July 16, 2025, 2:31 am
শহিদুল ইসলাম,
নিজস্ব প্রতিবেদক,চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রাম নগরীর দীর্ঘদিনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নৈরাজ্য ও অর্থ বাণিজ্যের অবসানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ডোর-টু-ডোর বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে চলমান অনিয়ম, ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় এবং দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা’–এই নীতিকে সামনে রেখে একটি নতুন ছক বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার চসিকের প্রধান নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “চলবে না আর ময়লার নামে চাঁদাবাজি। নগরবাসীর টাকা ও আস্থার অপব্যবহার কঠোরভাবে রোধ করা হবে।”
ডোর-টু-ডোর সেবায় নির্ধারিত ফি, বন্ধ অতিরিক্ত আদায়
চসিক প্রধান জানান, নতুন নীতিমালায় প্রতিটি বাসাবাড়ির জন্য নির্ধারিত হারে সেবামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। “কেউ অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে,”—তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
নতুন নীতিমালার আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের জন্য দরপত্র আহ্বান করে ১৯২টি শিডিউল বিক্রি করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অভিজ্ঞ ও সক্ষম ঠিকাদারদেরকেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
চুক্তিবহির্ভূত কোম্পানির নামে অর্থ আদায়: আইনি পদক্ষেপ শুরু
তিনি অভিযোগ করেন, “বর্তমানে কিছু কোম্পানি মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে, অথচ তাদের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের কোনো বৈধ চুক্তি নেই। এছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিট করে কিছু এলাকায় সেবা বন্ধ রেখে নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছে। আমরা আইনি পথে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ নীতি বাস্তবায়ন
চসিকের আওতায় ডোর-টু-ডোর সেবার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ২০০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে অনেকে তিন মাস ধরে কাজে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ অবস্থায় ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ নীতি গ্রহণ করে তাদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন জনবল নিয়োগের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।
প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি অভিযোগ পাই— মানুষ টাকা দিচ্ছে, কিন্তু ময়লা নিচ্ছে না। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
সক্ষমতা যাচাই করেই অনুমোদন
নতুন ব্যবস্থায় প্রতিটি কোম্পানির শ্রমিকের সংখ্যা, গাড়ির পরিমাণ ও কার্যক্ষমতা যাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে বৈধ লাইসেন্স রয়েছে, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
যন্ত্রপাতির সংকটে ময়লা অপসারণে বাধা
চসিকের নিজস্ব যানবাহন ও ইকুইপমেন্টের সংকট সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন কমান্ডার ইখতিয়ার। তিনি বলেন, “অনেক যন্ত্রপাতি ২০-২৫ বছরের পুরনো। স্কেভেটর ও চেইন ডোজার ভাড়া করে ময়লা সরাতে হচ্ছে। এই খাতে বড় পরিসরে বাজেট প্রয়োজন।”
নাগরিক অসচেতনতা ও জলাবদ্ধতা: চসিকের উদ্বেগ
তিনি জানান, “নগরীতে জলাবদ্ধতার একটি বড় কারণ হচ্ছে বাসাবাড়ি থেকে জানালা দিয়ে ময়লা ফেলা। ড্রেন পরিষ্কারের কিছুদিন পরই ফের বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নগরবাসীকে সচেতন না করলে পরিচ্ছন্নতা টিকবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্যরা
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি এবং ডা. এস এম সারোয়ার আলম।
ক্যাপশন:-
নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চসিকের নতুন পরিকল্পনা ও কঠোর অবস্থানের বিষয়ে বক্তব্য রাখছেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।