June 13, 2025, 9:39 am
রাজশাহী থেকে থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার হাটপাড়া, থানার মোড, রেলওয়ে বাজার এলাকার পদ্মা এলাকায় জেগে উঠা চরে নারী পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রী, কিশোর-কিশোরী, বালক- বালিকাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ প্রচন্ড গরম থেকে রেহায় পাবার ছুটি যাচ্ছে পদ্মার হিমেল বাতাসের পরশ নিতে।
বর্ষায় পদ্মার ভরা যৌবন থাকার কথা থাকলেও মরণ বাধ ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা যেন ক্ষত বিক্ষিত। পানি নেই শুশু বালু চর, জেগে উঠা চরে মানুষ সবুজ ফসল ফলানোর চেষ্টা করছেন। চিনা, ভূট্টা, পটল, লালমী চাষ করেছেন।
পদ্মার পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে বিশাল চর। এই নতুন চরই এবার ঈদের ছুটিতে মানুষের বিনোদনের নতুন ঠিকানায় পরিণত হয়েছিল। পদ্মার পাড়জুড়ে খুব সকাল, বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকে উৎসবমুখর পরিবেশ। চর পেরিয়ে নদীতে গিয়ে তারা নৌকায় চড়ে পদ্মার বুকে ভেসে বেড়ান, নদীর বাতাসে প্রাণ জুড়ান, আর পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করেন ঈদের আনন্দ।
পদ্মায়রচারদিকে পানিতে থৈ থৈ করার কথা, কিন্তু পানি নেই মরণ বাঁধ ফারাক্কার প্রভাবে । এখন যেদিকেই চোখ যায় গনদীর বুকে জেগে উঠা চরে শুধু বালি আর বালি, রোদ্রের আলোতে চিক চিক করছে।
ঈদ পরবর্তী সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত বা ছুটির দিনগুলো পদ্মার পাড়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘুরতে আসছে হাজার হাজার পর্যটক। নদীর বিশাল বুকে নৌকা নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে মানুষের ঢল। ভ্রমণ পিপাসুদের সাড়ে সাড়ে নৌকার বহরে মুখরিত নদীর বুক। ঈদের ছুটি মানেই আনন্দ, আর সেই আনন্দে মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি যেন হয়ে উঠেছে আনন্দমঞ্চ। কখনো মেঘে ঢাকা আকাশ, আবার কখনো ঝলমলে রোদ—তার মধ্যেই চলছে উৎসবের ঢেউ। ঈদের কয়েকদিন পার হলেও পদ্মাপাড়ে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
কর্মব্যস্ততার ঈদুল আযহার ছুটিতে নারী-পুরুষ-শিশু সবাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে এসেছে পদ্মার প্রকৃতির সান্নিধ্যে। তীব্র গরমের মধ্যেও ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য পদ্মার মধ্যে জেগে উঠা চর, রেলওয়ে বাজার ঘাট, হাটপাড়া, গোদাগাড়ী মডেল থানার সামনের পদ্মাপাড় যেন এক আদর্শ গন্তব্য। ছুটির আনন্দে মেতে উঠেছে অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে রেলওয়ে বাজার ঘাটের সামনে পদ্মানদীতে জেগে উঠেছে বিশাল চর চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। শ শ মানুষ নৌকায় করে ওই চরে গিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে।
নৌকা নিয়ে বন্ধুদের সাথে নদীর নতুন পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে নৈসর্গিক সৌন্দর্য মানুষের মনের ভেতরে দোলা দেয়। এবার ঈদে লম্বা ছুটিতে বিভিন্ন বয়সের মানুষ নৌকায় ভ্রমণ করে ঈদের আনন্দ উপভোগ করছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মনোরম পরিবেশে হারিয়ে যেতে কে না চায়। ছুটিতে আসা পরিবারগুলোর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেক ভ্রমন প্রিয়াসীদের প্রধান আকর্ষণ সাফিনা পার্ক আর বিনা টিকিটে ভ্রমন যেন সব বয়সী মানুষেরনমিলন মেলায় পরিনত হয়েছে।
গোদাগাড়ীর সাফিনা পার্ক ও রেস্টুরেন্টে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে প্রকৃতির মাঝে খাওয়ার এবং বিশ্রামের সুযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ঈদের ছুটিতে মানুষের মনের শান্তি দেয়।
ঢাকা থেকে আগত মতিউর রহমান বলেন, সাফিনা পার্ক খুব সুন্দর করেছে যে কেউ এখানে এসে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাবে। আর বিনা পয়সার পদ্মা নদীর পাড়া, জেগে উঠা চর তো আছেই।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ ঈদের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো দর্শনার্থীরা নির্ভয়ে ঘুরতে পারছেন। কোথায় কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মার এই বিশাল চরে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য নৈসর্গিক দৃশ্য, যা সহজেই যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মন কেড়ে নেয়। অনেকেই এটিকে ‘মিনি কক্সবাজার’ বলে অভিহিত করছেন। নদীর বালুচর আর বয়ে চলা বাতাসের কারণে এই জায়গাটি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পদ্মার এই চর দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
গোদাগাড়ী পৌরসভার রেলওয়ে বাজার ঘাটের সামনে মাদারপুর এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন আলী মাঝি বলেন, ‘একসময় পদ্মার উত্তাল ঢেউ আর গর্জন ছিল মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। আমি খুব ভয়ে ওপারে গেছি আবার মানুষ নিয়ে এপারে এসেছি। আগে নদীতে প্রচুর মাঝ হতো এখন সে মাছ আর দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে নদী তার সেই রূপ হারালেও, নতুনভাবে বিনোদনের স্থান হয়ে উঠেছে এই চর।’
মঙ্গলবার গোদাগাড়ী সদর থেকে রেলওয়ে বাজার পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মার তীরে মানুষ আনন্দে মেতে উঠেন। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের নিয়ে দলবেঁধে আসা মানুষ ভাসেন ঈদের আনন্দে। কেউ নদীতে নেমে গোসল করেন, কেউবা নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান, আবার কেউ বালুর চরে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
বন্ধুদের সঙ্গে নৌকায় ঘুরতে আসা জ
আলম শেখ বলেন, ‘পদ্মার এই নতুন চর আমাদের কাছে এক নতুন বিনোদনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। নদীতে নেমে গোসল করলাম, নৌকা ভ্রমণ করলাম- সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি!’
ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা ওবায়দুল বলেন, ‘শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে এমন জায়গার দরকার ছিল। নদীর পাড়ের স্নিগ্ধ পরিবেশ, বাতাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব মিলিয়ে এটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। কক্সবাজারের মতো অনুভূতি হয় এখানে এসে।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী