June 6, 2025, 10:52 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
রাজশাহীতে চাম-ড়া সংরক্ষণে বিনামূল্যে বিতরণ হচ্ছে ২৬৩ মেট্রিক টন লবণ, ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে আশুলিয়া থানার ওসি সোহরাব আল হোসাইনকে প্রত্যা-হার করে ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত বেতাগীতে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় তরুণদের সবুজ স্বপ্নের অভিযাত্রা লবনচরা থানায় সন্ত্রা-স মাদ-ক দম-নে বড় সাফল্য ওসি মোঃ তৌহিদুজ্জামানের ৩ কোটির মা-দক-স্বর্ণ জ-ব্দ বাংলাদেশ মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির অনুমোদন সভাপতি সালাম, সম্পাদক হানিফ উল্লাপাড়া-সলঙ্গাবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানালেন নারী নেত্রী সুইটি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নতুন সদস্য ৪৫ ও সহযোগী সদস্য ১৪ জন পবিত্র ঈদুল আযহা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন লতা গ্রুপ অফ কোম্পানির চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ফাহিম মেরিন ড্রাইভ রোডের পাশে পৌরসভার ব-র্জ্য ডাম্পিং বন্ধ করতে হবে – পরিচ্ছন্নতা অভি-যানে বক্তারা দেবীগঞ্জে ম-দ ও ট্যাবলেট রাখার দায়ে ২ মা-দক ব্যবসায়ীর নামে মা-মলা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর না জুনে হবে ?

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বর না জুনে হবে ?

লেখকঃ মো: হায়দার আলী: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘টালবাহানা’ শুরু হয়েছে বা চলছে উল্লেখ করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে সেটি আপনারাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।” ঢাকায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন তারেক রহমান। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশে দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক অংশ নিয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘সংস্কার শেষে নির্বাচন— এই ধারণা বাস্তবসম্মত ছিল না। তাই শুরু থেকেই আমরা বলে আসছিলাম, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জায়গায় দ্রুত সংস্কার শেষ করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে। এখন অন্য দলগুলোও বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্দি করছে— এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো হবে, রাজনীতির জন্য ভালো হবে, দেশের জন্যও ভালো হবে।’

বিএনপি গত কিছুদিন ধরেই ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠলেও অন্তর্বর্তী সরকারের এখন পর্যন্ত অবস্থান হচ্ছে- ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন।

অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক বলেছেন, টালবাহানা বাদ দিয়ে দ্রুত নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের সকল রাজনৈতিক দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। অনতিবিলম্বে নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন।

আজ মঙ্গলবার দিনব্যাপি মিরপুর ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে পল্লবী থানা যুবদল, দোয়ারীপাড়ায় রূপনগর ৯২ নং ওয়ার্ড বিএনপি ও ট-ব্লকে স্বেচ্ছাসেবকদল রূপনগর থানাসহ বেশ কয়েকটি স্হানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ( বীর উত্তম) এর ৪৪ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তবর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে সংষ্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে আমিনুল হক বলেন,
আপনারা সংষ্কার চান, আমরাও অনেক আগে থেকেই সংষ্কার চাই। এদেশের সাধারণ মানুষ সংষ্কার চায়। কিন্তু সেটা হতে হবে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকারের অধীনে। কারন সংষ্কার ও বিচারের নামে গত ১০ মাসে এখন পর্যন্ত আপনারা কোনো সংষ্কার করতে পারেন নাই। আপনারা এখন পর্যন্ত পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে পারেন নাই। আপনারা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাঙ্খিত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নাই।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যারা বিচার চায় না, তারা শুধু তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়, সংস্কার চায় না। ২০১৪ সালে হলো বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ দিনের ভোট রাতে হলো এবং ২০২৪ সালে নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়ে ডামি নির্বাচন করেছে। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন চায়, তবে যেনতেন নির্বাচন চায় না।’

গত শনিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘যারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, ওই দল ও তাদের সঙ্গে যারা জড়িত সবার বিচার হওয়া উচিত। আমরা সরকারকে বলব- আগে বিচার হবে, এরপর সংস্কার এবং পরে নির্বাচন হতে হবে।
এ সময় মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছে তাকে দেব। কিন্তু তাদের স্লোগান ছিল তোমারটাও আমি দেব। এভাবে তারা ভোটকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অতএব, ভোট ব্যবস্থা ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে জীবন্ত করতে হবে। মৃত গণতন্ত্র মৃত ভোট ব্যবস্থা দিয়ে দেশে নির্বাচন হলে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে না। সেই জন্য আমরা সরকারকে বলব- সংস্কারের আগে নির্বাচন হবে না। বিচারের আগে নির্বাচন হবে না।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গতবছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিলে নির্বাচন প্রশ্নে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের মতভিন্নতা দেখা দেয়। বিএনপি যেখানে প্রথম থেকেই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সংস্কার কাজ এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে বলে আসছিল, জামায়াত সেখানে গুরুত্ব দিয়ে আসছিল সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষে নির্বাচন আয়োজনের ওপর।

