September 2, 2025, 7:08 pm
উজ্জ্বল রায়, নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রী শ্রী ন্যাংটা বাবার আশ্রম নবগঙ্গা নদীর তীরে সাতদোহা গ্রামে অবস্থিত। শ্রী শ্রী ন্যাংটা বাবা ১৯২৫ সালে নড়াইল জেলার ভবানীপুুর গ্রামে বারেন্দ্র শ্রেনীর ব্রাম্মন পরিবারে ভাদ্র মাসে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম শ্রী বেণীমাধব চক্রবর্তী, মায়ের নাম পূর্ণ সুন্দরী দেবী। জন্মের পরই তার পিতামাতা কিছু অলৌকিক লক্ষন দেখতে পান। সংসারে আয় উন্নতি বাড়তে থাকে বিভিন্নভাবে। জনশ্রতি আছে ভবানীপুর গ্রামে একবার কলেরার প্রদুর্ভাব হলে গ্রামবাসীরা ন্যাংটা বাবার সরণাপন্ন হন। তিনি জল পড়ে গ্রামে ছিটিয়ে দিলে কলেরা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি ছিলেন সিদ্ধ সাধক। মুখ দিয়ে তিনি যা বলতেন তাই সঠিকভাবে ফলে যেতো। তার কাছে লোকজনের আসা যাওয়া বেড়ে যায়। অতঃপর তিনি বার বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। তারপর তিনি মাগুরা জেলার সাধুহাটি গ্রামে ধ্যানমগ্ন হন। কিন্ত তার পায়ের ধূলো নেওয়ার জন্য এখানেও উপচে পড়ে জন মানুষের ভীড়। এখানে তিনি ধ্যানমগ্ন হয়ে বসুদেবের দর্শণ পেয়ে ধন্য হলেন। তিনি মায়ার জালে আবদ্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তিনি নবগঙ্গায় ঝাপ দিয়ে অদৃশ্য হন। পরদিন একদল জেলে শবদেহ ভাসছে দেখে সন্যাসীকে উদ্ধার করেন। জেলেরা তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখে পোশাকে আচ্ছাদিত করতে চায়লেও কোন বস্ত্র তার গায়ে থাকেনি। এভাবেই উলঙ্গ অবস্থাতেই তিনি পদ্মাশন হয়ে পূনরায় ধ্যানমগ্ন হন। এরপর বালক সন্যাসীর সাথে পাগলা কানাইয়ের আলাপ হয় তিন দিন ধ্যানমগ্ন থাকার পর। তখন থেকেই তার নাম হয় ন্যাংটা বাবা।
ঐতিহাসিক সাতদোহা আশ্রম, নবগঙ্গা নদী তীরস্থ সাতদোহা আশ্রমটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মসজিদের বামপার্শ্বের রাস্তা দিয়ে মাঝিপাড়ার ভিতর দিয়ে পারলা গ্রামের অভিমুখে গ্রামের শুরুতেই সাতদোহা পাড়ার সাতদোহা মহশ্মশানে অবস্থিত। এই শ্মশানের পাশেই ইংরেজদের নীলকুঠি ছিল। এখানে নীল চাষও হতো। পরবর্তীতে ইংরেজরা দেশ ছেড়ে গেলে বন জঙ্গলে ভরে যায় এই শ্মশান। পরবর্তীতে ন্যাংটা বাবা এই শ্মশানে ধ্যানমগ্ন হলে তার সংস্পর্শে আসেন এই এলাকারই ফটিক চন্দ্র বিশ্বাস (মাঝি)। ফটিক মাঝি নিজ ভূমি দান করে জঙ্গল কেটে ন্যাংটা বাবার আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এই শ্মশানে ন্যাংটা বাবার সমাধি মন্দিরসহ নাটমন্দির প্রতিষ্ঠিত। পাশেই কালা সাধক নামে এক সাধকের সমাধিসহ আরো কয়েকটি শবের সমাধি মন্দির রয়েছে। প্রতিবছর এখানে নির্দিষ্ট সময়ে হরিনাম সংকীর্তন জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলাতে বিভিন্ন লোকজ সামগ্রীর সমাগম ঘটে এবং হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
কথিত আছে ন্যাংটা বাবা নামযজ্ঞ শুরু হতেই ১ সের চাল ও ১ পোয়া ডাল মিশ্রিত করে শিষ্য সনাতনকে রান্না করতে বলেন এবং তাকে না জানিয়ে কাউকে দিতে নিষেধ করেন। রান্না শেষ হলে একজন ক্ষুধার্ত ব্রাম্মনকে সনাতন সেবা দেন ন্যাংটাকে না জানিয়ে। ন্যাংটা বাবা অগ্নিমূর্তি ধারণ করলে পাগলা কানাই ন্যাংটা বাবার দর্শন দিয়ে অদৃশ্য হন। এরপর অবশিষ্ট প্রসাদ নিয়ে সনাতন বাবার হাতে দিলে তিনি আশ্রমের আঙ্গিনায় ৩টি কুকুর নাম সংকীর্তন শুনছিল তাদের ডেকে প্রসাদ খেতে দিয়ে সনাতনকে বলেন, আমাকে স্পর্শ কর, এবার দেখ এরা কারা। সনাতন দেখল স্বয়ং ব্রম্ম, বিষ্ণু ও শিব আহার করছেন। সনাতন মূর্ছা গেল। আহার শেষে তিনজন অন্তর্ধান হলেন।
এরপর শুরু হয় মজার ব্যাপার অলৌকিক অবস্থা। নবগঙ্গা নদীপথে নৌকা বোঝায় বস্তা বস্তা চাল, ডাল, তেল, লবণ, তরকারীসহ অগনিত ভক্ত আসতে লাগলো, ৭২ ঘন্টার নামযজ্ঞ পক্ষকালেও শেষ হতে চায় না। সেই থেকে মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে ৭২ ঘন্টার নামযজ্ঞের সংকীর্তন শুরু হয়। এই মহা সাধক পুরুষ বাংলা ১৩৭০ সালের ৩১ শে বৈশাখ মঙ্গলবার আসনে উপবিষ্ট অবস্থায় অগণিত ভক্তকে অশ্রু সাগরে ভাসিয়ে দেহ ত্যাগ করেন। এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। আজও ভক্তরা ন্যাংটা বাবার কৃপা লাভের আশায় সাতদোয়া মহাশ্মশানে আসেন বাবাকে শ্রদ্ধাঞ্জলী দিতে।