমানের চাল মজুত তথ্যের ভিত্তিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলএসডি রেলবাজার খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায় এর বাস্তব চিত্র। খুদ মিশ্রিত নিম্নমানের চালে রয়েছে বড় ভাঙা দানা, চালের গুড়ার মিশ্রণ, মরা চাল, ছোট ভাঙা দানা, বিজাতীয় পদার্থ, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ, অর্ধসিদ্ধ চাল, সাথে বিকট গন্ধ। বিনির্দেশ অনুযায়ী যে পরিমাণ মিশ্রণ থাকার কথা তার ৫০ শতাংশ বেশি মিশ্রণ রয়েছে। গরীবের চালে এমন অনিয়ম হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কামাল অটো রাইস মিল, হাসেম অটো রাইস মিল, আজিজ অটো রাইস মিলের সাথে চুক্তি অনুযায়ী বিনির্দেশ আছে সিদ্ধ চালের আর্দ্রতা ১৪ %, বড় ভাঙা দানা ৬%, ছোট ভাঙা দানা ২%, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ ৮%, বিনষ্ট দানা ০.৫%, মরা দানা ০.৫%, বিবর্ণ দানা ০.৫% ধান প্রতি কেজিতে ১টি, বিজাতীয় পদার্থ ০.৩%, খুদিময় দানা ০%, অর্ধসিদ্ধ দানা ১%, ছাটাই উত্তম হওয়ার কথা।আর গমের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা ১৪% বিজাতীয় পদার্থ ২ %, কুঁচকানো ও অপুষ্ট দানা ১০%, বিনষ্ট দানা ৩%।
সরজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, খুদের দানা, অর্ধসিদ্ধ দানা, বড় ভাঙা দানা, ছোট ভাঙা দানা, ভিন্ন জাতের মিশ্রণ, বিনষ্ট দানা, মরা দানাসহ বিবর্ণ দানাই ভরপুর। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গুদামঘরে চাল ও গম দেখতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে মর্মে সাফ জানিয়ে দেন। গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে দেখতে চাইলেও মোহাম্মদ আলী বলেন, ১ জন সাংবাদিক যেতে পারবেন তবে মোবাইল ছাড়া। কোন ভিডিও ধারণ করা যাবে না।
ঘটনার দিন খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলার সাইফুল ইসলামের কাছে ৫০৯ বস্তায় ১৫ হাজার ২ শ ৭০ কেজি চাল হস্তান্তর করা হয়। এসময় অন্যত্র আরও চাল সরিয়ে নিতেও দেখা গেছে। ট্রলি, ট্রাক এবং ট্রাক্টরে করে চাল সরানোর প্রমাণ মিলেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলায় মোট ২৫ জন ডিলারের মাধ্যমে সিদ্ধ চালগুলো খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কার্ডধারীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া টিআর, টিসিবি, ভিজিবি ভিজিএফ, ভিজিডি প্রকল্পেও রয়েছে এই নিম্নমানের চালের বিস্তার।
নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুজ্জামান জানান, একটি ট্রাক লোড দিয়ে পাঠানো হয়েছে এবং আরেকটি ট্রাক কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে। এসময় চারটি ট্রলি, ২টি ট্রাক্টরসহ ট্রাক লোড দিয়ে বাইরে চাল সরিয়ে নিতেও দেখা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোদাগাড়ী এলএসডি নাজমুল আলম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া গুদামের চালের মান আপনাদের দেখাতে পারবো না। আপনি তাদের অনুমতি নিয়ে আসেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী বলেন, মজুত আছে ১১ টন গম এবং ৫ হাজার টন চাল। এসব চাল দেখতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগবে। আর ১ জন যেতে চাইলে দেখাতে পারি, কিন্তু কোন ভিডিও করা যাবে না।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি ইন্সপেকশন করেছি এবং সেটি জেলায় রিপোর্ট করেছি। আমি চাল ভালো পেয়েছি।
গোদাগাড়ীর খাদ্য গুদামের পাচা চালের ব্যপারে জরুরীভিক্তিতে উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।