August 3, 2025, 6:04 pm
এম এ আলিম রিপন,সুজানগরঃ পাবনার সুজানগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গাজনার বিল, স্থানীয় পুকুর ও ডোবায় তেমন পানি নেই। আবার অনেক পুকুরে ও জলাশয়ে কিছু পানি থাকলেও মাছ চাষ করার কারণে সেখানে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষক ফলে এবার পাটের ভালো ফলন হলেও পানি অভাবে সোনালী অঁাশ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। ক্ষেতেই পাট ফেলে রেখেছেন অনেক কৃষক।
জানা গেছে, সুজানগর উপজেলা পাট উৎপাদনে অন্যতম। গুনে-মানে আছে সুখ্যাতি। সঠিকভাবে পাট পচাতে না পারলে অঁাশের মানও এবার নিম্নমুখীর শঙ্কা আছে। কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘায় পাট চাষে কমপক্ষে ৯-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন যদি ভালো হয় তাহলে প্রতি বিঘায় ৯-১০ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়। তবে এতো সমস্যার পর যদি কাঙ্ক্ষিত দাম না মেলে তাহলে মাথায় হাত। এজন্য কৃষকেরা উপজেলার বাদাই সুইসগেট খুলে দেবার দাবি জানান সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট।
কৃষি বিভাগ বলছে, পাট পচানোর পানির অভাবে এবার চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। চাষিদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের অঁাশ ছাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চাষিদের এ বিষয়ে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা পাট কেটে জমির পাশে বা রাস্তার ধারে, খাল-বিল বা জলাশয়ের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ আবার অল্প পানিতেই পাটের ওপর মাটি চাপা দিয়ে পাট জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। উপজেলার শত শত কৃষক পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না। ফলে অনেকের পাট এখনো ক্ষেতেই। কেউ কেউ পুকুর, খাল কিংবা পঁাচ-সাত কিলোমিটার দূরে খাল-নদীতে নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।অনেকে আবার মাটি গর্ত করে, পুকুরে-রাস্তার খাদে স্যালোমেশিন দিয়ে পানি জমিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে কষ্ট ছাড়াও অতিরিক্ত খরচ বাড়ছে পাটচাষিদের।উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন,পাট কেটে কোথায় জাগ দেবো। বেশি দামে শ্রমিক নিয়ে ভ্যান ও নসিমনে প্রায় পঁাচ কিলোমিটার দূরে নিয়ে রাস্তার পাশে খাদের পানিতে নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এবার পাট কাটতে গত বছরের তুলনায় শ্রমিক খরচ বেশি হয়েছে।
পোড়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শরিফুল বলেন, আড়াই বিঘা জমির পাট কেটে নানা জায়গায় জাগ দিয়েছি। সোনালি অঁাশের পাট যেন আমাদের গলার ফঁাসে পরিণত হয়েছে।দূর্গাপুর গ্রামের পাটচাষি কামরুজ্জামান বলেন, পাট কাটার সময় হলেও জাগ দেওয়ার সমস্যায় পাট কাটতে পারছি না। কাদোয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল বলেন, সারের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আবার শ্রমিকের মজুরিও বেশি। কোথাও পানি নেই। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ জাহিদ হোসেন রবিবার জানান, উপজেলায় এবার ৯ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট চাষ করেছেন কৃষকরা। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কৃষকের কষ্ট হচ্ছে। পানির অভাবে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন এটা ঠিক। আমরা চাষিদের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের অঁাশ ছাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এ পদ্ধতিতে পাট পচালে অঁাশের মান ভালো থাকে। এছাড়া উপজেলার বাদাই সুইসগেট খুলে দিলে গাজনার বিলে পর্যাপ্ত পানি প্রবেশ করলে পানির এ সংকট কেটে উঠা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
এম এ আলিম রিপন
সুজানগর প্রতিনিধি।