মধুমতির ভা-ঙ্গনে শতাধিক পরিবার ঘ-রছাড়া, বি-লীন হতে চলেছে মানিকহার বাজার সহ মধুমতি গ্রাম

কে এম সাইফুর রহমান, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার
৭নং উরফি ইউনিয়নের মানিকহার বাজার থেকে মধুপুর পর্যন্ত মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন কয়েক বছর ধরে গ্রামবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বছর বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের তীব্রতায় ভাঙ্গনের গতি যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এ যেন মরার ওপর খারার ঘা অবস্থা। প্রতিদিনই বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও গ্রামীণ সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে এ এলাকার অন্তত ১০০টিরও বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ উন্মুক্ত মাঠে অস্থায়ী ঘর তুলে বসবাস করছেন।

মানিকহারের পার্থ দাস বলেন, “গত বছরও কিছু জমি নদীতে গেছে, কিন্তু এ বছর ভাঙ্গন যেন থামছেই না। আমার কৃষি জমি ও বসতভিটা সব নদীতে বিলীন হয়েছে। “মধুপুর গ্রামের গ্রাম পুলিশ মাজেদ সরদার জানান, “প্রতিদিনই মনে হয় আজই হয়তো নদী আমাদের ঘর টেনে নেবে। বউ-বাচ্চাদের নিয়ে ভীষণ ভয়ে থাকি।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার ভাঙ্গন পরিদর্শনে এলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর তেমন কোন ব্যবস্থাই কেউ নেননি। এখনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ বা প্রতিরোধক কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীরা বলেন, প্রতিবছর ভাঙ্গন প্রতিরোধে অস্থায়ী ভিত্তিতে যে বালুর বস্তা ফেলার মতো সাময়িক পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাও বর্ষার স্রোতের কাছে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

৭নং উরফি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির গাজী বলেন, “পরিস্থিতি মারাত্মক। আমরা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না? সে বিষয়ে জানতে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রিফাত জামিলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, মানিকহার বাজার থেকে মধুমতি সহ অত্র এলাকায় নদী ভাঙ্গনের সমস্যা দীর্ঘদিনের, স্থায়ী সমাধানের জন্য ডিপিপি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত অর্থবছরে তা অনুমোদন পায়নি। আমরা এ বছর আবারো পাঠিয়েছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও অর্থ বরাদ্দ পেলে স্থায়ী এবং টেকসইভাবে কাজ করা সম্ভব হবে। যদিও প্রতিবছর আমরা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলি। এবছর ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে, ইতোমধ্যেই ফসলি জমি সহ বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমাদের একটি টিম সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে নদী ভাঙ্গন পরিদর্শন করে এসেছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি জানিয়েছি, কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ওই এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবো।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *