July 4, 2025, 11:27 pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহীর দুটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী দুই সাবেক ছাত্রনেতা। তারা হলেন- ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম ও অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহীন। আশি ও নব্বই দশকের এই দুই ছাত্রনেতা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং দলের প্রতি তাদের দীর্ঘদিনের অবদান রয়েছে বলেই দাবি করেছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তারা আত্মবিশ্বাসী।
জানা গেছে, ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির একজন চিকিৎসক ও জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজশাহীর রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
অন্যদিকে, অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একজন সফল ব্যবসায়ী এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সহসভাপতি। নব্বই দশকে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা শাহীন এবার রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
দুই নেতা বলছেন, দল, দেশ ও জাতির কল্যাণে দীর্ঘদিন ধরে তারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং আগামী নির্বাচনেও তারা দলের হয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিউজটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশের পর প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন নিটিজেনেরা।
শহিদুল ইসলাম শহিদ লিখেছেন, টাকা খেয়ে তাদের পক্ষে নিউজ করেন আপনারা এই ১৭ বছর তাদের বা তাদের পক্ষে কোন লোক দেখলাম নারাজশাহী তে এতো আন্দোলন সংগ্রাম বড় বড় মহাসমাবেশ গেল রাজশাহীতে কই কোনদিন তো তাদের কোন ব্যানার ফেস্টুন কিংবা কোন আন্দোলন সংগ্রাম নেতৃবৃন্দকে দেখলাম না আজ দলের ভালো সময় নির্বাচন করতে আর আপনারা যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিউজ করছেন যারা এই ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তাদেরকে এমপি নমিনেশন দিতে হবে।
সোহেল রানা লিখেছেন, বাঘমারা রাজশাহী ১, আবার তানোর গোদাগাড়ীও রাজশাহী ১ ?? সংবাদ লেখার সময় কি বুদ্ধি ছুটিতে ছিলো নাকি? আর তানোর গোদাগাড়ী অবহেলিত এই কথা এইসব বুদ্ধিজীবীদের কে বললো ? বাংলাদেশের মধ্যে তানোরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট অনেক বেশী এবং ভালো । যেটা জনাব আমিনুল হক সাহেব করে গেছেন ।
এম. ডি রেজাউল ইসলাম লিখেছেন, মাঠে আন্দোলনে না থেকে মনোনয়ন দিলে দলের তৃনমুূলের ক্ষতি হবে। নেতা কর্মীদের সাথে যাদের সম্পর্ক আছে ফ্যাসিস্ট খুনী পতিত সরকারের রোষানলে রাজপথে রক্ত দিয়েছেন তাদের মনোনয়ন দিতে হবে।
আবদুল আল মামুন নয়ন লিখেছেন, আন্দোলন নয়, সংগ্রামী নয়, কর্মীদের পাশে নাই, প্রবাসীদের নমিনেশন দিতে হবে কেন?
এম. ডি তোফিক আহমেদ, লিখেছেন,
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ছাত্রদলের সোনালী অতীত বাগমারা মাটি ও মানুষের নেতা ডঃ জাহিদ দেওয়ান শামীম আঙ্কেল।
আসাদুল ইসলাম লিখেছেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ছাত্রদলের সোনালী অতীত বাগমারা মাটি ও মানুষের নেতা ডঃ জাহিদ দেওয়ান শামীম আঙ্কেল।
ড. জাহিদ দেওয়ান শামীমঃ ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম ২০১৭ সাল থেকে জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
ড. জাহিদ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি ও এজিএস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ একাডেমিক কাউন্সিলের ছাত্র প্রতিনিধি, ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি কার্যনিবাহী সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ছিলেন।
ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন এবং ৯০-এ স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী গনতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ৫টি মামলার আসামী তিনি। এছাড়াও ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ সকল ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
ড. জাহিদ ২০১৫ সালে দেওয়ান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাগমারা তথা দেশের মানুষের পাশে দাড়িয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে দুস্থ্য মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র, খাবার সমগ্রী, পোষাক বিতরণসহ অসহায় রোগিদের চিকিৎসায় আর্থীক সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।
১৯৬৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ড. জাহিদ দেওয়ানের শিক্ষাজীবন জন্মস্থান রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার জামালপুর গ্রামের জামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু। এরপর ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও এইচএসসি পাশের পর ১৯৮৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৯৫ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ২০০৪ সালে মার্চে জাপানের টোকিও মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল ইউনিভার্সিটি থেকে ক্যান্সার বায়োলজী ও ইমিউনোলজীতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম বলেন, ‘‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বয়স ছিল এক বছর, দেশের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় নাই। এটিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি। বুদ্ধি হবার পর থেকেই তাই আমাকে দেশের মানুষ এবং দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা শয়নে স্বপনে জাগরনে ভিতরে ভিতরে খোঁচাতে থাকে। আমি চিন্তা করেছি একমাত্র রাজনীতি আমাকে এই সুযোগ করে দিবে। কারণ রাজনীতি যা একটি জটিল ও ক্রমবর্ধমান বিষয়। যার দ্বারা সমাজের পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ, সম্পদের সুষ্ঠু বরাদ্দ, নীতিমালা প্রনয়ন, বিরোধ মিমাংসা এমনকি সরকার গঠন করে জনগণের প্রয়োজন মিটাবার সর্বোত্তম পথ বলেই আমি মনে করি এবং এই কারনেই আমার এই রাজনীতির পথে আসা।’’
ড. শামীম আরও বলেন, “আমি আশির দশকে ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম। ছাত্ররাজনীতি থেকেই আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। বর্তমানে আমি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসক ও জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দলের প্রতি ভালোবাসা আজও অটুট আছে।
‘‘আমি মনে করি, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে এই এলাকার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি প্রবাসে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক সংযোগ কাজে লাগিয়ে এই এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রবাসে থেকেও বিএনপির বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে প্রবাসী ও দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম সবসময়। এখন দেশের প্রয়োজনে আমি মাঠে থাকতে চাই। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারবো- এই বিশ্বাস নিয়েই আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।”
অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহীন
বিএনপির রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহীন ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সহ-সভাপতি। এর আগে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নব্বই দশকের ছাত্রনেতা অধ্যাপক শাহীন রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের নির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন। এছাড়াও তিনি তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভা যুবদলের সহ-সভাপতি ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষ করে অধ্যাপক শাহীন মুন্ডুমালা মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেছেন।
অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহীনের পিতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোজ্জাম্মেল হক বর্তমানে মুন্ডুমালা পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক। এর আগে দির্ঘদিন তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহীন বলেন, “আমি নব্বই দশকে রাজশাহীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম। তখন থেকেই শহীদ জিয়া, বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির আদর্শকে বুকে ধারণ করেছি। আজ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও দেশের প্রতি, দলের প্রতি এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ভুলে যাইনি। প্রবাসে থেকেও দলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ত থেকেছি। ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি বহুদিন ধরে। প্রবাসে থাকলেও জুলাই আন্দোলন সফল করতে ভূমিকা রেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘‘রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আমি যদি বিএনপির মনোনয়ন পাই, তাহলে এই জনপদের অবহেলিত মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নিরলসভাবে কাজ করবো। এই এলাকার মানুষ পরিবর্তন চায়, সুশাসন চায়। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। সেই লক্ষ্যেই আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।’’
অধ্যাপক শাহীন বলেন, ‘‘দলের হাইকমান্ড যদি আমাকে মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দেন, তাহলে প্রবাসী ও এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমি রাজপথে সক্রিয় হবো। জনগণের পাশে থাকবো। বিএনপির বিজয়ের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা করতে আমি প্রস্তুত।”
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।