June 16, 2025, 8:08 pm
আরিফ রববানী ময়মনসিংহ।।
চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে
বিভাগীয় নগরী ময়মনসিংহের ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিচালিত বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা। চাঁদা না দিলেই ক্লিনিক মালিক ও কর্মচারীদের মারপিট করাসহ সহ ভাংচুর হত্যার হুমকি দিচ্ছে চাঁদাবাজরা। এযেন দেখার কেউ নেই। আর এতে ক্লিনিক মালিকরা এতোটাই অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন যে এসব চাঁদাবাজদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক এর নিকট স্মারক লিপি প্রদান করেছেন বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন ময়মনসিংহের নেতৃবৃন্দ। ৭২ ঘণ্টা আলটিমেটামে চাঁদাবাজদেরকে গ্রেপ্তার না করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিার সেন্টার বন্ধ করার ঘোষণাও এসেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন ময়মনসিংহের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে।
অভিযোগে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি ময়মনসিংহ শহরের প্রায় তিন শতাধিক সরকারি ক্লিনিক প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে।পাশাপাশি এসব ক্লিনিকে হাজার হাজার লোক তাদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছে। সরকারি প্রায় ১১ টি দপ্তরে নিবন্ধন ফি (রাজস্ব) জমা দিয়ে সরকারি অনুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। ভ্যাট- ট্যাক্স দিয়ে সরকারের রাজস্ব খাতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে প্রতিষ্ঠান গুলো। সম্প্রতি কিছু অসাধু চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিকগণ দিশেহারা হয়ে উঠেছে। প্রাণের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছে না। আর যদিও কেউ প্রতিবাদ করে তাহলে তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন ও প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা তো অহরহ ঘটে থাকে। প্রশাসনকে জানালে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া সহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে থাকে। যে কারণে কোন প্রতিষ্ঠান মালিক থানায় অভিযোগ করতে পারে না।
বাংলাদেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন, ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলম চন্দন জানান- এসোসিয়েশনে এমন অভিযোগ প্রায়ই আসে, অনেক সময় বৈঠক করেও এসব ঘটনার সমাধান করা সম্ভব হয় না, তাই নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স ময়মনসিংহ এর পক্ষ থেকে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক বরাবরে চাঁদাবাজি বন্ধ ও চিহ্নিত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে মালিক কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করা করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে- চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ব্যবসায়ীদের কে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দালাল হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। এমনকি তাদের নাম জুলাই-আগস্ট আন্দোলন সংশ্লিষ্ট দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ারও হুমকি ধমকি দেওয়া হয়। শুধু মামলায় আসামি হিসাবে নাম ঢুকানোর হুমকি নয়, রীতিমতো ব্যবসায়ীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানীও করা হয়। চাঁদাবাজি নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর ক্লিনিক মালিক ও কর্মচারীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কয়েক জন ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকার আসবে সরকার যাবে। আমরা তো ব্যবসায়ী। আমরা সরকারকে ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে কর দিই। আমরা আমাদের ব্যবসা করে যেতে চাই। পুলিশকে অভিযোগ দিলেই আমাদের প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে।তারা আরো জানান- চাঁদাবাজরা বর্তমান সময়ে যেভাবে আমাদের অতিষ্ঠ করছে তা বিগত সময় কখনো এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজি হয়নি। দলমতের উর্ধ্বে থেকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছি।
তাদের অভিযোগ-দেশের সরকার থেকে শুরু করে সবকিছুর পরিবর্তন হলেও ময়মনসিংহের নগরী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে চাঁদাবাজি এখনও বন্ধ হয়নি বরং আরও বেড়ে গেছে। গত ১৪ জুন শনিবার নগরীর একটি ক্লিনিকে সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করলে ক্লিনিক মালিক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় মালিক ও ক্লিনিকে হামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ক্লিনিকের মালিক।
সুত্র জানিয়েছে- সেই প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকের কাছে চাঁদা দাবি, মারধর এবং সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে গত রবিবার “বাংলাদেশ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ময়মনসিংহ” এর কার্যকরী কমিটির জরুরি একটি সভা কমিটির সহ-সভাপতি শামসুদ্দোহা মাসুম এর সভাপতিত্বে স্বদেশ হাসপাতাল কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয় । চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম চরম আকার ধারণ করায় সভায় কমিটির নেতৃবৃন্দরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় এবং স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে সভায় উপস্থিত কার্যকরী কমিটির সদস্যগণ মতামত ব্যক্ত করেন। সভায় চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের কে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবিতে সোমবার ১৬ জুন সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেন এবং ১৭ জুন ( মঙ্গলবার) দুপুর ১২ টায় চরপাড়া মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়ে নগরীতে মাইকিং করা হয়। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল হক পাপ্পু জানান,এসব কর্মসূচির পরও চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করা না হলে ময়মনসিংহের সকল ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রেখে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করা হবে।