বীরগঞ্জের দুই বোন মণি ও মুক্তার ১৭ তম জন্মদিন আজ

 

দিনাজপুর প্রতিনিধি – দিনাজপুরের বীরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামের জয় প্রকাশ পালের স্ত্রীর গর্ভে দুই কন্যা মনি-মুক্তা পেটে জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নিয়ে সারাদেশে সাড়া ফেলে। তাদের জন্মের ৫ মাস পর চিকিৎসক ডা. এ আর খানের নেতৃত্বে সফল অস্ত্রপোচারের মাধ্যমে দুই বোনকে আলাদা করা হলে দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস। যাদের জন্মদিন প্রতিবছর ঘরোয়া ভাবে ঘটা করে পালন করে তার পবিরারের লোকজন ও এলাকাবাশী। আজ ২২ আগষ্ট পেটে জোড়া লাগানো দুই বোন মণি ও মুক্তার জন্মদিন, ১৬ পেরিয়ে ১৭তে পা দিলো তারা। জন্মদিন উপলক্ষে আজ শুক্রবার দুই বোন মনি-মুক্তার জন্মদিন উপলক্ষে নিজ বাড়িতে সন্ধ্যায় নাম সংকীর্তন, ভাগবদ গীতাপাঠ সহ ঘরোয়া ভাবে অনুষ্ঠান করা হবে।

 

উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রানীর গর্ভে ২০০৯ সালের ২২শে আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে (সিজার) অস্ত্রপোচারের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো দেখন পেটে জোড়া লাগানো অবস্থায় মনি মুক্তা।

 

২০১০ সালে চিকিৎসকদের পরামর্শ ক্রমে ৩০ জানুয়ারি জয় প্রকাশ পাল ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিয়ে দুই বোনকে ভর্তি করেন। একই বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ এ আর খানের নেতৃত্বে সফল অস্ত্রপোচারের মাধ্যমে দুই বোনকে আলাদা করা হলে তখন থেকেই তারা ফিরে পায় স্বাভাবিক জীবন। সেই সাথে দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।

 

সরজমিনে গেলে বাবা জয় প্রকাশ জানায়, ১৬ বছর পার করে তারা দুই বোন ২২ আগষ্ট ১৭ বছরে পা দিলো। তারা দুই বোন বর্তমানে উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়়ের ১০ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। এ ছাড়াও তার বড় এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।

 

মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ২১ ফ্রেরুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজগ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে আসি। মনি মুক্তার জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্মগ্রহনকে মানুষ সৃষ্টি কর্তার অভিশাপ হিসেবে অপবাদ দিলেও বর্তমানে পড়াশুনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে মনি মুক্তার প্রতিভা পাল্টে দিয়েছে সকল মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। নৃত্য শেখার পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে দুই বোন। লেখা-পড়ার প্রতি বেশ মনোযোগী তারা। স্থানীয় ভাবে নাচ শিখছে দুই বোন। উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বেশ কিছু পুরুস্কার অর্জন করেছে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে তারা।

 

ঝাড়বাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ জেহাদুল হক জানায়, তারা দুই বোন অত্যান্ত মেধাবী ও শান্ত প্রকৃতির। ভবিষৎতে তারা ভালো কিছু করবে বলে আশা করা যায়।

 

দুই বোন মনি-মুক্তার জানায়, ভবিষৎতে তারা ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। তারা দুই বোন দেশবাসী সহ সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *