গোপালগঞ্জ রোড লাইট নষ্ট বেওয়া-রিশ কুকুরের উৎ-পাত মাদ-কাসক্ত ও চো-রের উপ-দ্রব

কে এম সাইফুর রহমান, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

গোপালগঞ্জ শহরের অলিগলিতে এখন মানুষের চেয়ে বেশি দেখা মিলছে বেওয়ারিশ কুকুরের। দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো এসব বেওয়ারিশ কুকুরের দৌরাত্ম্যে জনজীবন অতিষ্ঠ ও দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। রাতে বাড়ি ফেরা, ভোরে নামাজ আদায় কিংবা সকালে হাঁটতে বের হওয়া—যেকোনো সময়ই সাধারণ মানুষ কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।

গত বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ড মৌলভীপাড়ায় বেওয়ারিশ কুকুরের তাড়া খেয়ে ভয়ে স্ট্রোক করে সোহাগী (১২) নামের ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পৌর এলাকার উপজেলা চত্বরে, নবীনবাগ, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পাঁচুড়িয়া পৌর মার্কেটের পিছনে, বড়বাজার, মাংসের দোকানসমূহে, পোষ্ট অফিস মোড়, মিয়াপাড়া, মোহাম্মদপাড়া, মৌলভীপাড়া লঞ্চঘাটসহ প্রায় প্রতিটি মহল্লায় ৫ থেকে ১০টির বেশি কুকুর একসঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিনের বেলায় মানুষ এড়িয়ে চললেও রাতে একা পেলেই তারা আক্রমণ করছে। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন নিচ্ছেন । গত ১০ মাসে সেখানে ১,৫০০-র বেশি মানুষ এ টিকা নিতে বাধ্য হয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, একসময় পৌরসভা বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের ব্যবস্থা নিত। কিন্তু ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জন্মনিরোধ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হলেও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে কুকুরের সংখ্যা।

এদিকে পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লায় লাইটপোস্ট বিকল হয়ে পড়ায় অন্ধকারে কুকুরের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। এ যেন “মরার ওপর খারার ঘা” আলোহীন রাস্তাগুলোতে শুধু কুকুরই নয়, চোর-ডাকাতের উপদ্রব ও মাদকাসক্তদের বিচরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পরপরই এসব এলাকায় বের হওয়া মানুষদের জন্য হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ মিয়া বলেন, “বাজার থেকে দোকান বন্ধ করে রাতে বাসায় ফিরতে ভয় লাগে। অন্ধকার রাস্তায় কখন কুকুর আক্রমণ করবে, কখন চোর-ডাকাতের কবলে পড়ব সেই আতঙ্কে থাকতে হয়।”

মোহাম্মদপাড়ার গৃহিণী নাজমা বেগম বলেন, “আমাদের এলাকায় অনেকদিন ধরে রোড লাইট নষ্ট। রাতে মেয়েদের একা বাইরে বের হতে দেই না। বাচ্চারা খেলতে গেলেও কুকুরের ভয় থাকে।”

গোপালগঞ্জ পৌরবাসীর অভিযোগ, পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিদিনই সাধারণ মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে চলাফেরা করতে হচ্ছে। পৌরবাসী দ্রুত বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণ, অলিগলি সহ রাস্তার লাইট মেরামত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।

পৌর প্রকৌশলী সজীব বাবু  জানান পৌর স্টোরে বৈদ্যুতিক বাতি (ভাল্ব) দীর্ঘদিন যাবৎ না থাকায় এই সেবাটি দিতে সমস্যা হচ্ছে। কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেনাকল্যাণ সংস্থা কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *