কাঁকনহাট পৌরসভায় বিভিন্ন পদে নিয়োগের ত-দন্ত করবেন দুদক, প্রশাসক বললেন চিঠি পাইনি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভায় চাকরির নিয়োগ নিয়ে ওঠা বিতর্কিত অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় দেড় বছর আগে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় ঘুষ ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে, যা এখন বাস্তবে রুপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন অভিযোগকারীগন।

গত ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে কাঁকনহাট পৌরসভা ছয়টি পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পদগুলো ছিল-স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্টোর কিপার, সহকারী কর আদায়কারী, সার্ভেয়ার, কম্পিউটার অপারেটর ও অফিস সহায়ক। আবেদনের শেষ সময় ছিল একই বছর ৩ ডিসেম্বর। নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ এবং আর্থিক লেনদেনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

এ সময় পৌরসভার দায়িত্বে ছিলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও তৎকালীন মেয়র একেএম আতাউর রহমান খান। সেই সময় সহকারী কর আদায়কারী পদে চাকরির আবেদনকারী সানজিদা শেখ সরাসরি মেয়র এবং তৎকালীন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ঘুষ ও অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দেন।

সানজিদা শেখ, যিনি সাবেক প্যানেল মেয়র গোলাম মর্তুজা শেখের কন্যা, গত ২৬ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে পদের প্রার্থীদের সম্ভাব্য নাম প্রকাশ করেন। তার ভাষ্যমতে, “নিয়োগের আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে কে কোন পদে চাকরি পাবেন।” সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি মারধর ও হুমকির শিকার হন বলেও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

নাম প্রকাশিতদের তালিকায় ছিলেন-স্টোর কিপার পদে শিহাব উল্লাহ (মেয়রের নাতি), সহকারী কর আদায়কারী পদে মহাসিনা আক্তার, সার্ভেয়ার পদে ইফতেহাদ আহম্মেদ স্বপন, কম্পিউটার অপারেটর পদে হিমেল ও অফিস সহায়ক পদে মেহেদী হাসান। পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার ‘বিশেষ প্রার্থী’ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদের জন্য নির্ধারিত বলেও তিনি দাবি করেন।

চলমান বিতর্কের মধ্যেই গত ২৯ ডিসেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সানজিদার পূর্বানুমান অনেকটাই মিলে গেছে-স্টোর কিপার পদে শিহাব উল্লাহ, সহকারী কর আদায়কারী পদে মহাসিনা আক্তার এবং সার্ভেয়ার পদে ইফতেহাদ আহম্মেদ স্বপন চাকরি পান। তবে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পান শিহাব আলী ও অফিস সহায়ক হিসেবে শরিফুল ইসলাম।

সানজিদার বাবা গোলাম মর্তুজা শেখ অভিযোগ করেন, শিহাব উল্লাহ ছাড়া বাকি সবাই মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে পাস করেছেন। তার দাবি, “প্রতি পদে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগের আগে থেকেই ১০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।”

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে নিয়োগপ্রাপ্ত আসাদুল ইসলাম ও শিহাব আলী বলেন, তারা কোনো ধরনের ঘুষ দেননি।

এ ঘটনায় তৎকালীন পৌর মেয়র ও নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন। রাজশাহীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, “ঈদের ছুটির আগেই তদন্তের নির্দেশনা এসেছে, ছুটি শেষে কাজ শুরু করব।”

কাঁকনহাট পৌরসভার বাসিন্দা মানসুরুর রহমান বলেন, ঘুষ অবশ্যই লেনদেন হয়েছে, যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

কাঁকনহাট পৌরসভার সফল প্রশাসক ও গোদাগাড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শামসুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোন চিঠি পাই নি। চিঠি পেলে দেখা যাবে।

কাঁকনহাট পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবইল রিসিভ করেন নি তাই বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

কাঁকনহাট পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজাহার আলীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে শুরু করা সাথে ব্যস্ততা দেখিয়ে মোবাইল কেটে দেন।

উল্লেখ্য, সাবেক মেয়র আতাউর রহমান বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে রেজাউল করিম হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে থাকায় তার প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *