June 27, 2025, 8:39 pm
রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ কচুরিপানার সঙ্গে পরিচিত নন, এমনটা খুঁজে পাওয়া ভার। এটি এমন একটি ভাসমান জলজ উদ্ভিদ, যা বিভিন্ন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। উচ্চ উৎপাদনশীলতা এবং দ্রুত প্রজনন ক্ষমতার জন্য এটি সুপরিচিত। এটা এখন সম্পদে পরিনত হয়েছে।
কচুরিপানা নিয়ে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস। পূর্ববঙ্গে একটা সময় কচুরিপানার প্রকোপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, এটি নিধনের জন্য বিশেষ আইনও প্রণয়ন করতে হয়েছে। গাণিতিক সমস্যা থেকে শুরু করে লোকগীতি, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও কবিতাতেও স্থান করে নিয়েছে কচুরিপানা।
‘প্রবাসী’ (শ্রাবণ ১৩৬১) পত্রিকায় স্থান পেয়েছে কচুরিপানার সচিত্র প্রতিবেদন। শ্রী দেবেন্দ্রনাথ মিত্র তো ‘কচুরি পানা’ শিরোনামে ৫৫ পৃষ্ঠার গোটা একখানা পুস্তিকাই রচনা করেছেন! সে কালের পাঠ্যবইতে সংযুক্ত ছিল কচুরিপানা নিয়ে অঙ্ক-‘একটি পুকুরে কচুরিপানা প্রতিদিন দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। এভাবে ৬০ দিনে পুকুরটি কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ১৫ দিনে পুকুরটির কত অংশ কচুরিপানায় পরিপূর্ণ হবে?’ এ গণনা সে সময়ে কচুরিপানার দ্রুত বিস্তারের বিষয়টিকেই মনে করিয়ে দেয়।
প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। বর্তমানে পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, ঝিল, ক্যানেলসহ বিভিন্ন জলাশয় পানিতে ভরে উঠছে। এর মাঝেই গাঢ় সবুজ আবহ নিয়ে ভেসে আছে কচুরিপানা। গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত একটি জলজ বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ এই কচুরিপানা ও তার ফুল! এ যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে ওঠা এক অবহেলিত শোভা।
এক সময়ের আপদ জলজ উদ্ভিদ কচুরিাপনাও এখন রাজশাহীর সম্পদ। কচুরিপানা গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাবার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এই কচুরিপানা জলজ উদ্ভিদ। নদী ও পুকুর ভাঙ্গন এলাকায় এলাকায় বাঁশ দিয়ে আটকে রেখে ঢেউয়ের আঘাত থেকে ভিটেমাটি রক্ষায় ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া পানিতে স্তূপীকৃত পচা কচুরিপানার ওপরে ভাসমান নানা শাক-সবজিও ফলানো যায়। ফলে চাষিরা পানিতে ভাসমান কচুরিপানার স্তূপগুলোকে কৃষিকাজে ব্যবহার করে। কচুরিপানাকে শুঁকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও তৈরি করা হয়। কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে টব, ফুলদানি,পাটি, ট্রে, ফলঝুড়ি, ডিম রাখার পাত্র, পাপোশ, মোড়া, টুপি, আয়নার ফ্রেম, ডাইনিং টেবিলের ম্যাটসহ প্রায় ২০ ধরনের পণ্য। ’কচুরিপানা প্রকৃতি ও মানুষের জীবনে কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও অসাধারণ অনেক কিছু কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার এ প্রসঙ্গে জানান, কচুরিপানা গবাদিপশুর উৎকৃষ্ট খাবার, জৈবসার হিসেবে খুবই শক্তিশালী, এটা ব্যবহার করে কৃষকগণ ভাসমান শাক সবজির চাষ করে থাকে। পুকুর ও বিলে কাপ জাতীয় মাছের ভাল খাবার, রোদে শুকিয়ে জালনী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর ঔষধিগুন রয়েছে।
গোদাগাড়ী পৌরসভার কৃষক আব্দুল লতিফ এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা গোবরের সাথে পঁচিয়ে কৃষি জমিতে ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদন ভাল হয়।
উপসহকারী কৃষি অফিসার অতনু সরকার বলেন, কচুরিপানা কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিকভাবে এসব কচুরিপানা সংরক্ষণ করা হলে জৈব সার তৈরি করা যায়। এতে কৃষকরা ভালো ফলন পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হতে পারেন। কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে, যা ৩০ বছর পরও অঙ্কুরোদ্গম হতে পারে। পানি পেলে কচুরিপানার ফুল প্রায় সারা বছরই ফোটে। তবে বেশি দিন স্থায়ী হয় না। নাজুক এ ফুল কাণ্ড থেকে আলাদা করলে খুব দ্রুতই নুয়ে পড়ে। তাই এ ফুল জলাশয়ে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণই মুগ্ধতা ছড়ায়।
মেডিক্যাল পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাফিসা জিন্নাহ বলেন, রাজশাহীর বিভিন্ন পুকুর, নদী, খাল-বিলে প্রতি বছর বর্ষার পানিতে বিলের চারপাশ কচুরিপানায় ভরে যায়। এখন মুক্ত জলাশয়ে ফুটন্ত কচুরিপানা ফুল প্রকৃতিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। এ অরূপ সৌন্দর্য মনকে মাতিয়ে যাচ্ছে। উষ্ণতা বয়ে আনছে প্রকৃতি প্রেমিদের হৃদয়ে।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী