July 31, 2025, 9:42 am
কে এম সাইফুর রহমান,
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২ টায় প্রেসক্লাব গোপালগঞ্জে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৬ জুলাই “জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মার্চ টু গোপালগঞ্জ (পদযাত্রা) কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের ও গণগ্রেপ্তারে জেলা জুড়ে চরম আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। গোপালগঞ্জের জনসাধারণের মাঝে ও রাজনৈতিকভাবে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমরা লক্ষ্য করছি যে নির্দিষ্ট অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি প্রশাসন কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় অজ্ঞাত নিরীহ ও নিরপরাধ জনগণকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলার সম্মানিত “জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর গণঅধিকার পরিষদ এর পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও আমরা লক্ষ্য করছি এই গণগ্রেপ্তার এখনো বন্ধ হয়নি, সেই সাথে এটাও লক্ষ্য করছি এই নৈরাজ্য হয়ে উঠেছে কিছু ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধি আদায়ের কেন্দ্রস্থল। গণঅধিকার পরিষদ” এর পক্ষ থেকে আমরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করছি, যদি এই সময়ের মধ্যে নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার বন্ধ করা ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করা হয়, তাহলে নিরীহ জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে “গণঅধিকার পরিষদ” রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানান। তাদের ৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। নিরীহ নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার বন্ধ করতে হবে। গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. মুনায়েম বলেন, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপি’র আগমনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের দোসররা ছাড়া ও এনসিপির নেতৃবৃন্দ। এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যদি উসকানি মুলক বক্তব্য প্রদান না করতেন তাহলে হয়তোবা এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির ঘটনাই ঘটতো না। তাদের বক্তব্যে সুধু আওয়ামী লীগ নয় গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষকেও বিষিয়ে তুলেছে। আমরা ভেবেছিলাম তারা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু আমরা দেখলাম তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব। এই কারণেই গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষ আজ হয়রানির শিকার। আমরা গোপালগঞ্জের মানুষের এই ভোগান্তি মেনে নেব না। এই সংঘর্ষ কেন্দ্রিক গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে ৫টি লাশ পড়েছে। এই দায় ভার কে নেবে। প্রশাসনের এই উদাসীনতা আমরা মেনে নেব না। জুলাই আন্দোলন কখন বৃহৎ আকারে পরিণত হলো কোন আন্দোলনে লাশের গন্ধ পাওয়া গেল। সুতরাং গোপালগঞ্জ প্রশাসনকে আমরা বলতে চাই, প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করুন, নিরীহ নিরপরাধীদের মুক্ত করুন।
তিনি আরো বলেন প্রশাসন কাদের সাথে হাত মিলিয়ে নিরপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে, কাদের সেল্টারে অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কাদের হাত ধরে মামলা বাণিজ্য চলছে তা আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি।সুতরাং তদন্ত সাপেক্ষে নিরপরাধীদের হয়রানি বন্ধ করুন।
ঢাকা মহাণগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক কাজী রনি বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে গোপালগঞ্জে যে কয়টি মামলা হয়েছে এবং এই মামলাগুলো নিয়ে প্রশাসন ও চিহিৃত কিছু বিএনপি নেতারা মামলা বাণিজ্য করে ভয়ংকর রূপে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিষাক্ত করে তুলেছে। এগুলো দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ব্যক্তিগত রোষানল বন্ধ করতে হবে। এনসিপি কেন্দ্রিক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে গণ মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। গোপালগঞ্জ জেলার যুবঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম মোল্লাহ বলেন, আমরা যে যেখানে রাজনীতি করি গোপালগঞ্জ আমাদের জন্ম ভূমি এখানে কোন অন্যায় আমরা সহ্য করবো না। এনসিপির প্রোগ্রামে হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অপরদিকে গোপালগঞ্জে গ্রেপ্তারের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে তা বন্ধ করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। গোপালগঞ্জের সবাই আওয়ামী লীগ করে না সুতরাং গোপালগঞ্জকে নিয়ে কেউ কটাক্ষ করলে আমরা মেনে নেব না। তিনি আরো বলেন গোপালগঞ্জের বিএনপির কিছু অসাধু নেতারা প্রশাসনের হাত ধরেই ভিলেজ পলিটিক্স করে সাধারণ মানুষের নামে মামলা দিয়ে মামলা বাণিজ্য করছে। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো এ বিষয়গুলো বন্ধ করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য, অন্যথায় আমরা গণঅধিকার কঠিন কর্মসূচি গ্রহন করতে বাধ্য হবো।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম, নিরপরাধ রাজমিস্ত্রি মেহেদী হাসানের স্ত্রী দ্রুত তার নিরপরাধ স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। যাকে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। পরিবারটি বৃদ্ধ পিতা-মাতাও একমাত্র মাদ্রাসায় পড়া শিশুসন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে বলে কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের জানান।
এ সময় ছাত্র অধিকার পরিষদ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ওবায়েত তারিক, গণঅধিকার পরিষদ কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সদস্য সচিব সোহেল হাজরা, ছাত্র অধিকার পরিষদের কার্যকরী সদস্য মো. তুহিন, গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের গনঅধিকারের সভাপতি ইসমাইল হোসেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহাসিন শেখ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং জেলায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।