June 26, 2025, 5:21 pm
আমিরুল ইসলাম কবির,
স্টাফ রিপোর্টারঃ
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলামকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। তার বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিস্ট আচরণ’, অসহযোগিতা ও দায়িত্ব এড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ নাগরিকেরা।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ঝুঁকিপূর্ণ গাছের নিচে সাংবাদিক পরিবারের বসবাস,ইউএনও’র দায়সারা তদন্ত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। কমেন্টগুলোতে অনেকেই গাছ অপসারণে ইউএনও’র অসহযোগিতা,অমানবিক’ ও ‘জনবিচ্ছিন্ন’ বলে অভিহিত করেছেন।
এর আগে,এনসিপি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ফেসবুকে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিস্টদের সহায়ক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গত ১৮ই মে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) নাজমুল হাসান সোহাগ ফেসবুকে লেখেন,’তবে কি সাদুল্লাপুরের ইউএনও ফ্যাসিস্টদের হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কাজ করছেন.?
এরপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল শেখ সাগর তার পোস্টে লেখেন,’ইউএনও নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগকে সহায়তা করছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাছ অপসারণ না হলে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।’
এই পোস্ট দুটির পর অনেকের মন্তব্যে ইউএনও’র বিরুদ্ধে অসহযোগিতা,ফ্যাসিস্ট মনোভাব, অমানবিক আচরণ,এমনকি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির অভিযোগ তোলেন। কেউ কেউ ভুক্তভোগী হিসেবে অভিযোগ করেন,ইউএনও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।
একজন মন্তব্য করেন,’তার আচরণ পুরোপুরি ফ্যাসিবাদী,মানুষের কষ্ট তার বিবেচনায় পড়ে না।’ আরেকজন লেখেন,ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে কোনো আপস নয়। কেউ কেউ বলেন,ইউএনও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে জনসেবার পরিবর্তে হয়রানি করছেন।
আমিনুর রহমান ও মামুনুর রহমান নামে দুইজন কমেন্টে লেখেন, সাদুল্লাপুরের ইউএনও আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে। খুব দ্রুত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
কমেন্টে নাজমুল বলেন, ‘চালবাজদের জন্য আমরা সেকেন্ড ইনডিপেনপেন্ট আনি নাই। বিপ্লব চলবে,কমেন্ট রিপ্লেতে মাসুদ রানা নামে অপর একজন লেখেন, আপনাকে সেই প্রথম দিনই বলছিলাম ‘ইউএনও এর কার্যক্রম ভালো না।’
সূত্রমতে,বিতর্কিত পোস্টের পরদিন ইউএনও কয়েকজন ছাত্রনেতাকে কার্যালয়ে ডেকে নেন এবং একটি সমঝোতার চেষ্টা হয়। তবে এনসিপির নেতা ও ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়,’প্রশাসনের ফ্যাসিস্ট আচরণ রুখে দাঁড়াব,বিপ্লব চলবে।’
সর্বশেষ,গত ১৮ই জুন সাংবাদিক ও ভুক্তভোগী জিল্লুর রহমান মন্ডল পলাশ প্রতিবেশির ঝুঁকিপূর্ণ ৬টি পুরনো মেহগনি গাছ অপসারণে ইউএনও’র ‘অসহযোগিতা ও দায়সারা তদন্ত’ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি জননিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলেও ইউএনও’র কিছুই করার নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করলেও গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা নিশ্চিত করা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়ায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ফেসবুকে কমেন্টে ইউএনও’র ভূমিকাকে ‘নির্দয়তা’ ও ‘দায়িত্বে অবহেলা’ বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
সাদুল্লাপুরে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ইউএনও’র বিরুদ্ধে সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার,ফোন বা বার্তায় সাড়া না দেওয়া, অসহযোগিতা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব এড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গেও তার আচরণ অশোভন—এমন অভিযোগ রয়েছে। সরকারি কিংবা ব্যক্তিগত নাম্বারে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন না। এমনকি টেক্সট বা হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেন না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ফলে বহু সেবা প্রত্যাশী তথা জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে, উপজেলা পরিষদে বহুদিন ধরে কর্মরত দুই প্রবীণ কর্মচারীর প্রতি ইউএনও’র অবমাননাকর আচরণ। জানা গেছে,১৫-২০ বছর ধরে পরিষদের হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে আসা খোকন ও মোহাম্মদ আলী নামে দুইজনকে অফিসে আসতে নিষেধ করেন ইউএনও।।