ফলে রাজনীতির মাঠে এই দুই পুরোনো মিত্রের সম্পর্ক শত্রুতার পর্যায়ে নেমে আসার উপক্রম হয়। দুই দলের শীর্ষ নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে আকমণাত্মক বক্তব্য দিতে শুরু করেন। একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকা নিয়েও কথা বলতে ছাড় দেননি বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী বিএনপি নেতাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন জামায়াত নেতারা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্রসংস্কার প্রশ্নে এমন পরস্পবিরোধী অবস্থানের মধ্যেই গত গত ড়১৩ এপ্রিল, রোববার লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এই সাক্ষাতের সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ছিলেন। তার সঙ্গে জামায়াত আমিরের বিস্তারিত আলাপও হয় বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পরই মূলত জাদুমন্ত্রের মতো বদলে যায় জামায়াত আমিরের বক্তব্য। তিনি তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করেন। এখন তিনি বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে, অর্থাৎ রোজা শুরুর আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চান। অন্তর্বর্তী সরকারকে আর সময় দিতে চান না জামায়াতের আমির।

নির্বাচন ইস্যুতে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বুধবার দুপুরে ঢাকায় সফররত মার্কিন ডেপুটি হেড অব মিশনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা (মার্কিন প্রতিনিধি দল) শুধু এটাই জানতে চেয়েছেন, কখন আমরা এই নির্বাচন অনুষ্ঠানটা দেখতে চাচ্ছি। আমরা বলেছি যে, প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে ইলেকশন দেওয়ার কথা বলেছেন। তার কমিটমেন্টে তিনি ঠিক আছেন কি না, তা আমরা দেখতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভিউ হচ্ছে, এটা (জাতীয় সংসদ নির্বাচন) রমজানের আগেই শেষ হয়ে যাক। ওই জুন পর্যন্ত অপেক্ষা, কখনো বর্ষা, ঝড়ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, তখন আবার ইলেকশনটা না হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাবে। তাই আমরা চাচ্ছি, ওই আশঙ্কার আগেই, অর্থাৎ রমজানের আগেই এইটা (সংসদ নির্বাচন) হয়ে যায়, সেটা আমাদের মতামত।’

জামায়াত তাহলে আগামী রোজার আগেই নির্বাচন চাইছে কি না?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, শুধু আগামী না। আগামীতে অনেক রোজাই আসবে। ২০২৬ সালে যে রমজান আসবে সেই রমজানের আগেই নির্বাচনটা হয়ে যাক, সেটা আমরা চাই।’

জামায়াত আমিরের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, হঠাৎ এমন কী হল যে, একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেল জামায়াত? দলীয় সুত্রগুলো বলছে, নির্বাচনহীন দেশ দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এটা আর বাড়াতে চাচ্ছে না দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো।

শুধু জামায়াত নয়, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনও একমত। রাজনীতির মাঠে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটিও মনে করে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত শেষ করে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সেদিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সেনাপ্রধান বলেছিলেন ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন। সেই ১৮ মাস আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ হবে। আমাদের ধারণা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এই সময়ের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরে দাঁড়াতে চান- এমন খবরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম আলোচনা যখন দানা বেঁধে ওঠে, তার মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মি. ইউনূস স্বপদেই থাকছেন এবং বহাল থাকছেন তার উপদেষ্টারাও। গত শনিবার তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের নিজেদের মধ্যে বৈঠক হয় বলে জানান, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।

এ দিন সন্ধ্যায় উপদেষ্টা পরিষদের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের উপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সকল কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”

শনিবার রাতে তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়, এখানেও মূলত নির্বাচনের ইস্যুটিই ঘুরে ফিরে এসেছে।

