সংবাদ প্র-কাশ করায় সাংবাদিকদের হু-মকি দেয়ার অ-ভিযোগ শিক্ষকের বি-রুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার:- নিরেন দাস

স্যার দেরিতে ক্লাসে যাচ্ছে ছাত্র এ বলায় কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার গত ২৬ আগস্ট ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বেধরক মারপিট, সরকারি জায়গা দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে নানা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পরই সেই সাংবাদিকদের হত্যাসহ নানা রকম হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশ করছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা ।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ওই শিক্ষক নাফসি তালুকদার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর মুঠোফোনসহ বিভিন্নভাবে তিনি সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সংবাদকর্মী ও তাদের পরিবারকে স্ব-শরীরে হুমকি দেন। সাংবাদিক মহল বলছে, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও অন্যায় কর্মকান্ড ধামাচাপা দিতে গিয়ে এখন সংবাদকর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রæত দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

দৈনিক বাংলা ও নিউজ বাংলা২৪ এর জেলা প্রতিনিধি রাব্বিউল হাসান রমি, নাগরিক টেলিভিশন ও দৈনিক শিক্ষাডটকম এর জেলা প্রতিনিধি মাহফুজার রহমান, দৈনিক ভোরের দর্পনের জেলা প্রতিনিধি কাজী তানভিরুল ইসলাম রিগ্যানের স্ত্রীকে মুঠোফোনে হুমকি দেন। এছাড়াও কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গত ২৬ আগস্ট ও ২৭ আগস্ট কয়েকজন সাংবাদিককে সরাসরি বিভিন্ন রকম হুমকি দেন।

এ ঘটনা নিয়ে রাব্বিউল হাসান রমি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে খোলা চিঠি লেখেন। ‘খোলা চিঠি -নিউজ করায় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করায় আমাকে কিছুক্ষণ আগে মেরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাবেক পৌর যুবদলের সভাপতি নাফসি তালুকদার। আমার জীবনে কোন ক্ষতি ও পরিবারের কোন ক্ষতি হলে তার দায়ভার নাফসি তালুকদারকে নিতে হবে। গতকাল যারা তার ব্যবহার নিয়ে মুখে ফেনা তুলছেন, আজ তারা কি বলবেন?’

এছাড়াও দৈনিক কালের কণ্ঠের কালাই প্রতিনিধি সাউদ আব্দুল্লাহ ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে লেখেন, সাংবাদিকতায় সত্য বলার দায়, এখন ভয়! সমাজের আয়নায় এক ভয়ানক প্রতিচ্ছবি!!। পরিবার ও সাংবাদিকতা পেশার ঝুঁকি নিয়ে বিস্তর বিবৃতি দিয়েছেন তিনি।

হুমকির বিষয়ে আরও কয়েকজন স্থানীয় বিভিন্ন গনমাধ্যমের সাংবাদিকরা বলেন, আমরা শুধুমাত্র শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কারণ দর্শানোর নোটিশ, তথ্য ও ভিডিও বক্তব্য অনুযায়ী সংবাদটি স্ব-স্ব মিডিয়াতে পাঠানো হয়েছে। যা মিডিয়া কর্তৃপক্ষ যাচাই বাচাই করে প্রকাশ করেছে। অথচ নাফসি তালুকদার এখন আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এতে আমরা পেশাগতভাবে মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকির মধ্যে আছি। এসব নিউজ সংক্রান্ত কোন তথ্যাদির বিষয়ে নাফসি তালুকদার যদি সংক্ষুব্ধ হন তিনি প্রতিবাদ জানাতে পারেন। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নিবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলটি সরকারি হওয়ার আগে নাফসি তালুকদার একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ছিল। সেই প্রভাবেই এখনও প্রভাব বিস্তার করছেন স্কুলসহ সর্ব মহলে।

এ ব্যাপারে জানতে শিক্ষক নাফসি তালুকদারের মুঠোফোনে একাধিক সাংবাদিক কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা আক্তার জাহান বলেন, ইতিমধ্যে স্কুলের ব্যাপারে কারণ দর্শানোর জবাব পেয়েছি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের ডাক্তার নার্স, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে অসৎ আচরণ ও এসিল্যান্ডের সঙ্গেও অসৎ আচরণের অভিযোগ রয়েছে। এ গুলো বিষয়ের সাথে সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে তদন্ত করে ডিজির কাছে পাঠানো হবে।

কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদ হোসেন বলেন, আমি ছিলাম না। তবে সাংবাদিকদের বিষয়ে আমি শুনেছি। যারা ভুক্তভোগী তারা লিখিত অভিযোগ দিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *