July 20, 2025, 7:44 pm
কুমিল্লা থেকে তরিকুল ইসলাম তরুন,
রুটি ফলের দৃশ্য দর থেকে দেখে মনে হবে কাঁঠাল, পাতায় চোখ রাখলে মনে হবে সবুজের মধ্যে লুকিয়ে আছে সবুজ রংগ্ঙের কাঁচা পেঁপে। কিন্তু আসলে এটি কোনো কাঁঠাল বা পেঁপে নয়। এর নাম রুটিফল। কুমিল্লার কোটবাড়ীতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) ক্যাম্পাসের সম্মেলন কক্ষের পশ্চিমাংশে দাড়িয়ে আছে বিরল প্রজাতির এই বিদেশি ফলগাছে এবার ব্যাপকভাবে ফল ধরেছে।
ব্যতিক্রমী এ দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন বার্ড প্রাঙ্গণে
ঘুরতে আসলেই তখন চোখ ঘুরিয়ে
সরেজমিনে দেখা যায়, বার্ডের মহাপরিচালক দপ্তরের উত্তর পাশে একটি, ডাকঘর এলাকায় একটি এবং ময়নামতি অডিটরিয়ামের সামনে দুটি রুটিফল গাছ রয়েছে। সবুজ ঘন পাতার মধ্যে শাখার অগ্রভাগে ঝুলছে কাঁঠাল সদৃশ রুটিফল। দর্শনার্থীরা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন।
বার্ড সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে বার্ড ক্যাম্পাসে প্রথম রুটিফল গাছ রোপণ করা হয়। প্রায় তিন দশক ধরে গাছটি ফল দিত। ২০১৭ সালে ঝড়ে গাছটি উপড়ে গেলে ওই বছরই নতুন করে আরও চারটি গাছ লাগানো হয়। এর মধ্যে একটি মরে গেলেও বাকি তিনটিতে এবার প্রচুর ফল ধরেছে।
বার্ডের কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, “বড় গাছটি মারা যাওয়ায় আমরা দুঃখ পেয়েছিলাম। পরে নতুন গাছগুলো লাগানো হয়। এবার তিনটিতেই ফল এসেছে, আমরা খুব খুশি।” বার্ডের বাগান শাখার সামছুল হক বলেন, “গাছগুলো ছোটবেলা থেকে আমি পরিচর্যা করেছি। মাসের শেষে ফলগুলো পাড়া হবে।
সাধারণত আমরা সবজি হিসেবে রান্না করে খাই।”
দর্শনার্থী আব্বাস আলী বলেন, “প্রথমে শুনে অবাক হয়েছিলাম যে গাছে রুটি ধরে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দেখতে এলাম। দেখতে অনেকটা কাঁঠালের মতো হলেও পাতা আরেকদম ভিন্ন।”
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উদ্ভিদবিদ অধ্যাপক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, রুটিফলের বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus altilis, ইংরেজিতে এটি ‘ব্রেডফ্রুট’ নামে পরিচিত। স্বাদ আলুর মতো, পাউরুটির মতো কেটে খাওয়া যায়। গাছ ৫০-৭০ ফুট উঁচু হয়। মূলত আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বেশি জন্মে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক পরিচালক ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রুটিফলে সুষম খাদ্যের সব উপাদান থাকে। ওষুধি গুণও রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগের উপশমে ব্যবহৃত হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, “ফলটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং ভেষজ গুণও আছে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়নি। কেউ আগ্রহী হলে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করবে।”
বিরল এই ফল দেখতে আগ্রহী মানুষের ভিড়ে এখন সরগরম বার্ড ক্যাম্পাস। শাখায় ঝুলে থাকা কাঁঠালসদৃশ ফল আর ঘন পাতার সৌন্দর্য যে কারও নজর কাড়বে।