August 9, 2025, 6:54 pm
রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী: বাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃপক্ষের সেচসুবিধার উপর কঠোর বিধি নিষেধ দেয়ায় , গোদাগাড়ীতে নতুন করে বরবর্টির চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। রোপা আমন ধানের আবাদ কমেছে। প্রায় দু,মাস থেকে প্রতিদিন অব্যাহতভাবে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় লাগানো আমন ধানে ঠিকভাবে সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে না পারায় চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। এর সাথে যোগ হয়েছে ভেজাল সার ও কীটনাশক ক্রয় করে প্রতারিত হচ্ছে অনেক কৃষক।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বিএমডিএ গভীর নলকুপের আওতায় বোরো ধান চাষ সীমিত করার নির্দেশ দেয়ায় গত বোরো ধানের আবাদ কমেছে অনেকগুন । নতুন ফসল হিসেবে বরবর্টি চাষ করেছেন বেশ কিছু কৃষক, এছাড়া, অনেক কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ভুট্টা, টমেটো, বেগুন, ভিন্ডি, শাক, সবজি, ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
এটি খাট জাতের বরবটি। সাধারণ বরবটি চাষ করতে হলে মাচা তৈরি করে চাষ করতে হয় কিন্তু এই বরবটি চাষ করতে কোন মাচা লাগে না। জমি বেড করে তৈরি করে বীজ বপন করতে হয়। বীজবপনের ৫৫ -৬০ দিনে ফুল চলে আসে। আর একটি বিষয় হল এই বরবটি সারা বছর চাষ করা যায়। অনেকে সাথী ফসল হিসেবে বরবটির বীজ ইতিমধ্যে বপন করেছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, যে সকল জমিতে গম ও আলু, মশুর চাষ করার পর সাময়িক পতিত থাকে সে সকল জমিতে আমন / আউশ লাগানো মাঝের সময়ে এই বরবটি চাষ করে কৃষক বাড়তি আয় করতে পারে। ফলে দুই ফসিল জমি তিন ফসলে পরিনত হতে পারবে।
উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের গোলাই গ্রামের কৃষকের জিয়ারুল ইসলাম, ১ বিঘা জমিতে বরবটি চাষ করেছেন এতে তার খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা টাকা । তিনি খরচ বাদে ৪২ হাজার টাকা আয় করেছেন।
একই গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান ২৫ কাঠা জমিতে বরবটি চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ টাকা । তিনি খরচ বাদে ৫৩ হাজার টাকা আয় করেছেন বলে জানা এ কৃষক। ধান বা অন্য ফসল করে কম সময়ে এত আয় করা সম্ভাব হতো না। আমাদেরকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার মাঠ পর্যায়ে এসে বিভিন্ন পরামার্শ দিয়েছেন এতে করে খুব উপকার হয়েছে। একই ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মো: মূসা বরবটি চাষ করে ৩ হাজার ২শ টাকা খরচ করে ৮ হাজার ১শ টাকা আয় করেছেন বলে জানা গেছে।
নতুন ফসল হিসেবে, গোদাগাড়ী উপজেলায় বরবটি চাষ করা হয়েছে ১০০ বিঘা জমিতে।
গোদাগাড়ী উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু বরবটি চাষের জন্য উপযোগি। বর্তমানে জনপ্রিয় হচ্ছে এই বরবটি চাষ এবার উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ঈশ্বরীপর ব্লকে ৮০ বিঘা জমিতে বরবটি চাষ হয়েছে। আগামীতে এর চাষ আরও বাড়বে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল এবছর আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ২শ ৮০ হেক্টর জমিতে। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুনের বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। অন্যদিকে গত বছর বোরোর আবাদ হয়েছিল ১৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু গত মৌসুমে ১৪ হাজার ৮শ” ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল । প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবধ কম হয়েছিল।
এ ছাড়া গত বছর ২২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে সরিষার অবাদ হলেও তামে হয়েছে ১৭ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। গত বছর ১ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হলেও এবার হয়েছে ২ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে। পেঁয়াজ গত বছর এক হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও এবার আবাদ কম হয়েছে।
বিএমডিএ, গোদাগাড়ী অফিস সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলায় ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচযন্ত্রে আশানুরুপ পানি/ডিসচার্জ পাওয়া যাচ্ছে না। সেই কারনে সেচযন্ত্র হতে চাহিদা মাফিক বোরো ধানে সেচ প্রদান করা সম্ভব হবে না। সেই প্রেক্ষিতে প্রতিটি সেচযন্ত্র এবং এলএলপি’র কমান্ড এরিয়ার আওতায় বোরো ধান চাষবাদ সীমীত করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে ধানের পরিবর্তে কম পানি প্রয়োজন হয় বরবটি, গম, সরিষা, চীনা, মষুর, খেসাড়ী, ছোলা, ভুট্টা, টমেটো, পেয়াজ, আলু শীতকালীন সাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসল চাষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, বরবটি চাষ গোদাগাড়ীতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ফসলটি চাষ করার ফলে দু ফসলী জামি তিন ফসলী জমিতে পরিনত হচ্ছে স্বল্প সময়ে কুষক অন্য একটি ফসল ঘরে তুলে লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে বরবটি চাষ অনেক হারে বৃদ্ধি পাবে। গোদাগাড়ী উপজেলা বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি সংকটের কারনে এ অঞ্চলের কৃষকেরা পানি সাশ্রয়ী ফসল সবজি টমেটো ভুট্টা, গম, আলু, সরিষা, পেয়াজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছে কৃষকদের আগ্রহী করা হচ্ছে।। ভুট্টা চাষ করতে ৪ টা সেচ লাগে কিন্তু বোরো ধান চাষে ১২ টা সেচ লাগে। ভুট্টার দাম ভালো পাচ্ছে কৃষকেরা। এতে করে কৃষকেরা ভুট্টার চাষ বেশী করছে। এছাড়াও ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচযন্ত্রে আশানুরুপ পানি/ডিসচার্জ পাওয়া না যাওয়ায় বিএমডিএ বোরো ধানের আবাদ কমিয়ে কম পানি প্রয়োজন গম, সরিষা, চীনা, মশুর, খেসাড়ী, ছোলা, ভুট্টা, টমেটো, পেয়াজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করতে বলেছে। ফলে এ উপজেলায় বোরো ধানের আবাদ কমেছে, বরবটি, সবজি, মৌসুমী ফসলের আবাধ বেড়েছে ভুট্টার।
মোঃ হায়দার আলী,
রাজশাহী।