August 27, 2025, 5:10 pm
তরিকুল ইসলাম তরুন,
কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কালিকাপুর গ্রামে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতন ভোগের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ—একটি কুচক্রী মহল সু-কৌশলে গ্রামের নাম পরিবর্তন করে “উত্তর কালিকাপুর” দেখিয়ে হাফিজিয়া মাদ্রাসাকে স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা হিসেবে চালানোর পাঁয়তারা করছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা প্রথম প্রকাশ পায়। বিষয়টি প্রকাশিত হয় জাতীয় দৈনিক রূপসী বাংলা (১৯ আগস্ট ২০১৯) এবং দৈনিক যুগান্তর (২৩ আগস্ট ২০১৯)-এ। একই বছর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, কুমিল্লা থেকে স্মারক নং-১৯৮০১ (শিক্ষা), তারিখ ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাপ্ত ডকেটের ভিত্তিতে ঘটনাটি অনুসন্ধানে নেয়া হয়। তখন অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, গ্রামের কবরস্থানের জমিকে মাদ্রাসার নামে দেখিয়ে এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মাত্র ৫টি পরিবার থেকে ৫ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি তদন্তে ভুয়া কাগজপত্র ধরা পড়ার পর গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক গণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রতারণায় জড়িতরা ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং মুরব্বি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামশেদুল আলমের নিকট ভুয়া কাগজপত্র জমা রাখে। তখন সিদ্ধান্ত হয়—ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নিলে তা গ্রামবাসীর মতামত ও সরকারি নিয়মনীতি মেনে করা হবে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি পুনরায় ওই চক্রটি মাদ্রাসার নামে শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে সরকারি বেতন ভোগের চেষ্টা করছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ভুয়া শিক্ষক হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে তারা হলেন—
১) মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ (কথিত প্রধান শিক্ষক)
২) আফজাল হোসেন (সহকারী প্রধান শিক্ষক)
৩) নুরে তামজিদ (সহকারী জুনিয়র শিক্ষিকা)
৪) কানিজ ফাতেমা (সহকারী জুনিয়র শিক্ষিকা)
৫) নাজমা আক্তার (সহকারী জুনিয়র শিক্ষিকা)
গ্রামবাসীর দাবি, “উত্তর কালিকাপুর” নামে কোনো গ্রামের অস্তিত্ব নেই। অথচ আদি গ্রাম কালিকাপুরের নাম পরিবর্তন করে প্রতারণামূলকভাবে কাগজপত্র জমা দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে হাজার বছরের কবরস্থানের জায়গার পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে এবং অযোগ্য লোকদেরকে ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা চলছে।
কালিকাপুর গ্রামের সচেতন মহল বলছে—এটি একটি শিক্ষানুরাগী গ্রাম, যেখানে ইতোমধ্যে সরকারি ডিগ্রি কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, ইউপি অফিস ও ভূমি অফিস রয়েছে। সমাজের মানুষ পরস্পরের সহযোগিতায় উন্নয়নের পথে গ্রামকে এগিয়ে নিয়েছে। তাই গ্রামের নাম পরিবর্তন ও ভুয়া শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।
উপরোক্ত বিষয়ে মাদ্রাসার কথিত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে অভিযোগকারীদের পূর্বে বিরোধ ছিল। সম্ভবত সেই বিরোধের কারণেই তারা এমন অভিযোগ করছে। মাদ্রাসার নামকরণ করেছেন প্রতিষ্ঠাতা, যিনি ইতোমধ্যে মৃত। নামকরণ নিয়ে আমি কিছু জানি না, আমি এখানে কেবল শিক্ষাদান করি। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাদ্রাসা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা সরেজমিনে আসুন, গ্রামের আরও অনেক মানুষ আছেন। তাদের কাছ থেকেও বিস্তারিত জেনে তারপর সংবাদ প্রচার করুন।”
গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক কুমিল্লার নিকট আবেদন জানানো হয়েছে—বিষয়টি পুনরায় সুষ্ঠু অনুসন্ধানপূর্বক প্রতারণা ও জালিয়াতির হাত থেকে গ্রামকে রক্ষা করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।