June 14, 2025, 4:03 pm
রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের জেলার উপজেলায় গত কয়েক দিন ধরে প্রখর তাপদাহ আর তীব্র গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ওয়াটার লেভেল অস্বাভাবিকভাবে নীচে নেমে যাওয়ায় বেশীরভাগ নলকূপে পানি উঠেনা। শ্যালো টিউবল ডিপ টিউবলে পানি কম উঠায় সেচ খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূর্য উদয় হচ্ছে আগুনের হল্কা নিয়ে। পুড়ছে মানুষ পুড়ছে প্রকৃতি। বিপর্যস্ত জনজীবন। দুপুরের মধ্যেই আবহাওয়া অসহনীয় হয়ে উঠছে। কদিন ধরেই তাপমাত্রার পারদ উঠছে। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে। গতকাল শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ওঠে ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
দিনের পুরো সময় তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকায় তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। রাতেও প্রায় একই অবস্থা। উপজেলার শ্রমজীবী মানুষজনকে জীবিকার তাগিদে প্রখর তাপদাহ সহ্য করে তাদের দৈনন্দিন কাজ করতে হচ্ছে। অন্যান্যরা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমের কারণে গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, প্রেমতলী হাসপাতাল স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দুপুর ২টার পর শহর ঘুরে দেখা যায়, প্রচন্ড গরমে শহরের ব্যস্ত জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহনসহ মানুষের চলাচল সামান্য দেখা যায়। কাজের প্রয়োজনে যারা বেরিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছাতা বা মাথায় গামছা ব্যবহার করছেন। মার্কেটগুলোতে ক্রেতা নেই বললেই চলে। তবে এই অসহনীয় গরমে সবচেয়ে বেশী ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। রিকসা চালক রুবেলের সাথে কথা হয়, তিনি বলেন, গরমে বেহাল অবস্থা পেটের দায়ে বের হয়েছি। কড়া রোদের কারণে ঘামে জামাকাপড় ভিজে যাচ্ছে। গরমে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। তিন চার বারের বেশী ভাড়া মারা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রিকশা চালাতে হচ্ছে।
মাটি কাটার কাজ করেন, গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ী মহল্লার মোঃ এনামুল হক, পেটের দায়ে মাটিকাটা ও বালি উঠানোর মত কঠিন কাজ করতে হয়। অত্যাধিক গরমের
কারণে শ্রমিকগন দিনে কাজ করতে পারছেন না। ভোর রাত থেকে মাটি কাটার কাজ করি এবং সকাল সাড়ে ৭ দিকে বাধ্য হয়ে কাজ ছেড়ে দিতে হয়। আমাদের ইনকাম কমে গেছে।
শুধু মাটিকাটা শ্রমিক এনামুল রিকসা চালক রুবেল নয়, তাঁর মতো তীব্র গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অটো-চালক, ভ্যান চালক থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষসহ পথচারীরা। এমনকি গরমে প্রাণীকুলও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
গরম থেকে স্বস্তি পেতে মানুষ, পদ্মা নদী পুকুর বিলে, গাছের ছাঁয়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকে বাড়ীর ছাঁদে বস্তা বিছিয়ে পানি দিয়ে ভিজয়ে রাখছেন, তালের শাস, আম, শরবত পান করে ক্লান্তি দুর করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন বয়সী মানুষজন গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে সাফিনা পার্কের সুইমিংপুলে ভিড় জমাচ্ছেন। এ সুযোগে সুইমিং পুলের সংশ্লিষ্টরা সেখানকার টিকিটের মূল্যও বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে প্রখর তাপমাত্রার প্রভাবে গ্রামাঞ্চলে শাক-সবজি আবাদেও ক্ষতি হচ্ছে । বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। চলমান তাপদাহে কৃষি শ্রমিকসহ দিন আয়ের মজুরদের কাজ করা কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং জনজীবনকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিচ্ছে।
সবচেয়ে বেকায়দায় রয়েছে শ্রমজীবীরা। রিকশাচালক, দিন খেটে খাওয়া মানুষ আগুনের হল্কা মাথায় নিয়েই বের হচ্ছে কাজের সন্ধানে। দুপুরের মধ্যেই মরা পদ্মার বিশাল চর তপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হচ্ছে। সেখান থেকে বাতাসে বলিকণার ঝাপটা চোখে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টে আছে নদী তীরবর্তী মানুষ। তাদের ছোট্ট ছোট্ট টিনের চালা ও বেড়ার ঘর পরিণত হচ্ছে তপ্ত ওভেনে। তাপ যেন টিন ছুঁইয়ে নামছে ভেতরে। এক দমবন্ধকর অবস্থা। বাড়ির ছাদের উপর পানির ট্যাঙ্কিগুলো গরম পানির আধারে পরিণত হচ্ছে। গরমে রাস্তার পিচ গলে যাওয়ায় চাঁকা পিচে দেবে যাচ্ছে। এখন চলছে মাঠে মাঠে বেরো ধান কাটার শেষ মৌসুম। ধান কাটার শ্রমিকরাও পড়েছে বিপাকে। গেরস্থ চায় দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে। আবহাওয়ার মতি গতি ভালো না। কখন যে ঝড় বৃষ্টি হয়। তাপদাহের প্রভাব পড়েছে আম লিচুর তাড়াতাড়ি পেঁকে যাচ্ছে। তাপদাহের কারণে বাজারে দিনের বেলায় মানুষ আসছে কম। ফলে সেখানেও বেচাকেনায় মন্দা। অসহায় মানুষ চেয়ে আকাশ পানে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির আশায়।
বিভিন্ন এলাকায় জ্বর, সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সরকারী হাসপাতাল ও বেসরকারী ক্লিনিকগুলিতে ভীড় বেড়েছে রোগীর। এদের মধ্যে শিশু ও বষস্ক রোগীর সংখ্যাই বেশী।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।