বিএনপি আবারও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চাওয়ার তথ্য জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী কিছুটা নরম সুরে হলেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণার বিষয়টি তুলে ধরেছে বলে জানিয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ ও অর্থনীতি বাঁচাতে ঈদের আগেই ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ’ জাপানে নিক্কেই ফোরামে ‘সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়’ বক্তব্যে তোলপাড়। বিএনপি ভারতের সুরে কথা বলে বিশ্বাসযোগ্য নয়; তবে দলটিকে জিয়াউর রহমানের আদর্শে ফিরতে হবে
সামনে সংঘাত না নির্বাচন? ১০ মাস বয়সী অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ভর করেছে। শেখ হাসিনা পালানোর পর গণতন্ত্র, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথচলা শুরু হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা গত বছরের বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ‘নির্বাচনী ট্রেন চলতে শুরু করেছে, এ ট্রেন আর থামবে না।’ কিন্তু উপদেষ্টাদের কথাবার্তা, সংস্কার নিয়ে মায়াকান্না দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচনের ট্রেন যে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছে এখনো সেখানেই রয়ে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক দুরবস্থা দূরীকরণে দ্রুত নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ অপরিহার্যৃ।

অথচ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কিছু দিন পরপর ঢাকঢোল পিটিয়ে সংলাপ, ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ অর্ধশতাধিক দলের কঠোর অবস্থান, সেনাপ্রধানের ‘ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে’ বক্তব্যকে ভ্রুক্ষেপে নেয়া হচ্ছে না।

সঙ্কট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ করছেন। এত সংলাপ, এত আলোচনা তার পরও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা পুরোনো অবস্থান ‘ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনে’র মধ্যে নির্বাচন সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়ছেন না।

বর্তমান চলছে সোশ্যাল মিডিয়া উত্থানের যুগ। যা ঘটে-রটে সবটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ কার্যত সময়ক্ষেপণ। উপদেষ্টাদের কয়েকজন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে সংস্কার অজুহাত দেখাচ্ছেন। কেউ জনগণ পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায় প্রচার করছে। যদিও প্রধান উপদেষ্টা ‘স্বল্প সংস্কারে ডিসেম্বর বেশি সংস্কারে আগামী বছরের জুন’ নির্বাচনের কথা বলেছেন। কিন্তু বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যতই দীর্ঘ হবে, ভারতীয় ষড়যন্ত্র ততই গতি পাবে। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ না এলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হবে। সে কারণে বিএনপিসহ ৫২টি দল স্বল্প সংস্কার করে ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবি করছে। বিএনপিকে ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন’ দাবি থেকে ভুলিয়ে রাখতে মাঝে মাঝেই ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ’ আয়োজন করা হয়। যে সংস্কার ও হাসিনার বিচারের অজুহাতে নির্বাচন পেছানোর বায়না ধরা হচ্ছে সেগুলো এগোচ্ছে খুবই সম্ভুক গতিতে।

নির্বাচন ইস্যুতে ইউটিউব চ্যানেলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, ছাত্ররা তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো সেনাবাহিনী ও বিএনপি সমর্থন না দিলে অন্তর্বর্তী সরকার ২৪ ঘণ্টাও টিকে থাকতে পারবে না। সেনাবাহিনীর প্রধান বলেছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত এবং বিএনপিও চায় ডিসেম্বরে নির্বাচন। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা পুরোনো বক্তব্য ‘ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনে’র মধ্যে নির্বাচন হবে সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিএনপির সঙ্গে সরকার বিরোধে জড়িয়ে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে?’

প্রধান উপদেষ্টা চারটি দেশের নাগরিক। উপদেষ্টা পরিষদ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এমন ১৭ জন বিদেশি নাগরিক। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কেবল একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে সম্ভব। এত রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত দেশকে ব্যবসাক্ষেত্র বানানোর জন্য করেনি। আর প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে ছাত্ররা ক্ষমতায় বসিয়েছে বলছেন এবং এনসিপির জন্য নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছেন তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন হলে এনসিপি ক্ষমতায় আসা দূরের কথা, দু’-চারটি আসনও পাবে না। আর বিএনপিকে কোণঠাসা করতে জামায়াত যে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, নির্বাচনের পর জামায়াত কিছু আসন পেলেও তাদের এখনকার অবস্থা থাকবে না।

