পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় আটঘর কুড়িয়ানা বি-রক্তির কারন শ-ব্দদূষণ ও অশ্লী-লতা

আনোয়ার হোসেন
নেছারাবাদ উপজেলা সংবাদদাতা।।

পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত আমাদের স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারাবাগান। সরু সরু খালের দুই পাড়ে দৃষ্টিনন্দন সারি সারি পেয়ারবাগান দেখে পর্যটকদের মন জুড়িয়ে যায়। মৌসুম শুরুতেই পেয়ারাবাগানে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশি নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চড়ে ঘুরে বেড়ান দূর-দূরান্ত থেকে আসা তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের প্রকৃতি প্রেমিক ভ্রমণ বিলাসীরা। আষাঢ় শ্রাবণ সময়টায় প্রতিদিন হাজারও দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত এখন বাংলার আপেল খ্যাত কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান। গ্রামীণ জনপদে বিনোদন প্রেমীদের জন্য মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পেয়ারাবাগান দিন দিন পরিণত হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্রে।

অথচ এই মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পেয়ারাবাগানে ঘুরতে আশা পর্যটকরা দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। দুঃখজনক বিষয়ে এই যে সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা নষ্ট হচ্ছে মাত্রাহীন শব্দদূষণ ও অশ্লীলতার আগ্রাসনের কারনে।উচ্চমাত্রার সাউন্ড সিস্টেমে বাজানো অশ্লীল নৃত্যভঙ্গি আর গানের কারণে পর্যটনের পরিবেশ যেমন কলুষিত হচ্ছে, তেমনি স্থানীয়দের জীবনযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে।

এই পেয়ারার মৌসুমে ঢাকাসহ দূর-দূরান্তের নানা বয়সি ভ্রমণপিপাসু অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন পরিবার সহ । বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ আসেন পেয়ারা বাগান দর্শনে। বিশেষ করে ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বহু পর্যটকের সমাগম ঘটে এ এলাকায়। দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি এ পেয়ারা বাগানে বিদেশি পর্যটকরাও আসে, বলতে গেলে সারা বছরই কমবেশি দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে।

পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ার বাগান এখন বিরক্তির কারন হলো শব্দদূষণ ও অশ্লীলতা। আগ্রহ হারাচ্ছে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আশা পর্যটকরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা।

কুড়িয়ানা ঘুরতে আশা ফিরোজ নামে একজন জানান, আমাদের স্বরুপকাঠি বরাবরের জন্য বিখ্যাত। যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষেরা ছারছিনার অলিরা শুয়ে আছেন এই মাটিতে। স্বরুপকাঠির সর্বস্তরের মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সর্বদা স্বাচ্ছন্দ্যে মিলেমিশে বসবাস করেন তাদের প্রিয় জন্মভূমিতে। তবে যুগের পরিক্রমায়, অশ্লীলতার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে আমাদের স্বরুপকাঠি। আমরা আজ রুখে না দাড়ালে, অশ্লীলতায় ছেয়ে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।

কুড়িয়ানা আর্য সম্মিলনী বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক বাবু তাপশকর তার নিজ ফেইসবুক আইডিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ট্যাগ করে পোষ্ট করেছেন, নেছারাবাদ উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পেয়ারা মৌসুমে আটঘর কুড়িয়ানায় আগত উশৃংখল পর্যটকদের উৎপাত বন্ধে দয়া করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। নতুবা কুড়িয়ানা আর্য সম্মিলনী বিদ্যালয় তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখার অনুমতি দিন।আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চরম ব্যাঘাত ঘটে।

কুড়িয়ানা পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মোঃ সাইফুল ইসলাম, নির্বাহী কর্মকর্তা, ওসি, ডিসি মহোদয়কে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্যাগ করে বলেন, কুড়িয়ানার ভাসমান পেয়ারা বাগানে পর্যটক ভ্রমণে শৃঙ্খলার অভাব ও নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পর্যটকরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তিনি আরো বলেন, কুড়িয়ানা, দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান, এখানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো পর্যটককে আকৃষ্ট করছে। চোখ জুড়ানো এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে আসে।

কিন্তু দুঃখজনক ভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু ট্রলারে উচ্চস্বরে ডিজে সাউন্ডে বাজানো হচ্ছে অশ্লীল গান ও রুচিহীন কথাবার্তা—যা এই মনোরম পরিবেশের সঙ্গে একেবারেই সাংঘর্ষিক। শিশু, নারীনিরাপত্তা ও পারিবারিক ভ্রমণের জন্য এটি যথেষ্ট অস্বস্তিকর ও লজ্জাজনক পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
এছাড়াও, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। অধিকাংশ ট্রলারে নেই কোনও লাইফ জ্যাকেট, দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীরা ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। ট্রলারচালকরা খালের ভেতরে যথেচ্ছভাবে ট্রলার আডা আডি করে রাখায় অন্য অন্য ট্রলারগুলো চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, যার ফলে যাত্রীদের নামা-ওঠা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, তেমনি সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খলা।

স্বরূপকাঠীর আটঘর কুড়িয়ানা কেবল একটি ভাসমান নৌকা বা পেয়ারার হাট না , এটি একটি প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চল ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে। এই মৌসুমে বর্ষাকালীন পর্যটক অবশ্যই চলবে, কিন্তু সেটি হতে হবে মার্জিত শৃঙ্খলাবদ্ধ, পরিবেশবান্ধব ও সংস্কৃতিমনা সম্মত। সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা, কঠোর বাস্তবায়ন এবং এলাকাবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এখানেও গড়ে উঠতে পারে কেরালার মত বিশ্বমানের এক প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহেদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জনরে এসেছে, আমি জরুরি ভাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবো। একটি সার্কুলার জারি করবো এবং ঐ সার্কুলারটি নৌকায় নৌকায় টাঙানো থাকবে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করানো হবে। আমি ওসি সাহেবের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেছি বিশেষ করে সাউন্ড বক্স এবং অশ্লীল নৃত্যভঙ্গির বিষয়ে আমরা জরুরি পদক্ষেপ নিবো।

আনোয়ার হোসেন
নেছারাবাদ উপজেলা সংবাদদাতা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *