June 22, 2025, 10:30 pm
সাইফুল ইসলাম জয় (হেলাল শেখ): বাংলাদেশে যেসকল এলাকায় গ্যাস সংযোগ আছে সেইসব এলাকায় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার কারণে গ্যাস সংকটে ভুগছেন গ্রাহকরা, সেই সাথে সারাদেশে বিদ্যুৎ সংকটেও ভুগছেন লাখ লাখ গ্রাহক: এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে এলাকাভিত্তিক এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা সাভার আশুলিয়ায় আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ এর সংকটে ভুগছেন গ্রাহকরা। তিতাস গ্যাসের বৈধ চুলায় দিনের বেলায় গ্যাস থাকছে না। রান্নার কাজ করতে গভীর রাতের জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়। এর বিকল্প হিসেবে অনেক গ্রাহক এখন এলপিজি, ইলেকট্রিক চুলা, মাটির চুলার মতো বিকল্প পদ্ধতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে একদিকে জ্বালানির খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি মাসে মাসে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পেয়েও গ্রাহকরা গ্যাসের বিল দিচ্ছেন।
রাজধানী ঢাকা ও সাভার আশুলিয়ার অধিকাংশ এলাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় বৈধ গ্রাহকরা গ্যাস পান না। এটি কিন্তু নতুন নয়, দীর্ঘদিন ধরে এমনটা চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে যাদের সামর্থ্য আছে, গ্যাসের লাইন থাকা সত্ত্বেও জরুরি অবস্থায় তারা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ আবার রাখছেন বৈদ্যুতিক চুলা এবং সিলিন্ডার গ্যাস। কারণ বিদ্যুতেরও নিশ্চয়তা নেই। গ্যাস-পরিস্থিতি প্রকৃতই এমন হতাশাজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। অনেক গ্রাহকই এমন মনে করেন যে, গ্যাসের লাইনটা তাদের জন্য অকারণ মাসিক ব্যয়ের একটা অর্থর্হীন দায়ে পরিণত হয়েছে। দরকারের সময় গ্যাস না পেয়েও মাসে মাসে নির্ধারিত টাকা বিল গুনতে হচ্ছে। দেড় দশকের স্বৈরশাসনে শীর্ষ ব্যক্তিরা এ খাত থেকেও চুরি-জোচ্চুরি, লুটপাট, ঘুষ-দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করেছে সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে গ্যাসের উৎপাদন, বিপণন ও সরবরাহে নিয়োগ করতেন, অবস্থার অনেকটাই উন্নতি হতো কিন্তু তা হয়নি। গ্যাসসংকটের প্রধান কারণ, পুরানো সরবরাহ লাইন, চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদন এবং সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার অভাব। পেট্রোলবাংলার তথ্য অনুযায়ী দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট হলেও সরবরাহ মাত্র ২৬০ কোটি ঘনফুট। এই বিশাল ঘাটতির কারণে রাজধানীসহ সারা দেশে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি লেগেই রয়েছে। গ্যাসের পাইপলাইন থেকে চোর ও দালালরা অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা ও কোটি কোটি টাকা কামিয়ে যাচ্ছে বলেই সরকার এই বিশাল ঘাটতির মধ্যে পড়ছে। এই বিশাল ঘাটতির কারণে রাজধানী ঢাকা ও সাভার আশুলিয়াসহ সারা দেশে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি লেগেই রয়েছে। মোট চাহিদার ৬২ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে জ্বালানি বিভাগ। এতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন। কয়েক বছর ধরে গ্যাসসংকট চলছে। এখন তা প্রকট হয়েছে। এই সংকট লাঘবে দেশে গ্যাসের অনুসন্ধানে জোর দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরিকল্পনাধীন ১০০ কুপখনন প্রকল্প থেকে জরুরি ভিত্তিতে তারা এ বছরই অন্তত সাতটি কুপ খননের উদ্যোগ নিয়েছেন।
পুরোনো কিছু গ্যাসকূপের ওয়ার্কওভারও করা হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার একের পর এক প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেনদ্র নির্মাণ করেছে। কিন্তু সে অনুযায়ি জ্বালানি সংস্থানে কোনো নজর দেয়নি। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে অবহেলা করে আমদানিতে ঝোঁক বেশি। শুধু আবাসিক গ্রাহকদেরই সমস্যা নয়, গ্যাস-বিদ্যুৎসংকটের প্রভাব ফেলতে পারে শিল্পকারখানায়ও। এ দুই জ্বালানির উৎপাদন হ্রাস এবং চাহিদা বৃদ্ধির এই উভয় সংকট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ আগে থেকেই প্রয়োজনীয় কিছু প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিলেও সার্বিক সমস্যা সমাধানে তা পর্যাপ্ত নয়। এজন্য কতৃপক্ষ যেমন উৎপাদন-বিপণন-সরবরাহ সুষ্ঠ রাখা এবং সিস্টেম লস বন্ধে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যদিকে গ্রাহকের সচেতনতা এবং সহযোগিতাও প্রয়োজন। গ্যাস-বিদ্যুতের অপচয় রোধ, পরিমিত ব্যবহারও নাগরিকের পবিত্র কর্তব্য। পবিত্র রমজানে এ ক্ষেত্রেও দাবি করে কৃচ্ছ্রসাধন। দেশের শিল্পখাত মারাত্মকভাবে ধুঁকছে। আর তার প্রধান কারণ গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। চাহিদার তুলনায় গ্যাস মিলছে অনেক কম। ফলে ব্যাপকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় বারছে উৎপাদন খরচ। শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ফলে বারছে শ্রমিক অসন্তোষ। কেবল আরএমজি সেক্টরে ২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অন্যদিকে ক্রমাগত কমছে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন। আপাতত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি খুব একটা বাড়ানোর উপায় নেই। আমদানি বাড়াতে হলে নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। আগামী ২বছরেও নতুন টার্মিনাল স্থাপন ও চালু করার সম্ভাবনা খুবই কম।
পেট্রোবাংলা সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। গত শনিবার গ্যাস সরবরাহ হয় ২ হাজার ৬৯১ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি ছিলো ১ হাজার ৩০৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এসেছে ১ হাজার ৯০৯ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি থেকে এসেছে ৭৮১ মিলিয়ন ঘনফুট। এদিকে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেরে যাবে। সেই বাড়তি চাহিদা পূরণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বেশি পরিমাণে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এতে আগামীদিনে গ্যাস সংকট আরও বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ২৯টি চলমান গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। আর মোট তেল গ্যাস অনুসন্ধান ব্লক রয়েছে ৪৮টি। গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করতে পারছে ২৫০ থেকে ২৮০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত। এর মধ্যে আন্র্Íজাতিক বাজার থেকে উচ্চ দামে এলএনজি আমদানি করে দৈনিক প্রায় ১০০কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। যা এরিয়ে স্বনির্ভরতার কৈাশল খুঁজতে হবে। জানা গেছে, সাভার আশুলিয়ায় একাধিক স্থানে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ ৭-৮বার অভিযান চালিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়, একটি অভিযানে ১ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে থাকে তাহলে সরকারের কতো টাকা লোকসান হয়? গত তিন বছরে তেমন কোনো মামলা বা জরিমানা করার তথ্য পাওয়া যায়নি। অবৈধ ভাবে যারা সরকারি গ্যাস ব্যবহার করছে তাদেরকে জেল জরিমানা করা হলে আর এমন কাজ করবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেন সচেতন মহল।##