প্রবাদে রয়েছে ‘ক্ষমতা বিবেকবান মানুষকে অন্ধ করে দিতে পারে না। কিন্তু লোভ-লালসা মানুষকে অন্ধ ও নির্বোধ করে দেয়! তবে ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষের প্রকৃত চরিত্রের প্রকাশ ঘটে।’ নোবেল-বিজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কি ক্ষমতা অন্ধ করে দিলো? এ প্রশ্ন উঠেছে তার জাপান সফরে গিয়ে নিক্কেই ফোরামে ফিউচার অব এশিয়া শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘কেউ কেউ সংস্কার রেখে ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাইছে। সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল এটা বলছে।’ তিনি মূলত একটা দল বিএনপি বুঝিয়েছেন। তার এ বক্তব্য নিয়ে নেট জুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে গেছেন? বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি ও দলটির সমমনা ৪২টি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে। এ ছাড়াও সিপিবি-গণফোরাম-জাসদ-বাসদসহ অন্যান্য ১০টি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে। তাহলে ড. ইউনূস কি অন্যান্য দলগুলোকে রাজনৈতিক দল মনে করছেন না? তার কাছে নিবন্ধনহীন এনসিপি আর জামায়াত অতি গুরুত্বপূর্ণ দল? হাসিনা রেজিমে নোবেল-বিজয়ী ড. ইউনূসের উপর রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে চরম অন্যায় ও জুলুম হয়েছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নোবেলের জন্য শত শত কোটি টাকা খরচ করেও নোবেল পেতে ব্যর্থ হন শেখ হাসিনা। সে কারণে দেশের একমাত্র নোবেল-বিজয়ী ড. ইউনূসকে টার্গেটে পরিণত করা হয়। ক্ষুদ্রঋণের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের জনক ড. ইউনূসকে ‘সুদখোর’ হিসেবে প্রচার করেন শেখ হাসিনা ও তার অলিগার্ক গণমাধ্যম। দেশের মানুষ ড. ইউনূসের প্রতি নির্দয় না হলেও ঋণের সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ গরিব ঋণগ্রহীতাদের ঘরের টিন খুলে নেয়া ও গরু ছাগল হাঁস মুরগি ধরে নিয়ে আসতো গ্রামীণ ব্যাংক। এসব খবর গণমাধ্যমে প্রচার হতো। যার কারণে মানুষ হাসিনার ‘ঘুষখোর ড. ইউনূস’ শব্দকে গুরুত্ব না দিলেও ড. ইউনূস সমাজে ‘রক্তচোষা ঘুষখোর’ হিসেবে পরিচিতি পান। ভারতের সহায়তায় দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা সব সময় ড. ইউনূসকে টার্গেট করেছেন। ২০১২ সালে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা ভয়ঙ্করভাবে ইউনূসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেন। অন্যদিকে বিএনপি ড. ইউনূসকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। সে সময় বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ড. ইউনূসের পক্ষ নিয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন।

হাসিনা ও তার সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বেগম জিয়া বলেন, যে জাতি গুণীজনকে সম্মান দিতে জানে না, সে জাতি বড় হতে পারে না। ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, তাকে এভাবে হেনস্তা করা মেনে নেয়া যায় না। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি, নিন্দা জানাচ্ছি।’ বেগম খালেজা জিয়ার সেই বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সেই খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে কয়েক দিন আগে দেশে ফিরে এসেছেন; অথচ তাকে একবারও দেখতে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি ড. ইউনূস। অথচ রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমার যতই ড. ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিক; সেনাবাহিনী ও বিএনপির সমর্থন ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ২৪ ঘণ্টাও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না।’

নোবেল পুরস্কার বিরল সম্মানের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর গত তিন দশকে ভারতসহ উপমহাদেশে আরো কয়েকজন নিজ নিজ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। এদের মধ্যে ১৯৯৮ সালে ড. অমর্ত্য সেন, ২০০৯ সালে ভেঙ্কটরাম রামকৃষ্ণ, ২০১৪ সালে কৈলাস সত্যার্থী ও ২০১৯ সালে অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় নোবেল পুরস্কার পান। এর বাইরে অং সান সুচিসহ অনেকেই নোবেল পেয়েছেন।

নির্বাচন নিয়ে বিলম্বের মূল কারণ হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। অন্তর্বর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া দলটি চায় নির্বাচন পেছাতে। সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত হতে নতুন দলটির দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। আর জামায়াত ও এবি পার্টির মতো দলগুলো কখনো আগে নির্বাচন কখনো সংস্কারের পর নির্বাচন খেলছে। সে দু’দলকে অন্তর্বর্তী সরকার অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সেই জামায়াত ও এনসিপি অনিবন্ধিত দল। সংলাপে সবার পরের সারিতে তাদের থাকার কথা। কিন্তু সরকার তাদের গুরুত্ব দেয় বেশি। অথচ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের তালিকায় এক নম্বরে এলডিপি। সে দলকে রাজনৈতিক দল মনে করছেন না প্রধান উপদেষ্টা? যে ৫২টি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নিবাচন দাবি করছে এদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। অথচ ‘ডিসেম্বরে একটি দল নির্বাচন চায়’ বলার কারণ কি?

