গোদাগাড়ীতে ঐতিহাসিক ১৭০ তম সান্তাল হুল দিবস অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ “যেখানে অধিকার বঞ্চনা সেখানেই ”হুল”শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখ রোজ সোমবার গোদাগাড়ী উপজেলার কাোকনহাটে সিসিবিভিও ও ব্রেড ফর দি ওয়ার্ল্ড, জার্মানীর সহযোগিতায় এবং রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটি ও গ্রাম সংগঠন সমূহের আয়োজনে রক্ষাগোলা সংগঠনের নৃত্তাতিক জনগণের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও পথ সভার মাধ্যমে ঐতিহাসিক সান্তাল হুল দিবস ২০২৫ পালিত হয়।

রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সুধীর সরেনের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিসিবিভিও’র সমন্বয়কারী আরিফ ইথার। বক্তব্য রাখেন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির নেতা সুমিতা হাঁসদা, মলিন মার্ডী, বাপ্পি মার্ডী, মুকুল সরেন, রঞ্জিত রায়।
সিসিবিভিও শাখা কার্যালয় হতে কাঁকন বাজার প্রদক্ষিণ করে কাঁকনহাট পৌরসভা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিবস পালনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

সভার সভাপতির সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু করা হয়। বক্তাগণ বলেন, ১৭০ বছর ধরে দিবসটি সাঁওতালদের কাছে দাবি আদায়ের গৌরবোজ্জ্বল দিন হলেও আমরা এখনো শোষণ আর বঞ্চনার শিকার । এখনো ফিরে পায়নি ভূমির অধিকার। বিশেষ করে সমতলের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি আজও।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাামের ইতিহাসে আজ থেকে ১৬৯ বছর আগে ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এটি ছিল প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম। সাঁওতাল বিদ্রোহীদের সেদিনের দেশপ্রেমিক সংগ্রাম, আদর্শ ও অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক দুই ভাই সিধু মুরমু ও কানু মুরমু স্মরণে ও শ্রদ্ধায় সাঁওতালদের অনেকেই দিনটিকে সিধু-কানু দিবস বলে থাকেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের এদেশীয় দালাল সামন্ত জমিদার, সুদখোর, তাদের লাঠিয়াল বাহিনী, দারোগা-পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাঁওতাল নেতা সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব, এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে রুখে দাঁড়ান সাঁওতালরা। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের দুই বোন ফুলোমনি মুরমু ও ঝালোমনি মুরমু।
১৮৫৫ সালের ৩০ জুন যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে তা শেষ হয়। সাওতাঁলরা তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করায় ইংরেজ বাহিনীর আধুনিক বন্দুক ও কামানের কাছে টিকতে পারেনি। এ যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা মারা গিয়েছিলো। বিদ্রোহে পর্যায়ক্রমে সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব নিহত হলে বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ঐতিহাসিক সান্তাল হুল দিবস অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সিসিবিভিও’র প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সৌমিক ডুমরী ও সমাজ সংগঠক মানিক এক্কা। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাধায়ন করেন উর্দ্ধতন মাঠ কর্মকর্তা নিরাবুল ইসলাম ।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *