August 27, 2025, 6:14 pm
এম এ আলিম রিপন,সুজানগর ঃ আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে। পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের এই বিখ্যাত আসমানী কবিতার সাথে তাল মিলিয়ে বলা যেতেই পারে অসহায় দরিদ্র মানুষদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, সুজানগরের ভঁায়নার আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে, তারি তলে অসহায় মানুষগুলো থাকে বছর ভরে।
বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাবনার সুজানগর উপজেলার ভঁায়না সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন পলিথিন ও পাটখড়ির আদলে আবদ্ধ। ইট-বালু খুঁটির ওপর লোহার সঙ্গে থাকা টিন মরিচা ধরে খসে পড়ায় ঘর থেকেই আকাশ দেখা যায়। কোনো মতে পাটখড়ি ও পলিথিনের জোড়াতালি দিয়ে থাকছেন বসবাসকারীর। মেঝের পলেস্তারা উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। ছাউনির টিন ক্ষয়ে আকাশ দেখা যায়। ভেঙে গেছে চারপাশের বেড়া ও সিমেন্টের খুঁটি। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে পলিথিনের ছাউনি। এমনই জরাজীর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী আশ্রয়ণ (ব্যারাক) প্রকল্পের ঘর।
প্রকল্পের বাসিন্দা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র পরিবারের জন্য ভঁায়না আশ্রয়ণ প্রকল্পটি (ব্যারাক) তৈরি করা হয়। উপজেলার ভঁায়না ইউনিয়নে রাস্তার পাশে নির্মিত সরকারি এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে মাথা গেঁাজার ঠঁাই মেলে দরিদ্র কিছু পরিবারের। নির্মাণের পর আর কোনো মেরামত করা হয়নি। ফলে দিনে দিনে নষ্ট হতে থাকে ঘরগুলো। মরিচা পড়ে ক্ষয়ে যায় টিন। ভাঙতে থাকে সিমেন্টের খুঁটিগুলো। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও বিকল্প কোনো আশ্রয় না থাকায় দরিদ্র পরিবারগুলো বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছেন।
বর্তমানে একটু বৃষ্টি হলেই ফুটো চাল দিয়ে পানি পড়ে। তাই বৃষ্টির দিনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় তাদের।
এমন কোন ঘর নেই যে, বৃষ্টি হলে ঘরে পানি না পড়ে। তাই কেউ কেউ ঘরের চালার সাথে পলিথিন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করেছে।
সংস্কারের অভাবে এ ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে বসবাসকারী দরিদ্র অসহায় পরিবারগুলোর। তাদের দাবি, ভাঙাচোরা ঘরের চালায় পলিথিন দিয়ে ফুটো বন্ধ করে কোনো রকম বসবাস করে আসছেন। অন্যত্র সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ও অস্বাস্থ্যকর এ ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস করছে এসব পরিবার।
তৎকালীন সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আজম আলী বিশ্বাস জানান, আমি সে সময় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হলেও বিগত প্রায় ২৬ বছরেও এখানকার কোনো ঘর সংস্কার করা হয়নি। যদি সংস্কার করে না দেয়া হয়, তাহলে সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে গরিব মানুষদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
এ বিষয়ে আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ জানান, অর্থ বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে জরাজীর্ণ ঘরগুলো।
এম এ আলিম রিপন
সুজানগর(পাবনা)প্রতিনিধি।