August 5, 2025, 7:50 pm
হেলাল শেখ ঃ ঢাকার আশুরিয়ার বাইপাইলের চারালাড়া, জামগড়া ও ভাদাইল রূপায়ন আবাসন-১ এর ভেতরে বাইরে কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে আশুলিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে আশুলিয়ার বাইপাইল চারাল পাড়া থেকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার ঘটনায় জড়িত ৫জন নারী ও ৭জন পুরুষসহ ১২ জনকে আটক করার খবর নিশ্চিত করেছেনা পুলিশ।
জানা গেছে, মাদক সেবন, জুয়া খেলা এবং দেহব্যবসা ফিটিংবাজি নিয়ে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে এসবের সাথে জড়িতরা, এরকম অনেক ঘটনা ঘটছে। এর আগে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন মাঠে শতাধিক কিশোর দেশীয় অস্ত্র চাকু ছুরি নিয়ে মহড়া দিয়েছে। এর আগে আশুলিয়ার জামগড়া উত্তর মীর বাড়ির বাসিন্দা ইন্টারনেট ব্যবসায়ী তাজিবুল মীর (৩১) মদ্যপান করানোর কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ভাই বন্ধু পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য মাদক সেবন করানোর অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়। আশুলিয়া মামলা নং ৩৯/৩৯। তারিখ: ১৮/০১/২০২৩ইং। এরপর তদন্ত শেষে এই মামলায় ৩০২ ধারা যুক্ত করেন আদালত।
উক্ত মামলার আসামীরা হলেন, আশুলিয়ার জামগড়ার মীর বাড়ির মোঃ তমিজ উদ্দিন মীরের ছেলে ১নং আসামী সুমন মীর (৩০), ২নং আসামী মোঃ হিরা মিয়া (৩০), ৩নং আসামী মোঃ শামীম (৩০), ৪নং আসামী মোঃ সুমন মিয়া (২৮)। ভুক্তভোগী পরিবার ও পুলিশ জানায়, গত (৬ জানুয়ারি ২০২৩ইং) সন্ধ্যায় উল্লেখ্য ব্যক্তিদের যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে তাজিবুল মীর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, এরপর ভিকটিম তাজিবুল মীরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় ২২দিন। এরপর তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন ডাক্তার।
তথ্যসূত্র-ঢাকার আশুলিয়ার ভাদাইল ও জামগড়া এলাকার সাধারণ মানুষ মাদক সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। কিশোর গ্যাং লিডার কতর্ৃক সংবাদ কর্মীসহ অনেকেই হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। ভাদাইল ও জামগড়ার মধ্যে রূপায়ন আবাসন-১ এর মাঠসহ আশপাশের এলাকা কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, এমনকি খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, এ যেন ক্রাইম জোন এলাকায় পরিণত হয়েছে আশুলিয়া। এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে হুমকি দেয়া হয় এবং অনেকের উপর হামলা মামলা করার অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উত্তর মীর বাড়ির মৃত সফুর উদ্দিন মীরের ছেলে মোঃ ওয়াহিদ মীর (৬০), ভিকটিম তাজিবুল মীরের বাবা বাদী হয়ে উক্ত ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়া থানাধীন ভাদাইল সাকিনস্থ ৪নং বিবাদী সুমন মিয়ার অফিসের ভিতর, ভাদাইল, ধামসোনা, আশুলিয়া, ঢাকা। এ ঘটনা ৬ জানুয়ারি ২০২৩, সন্ধ্যা অনুমান ৬টা ৩০মিনিটের দিকে। সূত্র জানায়, ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ভাই বন্ধু ব্যবসায়ীদের সাথে তাজিবুল মীরের মিটিং শেষে পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন, অন্য কারো সমস্যা না হলেও তাজিবুল মীর মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে ভিকটিম তাজিবুল মীরের খালাতো ভাই মোঃ রনি বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি অফিসে গিয়ে সুমন মীর, হিরা মিয়া, শামীম, সুমন মিয়াসহ ৬-৭জনকে পেয়েছি, সেখানে দুইটি বিদেশী মদের বোতল দেখতে পেয়েছি, সেই দুই বোতলের মধ্যে এক বোতল পুরো খালি ছিলো আর এক বোতলের অর্ধেকটা ছিলো মদ, তাজিবুল মীর ভাইয়ের চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পারছিলেন না, বলছিলো সে মনে হয় অন্ধ হয়ে গেছেন।
এ মামলার বাদী মোঃ ওয়াহিদ মীর বলেন, আমার বড় ছেলে তাজিবুল মীরকে যারা মদ্যপান করিয়েছে তাদের কাউকেই আমি দেখিনি কিন্তু আমার ছেলের খালাতো ভাই রনি যাদেরকে চিনতে পেরেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি, তিনি আরও বলেন, আমাদের পরিবারের সাথে কারো কোনো বিবাদ বা শক্রতা নেই, শুধু নেটের ব্যবসা নিয়ে সমস্যা। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি। নিহত তাজিবুল মীরের বাবা উক্ত ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েন, বর্তমানে তাকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়ার কারণে আদালতে যাচ্ছেন না বলে সূত্র জানায়। এক বছর গত হলেও উক্ত মামলার আসামীদের কোনো সাজা হয়নি।
আশুলিয়া থানা পুলিশ বলেন, আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইল (মধ্যপাড়া) এলাকার ইন্টারনেট ব্যবসায়ী মোঃ সুমন মিয়া’র অফিসে গত ৬জানুয়ারি ২০২৩ইং তারিখে তাজিবুল মীর নামের যুবককে পরস্পর যোগসাজসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করানোর কারণে মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় ভিকটিমের বাবা ওয়াহিদ মীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন, উক্ত ঘটনার ২২দিন পর ওইদিন শনিবার বিকেল ৪টা ৪০মিনিটে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাজিবুল মীরকে মৃত ঘোষণা করেন। অনেকেরই প্রশ্ন ভুক্তভোগী পরিবার সঠিক বিচার পাবেতো?। এই পুলিশ অফিসারের দাবি-দোষীদের যাতে কঠিন সাজা হয় সেই ভাবে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট প্রেরণ করা হয়েছে । উক্ত নিহত তাজিবুল মীরের মৃত্যুর ঘটনার সাথে জড়িতদের সাজা হবেতো? এমন অভিমত প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। আশুলিয়ায় পুলিশ ও র্যাবের মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে তারপরও মাদক ব্যবসা ও মাদক সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেমে নেই বলে সচেতন মহল জানায়। অনেকেই জানায়, এলাকায় মাদকের আস্তানা থেকে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য নিয়মিত চাঁদা নিয়ে থাকে, ফোন করে কেউ তথ্য দিলে তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করে কিছু পুলিশ সদস্য। আশুলিয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে মাসুদ নামের নতুন পুলিশ অফিসারের ভালো সম্পর্ক হোটেলে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে খানাপিনা করার অভিযোগ রয়েছে। ঈদের পর আবারও আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে।
এ ব্যাপারে র্যাব ও আশুলিয়া থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আশুলিয়ায় অনেক বহিরাগত কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসী রয়েছে, সেই সাথে দেহব্যবসা ফিটিংবাজি। বেশকিছু কিশোর গ্যাং সদস্য অস্ত্রসহ আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এরপর তারা আদালত থেকে জামিনে এসে আবারও সেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে, তবে এ ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে, দ্রুত তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে দাবী করেন তারা। ১২ জনকে আটকের বিষয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিস্তারিত নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি।#