August 21, 2025, 4:59 pm
পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৯৬নং বেংহারী সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হবিবর রহমান এখনো স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের প্রচারণা ভুলতে পারেননি—এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সরেজমিনে বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের আলমারিতে সাজানো রয়েছে শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেখ রাসেল ও আওয়ামী শাসনের নানা প্রচারণামূলক শতাধিক বই। ‘শেখ হাসিনা’, ‘মুজিব আমার পিতা’, ‘রাজপুত্র শেখ রাসেল’, ‘মুজিব বাংলার বাংলা’সহ নানা শিরোনামের এসব বই সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে এক ধরনের ফ্যাসিবাদী কর্ণার তৈরি করেছে।
স্থানীয়রা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের প্রায় এক বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো সরকারি বিদ্যালয়ে এসব প্রচারণার বই অক্ষতভাবে রাখা হয়েছে। অথচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“এটি সত্যিই দুঃখজনক। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের সময় শেখ হাসিনা ও তার দোসররা বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছে। অথচ এক বছর পার হলেও তাদের বই-কর্ণার এখনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে রয়ে গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্দেশনা দিয়ে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ফ্যাসিস্ট শাসনের এসব প্রতীকী কর্ণার অপসারণ করা হোক। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার অভাবে শিক্ষকরা সমস্যায় পড়ছেন।”
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলও মনে করছেন—স্বৈরাচারের পতনের পরও সরকারি বিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট প্রচারণা বই রাখা ২৪ এর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসের প্রতি চরম অবমাননা।
বেংহারী সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হবিবর রহমান বলেন,
“বইগুলো এক কোণে পড়ে ছিল, আমরা সেগুলো খেয়াল করিনি। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ব্যানার আমরা তখনই আলমারিতে ভাঁজ করে রেখেছি। আগামী রোববার বিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সঙ্গে সবগুলো বই পুড়িয়ে ফেলা হবে।”
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাবক্লাস্টার আজমল আজাদ বলেন, “আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা ছিলো এসব বই বিদ্যালয়ে রাখা যাবে না। আমি প্রত্যেক প্রধান শিক্ষককে বলেছি বইগুলো সরিয়ে ফেলতে। কিন্তু কেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তা সরাননি, তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা তো অনেকগুলো বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকি—সবগুলো বিদ্যালয়ে গিয়ে লাইন ধরে খুঁটিনাটি দেখা সম্ভব হয় না। শেষ পর্যন্ত কেন তিনি বইগুলো সরাননি, তার জবাব তিনিই দিতে পারবেন।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, “আমরা বিষয়টি শুনেছি এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেখেছি। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে আমাদের কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছে তদন্তের জন্য। তারা তদন্ত করে বিস্তারিত জানাবেন এবং প্রধান শিক্ষক কী বলেন তা দেখা হবে এবং আগামী রোববার অফিস খোলার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”