September 5, 2025, 5:46 pm
মোঃ হায়দার আলী রাজশাহী থেকেঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বরেন্দ্র অঞ্চলে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। সবুজ সতেজে ভরে উঠেছে আমনের মাঠ। যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ প্রান্ত। কখনো রোদের ঝাপটা আবার কখনো নেমে আসছে মসুলধারে বৃষ্টি। প্রকৃতির এমন রুপে ক্ষেতে সবুজ আমন ধানের পাতাও যেন গাছাড়া দিয়ে বেড়ে উঠছে। আমনের বেড়ে উঠা দেখে সোনালী স্বপ্নে ভরছে কৃষকের মন প্রান।
মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজপাতা, সে সাথে আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন। কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। সবুজ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। আর কিছু দিনের মধ্যেই সোনালী ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য কুঠি ও গোলা। পাশাপাশি কৃষকের মুখে ফুটে উঠবে হাসি।
জানা যায়, এবারে উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ২ টি পৌর সভায় ২৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চেয়ে বেশী পরিমান জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
এসব এলাকার মাঠগুলোতে চাষকৃত আমন ধানের মধ্যে গুটি স্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, সুমন স্বর্ণা, পাইজাম, ব্রি ধান ৫১, ব্রি-২৯সহ উচ্চ ফলনশীল অনেক জাতের হাইব্রিড ধানেরও চাষ হয়ে থাকে। এর সাথে গত কয়েক বছর থেকে যোগ হয়েছে সু-ঘ্র্যাণের চিনিআতপ ধানের চাষ।
উঁচুনিচু সিড়ির মত ঢেও খেলানো বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূমি। এ অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। ৪০ ভাগ জমি সেচ নির্ভর হলেও বাকি ৬০ ভাগই বর্ষা পানির উপর নির্ভরে আমন চাষাবাদ হতে থাকে এ অঞ্চলে।
তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার সেচ ছাড়াই শতভাগ জমিতে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে আমন চাষ করতে পেরেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা। তাতে কয়েক কোটি টাকা সেচ খরচ বেচেছেন কৃষকেরা।
কৃষকেরা বলছেন, অন্যবছর গুলোতে আষাড় মাস শেষ হতে গেলেও বৃষ্টি দেখা মেলে ভার। বীজতলা বীজ বয়স হয়ে নষ্ট হয়ে যায় সময়ের মধ্যে আমন চাষ করতে বরেন্দ্রর গভীর নলকূপ, মিনি ডিপ সার্বমাসেবল পাম্প সহ খাল বিল পুকুর হতে সেলো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হতো। যা আমন উৎপাদনের অর্ধেক খরচ সেচে লেগে যেত।
এবার বাস্তবতা ভিন্ন। এ বছর আষাড়ের শুরু থেকে শ্রাবন মাস পুরো দুইমাস যাবত প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি ঝরছে। ভাদ্র মাস পরেও একের পর এক নিম্ম চাপে কারণে সকাল সন্ধা অঝরে বৃষ্টি নামছে। তাতেই বরেন্দ্র অঞ্চলে উঁচু হিসাবে পরিচিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোল, রহনপুর নওগাঁর পোরশা নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলার প্রায় চার লাখ হেক্টর জমিতে এবার সেচ ছাড়াই শুধু বৃষ্টির পানিতে আমন চাষ হচ্ছে। এতে করে দেশের বিদুৎ সাশ্রয় ও জালানি তেলের খরচ কম লেগেছে। আর কৃষকের সেচ খরচ বেছেছে কয়েক কোটি টাকা।
মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা এবার বর্ষাকে কৃষকের জন্য আর্শিবাদ হিসেবে
দেখছেন। তারা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চল দেশে উচু অঞ্চল হিসাবে পরিচিতি। এখানে সেচ ছাড়া শতভাগ জমিতে আমন চাষ করা যায়না। এ সেচ খরচ সর্বনিম্ম বিঘাপ্রতি পাঁচশত টাকা খরচ হতো কৃষকের। এবার সেচ ছাড়া শতভাগ জমিতে আমন রোপন করতে পেরেছেন কৃষকেরা। সে খরচ আষাড়ের বৃষ্টিপানি বাঁচিয়ে দিয়েছে কৃষকের।
উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়েনের হাবাসপুর এলাকার আব্দুল সাত্তার বলেন, চলতি বছর দুই বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। প্রতিবিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে সেচের জন্য কোন খরচ হয় নি। যেখানে সেচ খরচ প্রায় দেড় হাজার টাকা লেগে যায়। কিন্ত এবছর আকাশে বৃষ্টিতেই তার দুই বিঘা জমিতে আমন রোপন করেছেন।
শুধু আব্দুর সাত্তার নয়,পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষকেরা এবার গভীর নলকূপ, মিনি ডিপটিউবল, এলএলএম, পাম্প ও খাল বিল পুকুর হতে কেউ আমন রোপনে সেচ দেওয়া লাগেনি।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসরণের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, বরেন্দ্রে এবার শতভাগ জমিতে আমন চাষ হয়েছে আষাড়ের বৃষ্টিতেই। সেচ খরচ বেচে যাওয়াই কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমবে। ফলনও ভাল হবে। কৃষকেরা এবার লাভবান হবে । তবে নিম্ন অঞ্চলে অতি বৃষ্টিতে সবজি চাষীদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্তকর্তা অতনু সরকার বলেন, এবার এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় কৃষক বৃষ্টির পানিতে ধান রোপন করেছেন, এখন পর্যন্ত সেচের জন্য কোন অর্থ ব্যয় করতে হয় নি। অতিবৃষ্টির কারণে শাক সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা।
মোঃ হায়দার আলী রাজশাহী।