ক্ষমতায় থেকে ড. ইউনূস এনসিপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। তাদের আর্থিক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কথায় কথায় তিনি দাবি করেন, এনসিপির তরুণরা তাকে ক্ষমতায় বাসিয়েছে। যার জন্য তিনি এনসিপির স্বার্থরক্ষায় নির্বাচন পরে করার পক্ষে। অবশ্য ড. ইউনূস এর আগে আল জাজিরায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়। শুধু কি তাই অনেকেই বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারলে ড. ইউনূসকে জাতিসংঘের মহাসচিব করা হতে পারে।’

ড. ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করায় মানুষ খুশিই হয়েছিল। কারণ ভারত যেভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ষড়যন্ত্র করছে তাতে মানুষের ধারণা ছিল ড. ইউনূসই কেবল সেটার প্রতিরোধ করতে পারেন। প্রথম দিকে সেটি দেখাও গেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন এনজিও মার্কা উপদেষ্টা এবং ভারত ও পশ্চিমা ঘেঁষা উপদেষ্টা তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে ‘ক্ষমতা লোভাতুর’ করে তোলে। এখন তিনি এসব কিছু ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন।

‘ব্যবসা-বাণিজ্য আর রাষ্ট্র’ যে এক জিনিস নয়, সেটি তিনি গুলিয়ে ফেলেছেন। তবে তিনি নিজের ব্যবসা ও স্বার্থ ভালোই বোঝেন। তার মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত দেশ গড়ার কারিগর হতে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানোর কথা। কিন্তু তিনি সেটি না করে সবাইকে উদোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
নিক্কেই ফোরামের ওই প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি লক্ষ্যে কাজ করছে। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। প্রশ্ন হচ্ছে তিন লক্ষ্যের কোনটিতে তিনি সফলতা দেখিয়েছেন? সংস্কারের নামে সংলাপ নাটক হচ্ছে। কিছু কিছু বিষয় সংস্কারের প্রস্তাবনা করা হয়েছে যা দেশের সঙ্গে বেমানান। আর ফ্যাসিস্টদের বিচার? দেশের সম্পদ লুষ্ঠনকারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার ১০ মাসে তেমন এগোয়নি। জাতিসংঘের অনুসন্ধানে বলা হয় গণঅভ্যুত্থানের সময় ১৪ শ’ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা। কিন্তু ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি কি আহ্বান জানিয়েছেন? তিনি এখন হাসিনা ও তার আত্মীয়-স্বজনদের প্লট, ফ্ল্যাট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞ জারি করা হচ্ছে। যারা আগেই ব্যাংকের টাকা উঠিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন তাদের অ্যাকাউন্ট জব্দ আর বিদেশে যেতে বিধিনিষেধ কি লোক দেখানো?

দীর্ঘ সাড়ে সাত বছর পর ২৯ মে প্রথম রাজনৈতিক বক্তৃতায় বিএনপির চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজো প্রতি পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খুব শিগগিরই আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাবো।’ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বার্তা পরিষ্কার। অন্তর্বর্তী সরকার ঈদের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে বিএনপি মাঠে নামবে। নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি মাঠে নামলে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সেটি হবে অশনি সঙ্কেত। বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেনি বটে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের কাঁপুনি তুলেছিল। তারেক রহমান বিদেশে থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বেগম জিয়া কারাগারে থাকায় দলের নেতৃত্ব দিতে পারেননি। তারপরও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্র ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে, আক্রমণ, হামলা মামলা, গুম-খুন করে, মন্ত্রী-এমপির প্রলোভন দেখিয়ে বিএনপিকে ভাঙ্গতে পরে নি। এখন সব মামলায় মুক্তি পেয়ে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন’ দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা সহজেই অনুমেয়। তবে বিএনপিকেও জিয়ার আদর্শের পথে হাঁটতে হবে। কারণ ভারতের নাচের পুতুল শেখ হাসিনা দিল্লির চানক্যনীতি কৌশলে ‘নির্বাচন নাটক’ করে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও দেশের মানুষ আগামীতে ভারতঘেঁষা দলকে ভোট দেবে না। গত কয়েক মাসে ভারতীয় পণ্য বর্জন, চিকিৎসার জন্য রোগীর চীনমুখী হওয়া এবং পর্যটকদের ভারতের বদলে থাইল্যান্ড, মালদ্বিপ, ভুটান যাওয়ার হিড়িক দেখে সেটি বোঝা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় জামায়াত, এনসিপি ব্যাপক প্রচারণা চালালেও ভোটের রাজনীতিতে দল দু’টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। বিএনপি জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় দল। তবে দলটির তথাকথিত ‘প্রগতিশীল চেতনা’ বদলে জন্মলগ্নের জাতীয়তাবাদী ইসলামী মূল্যবোধ চেতনায় প্রত্যাবর্তন সময়ের দাবি। কারণ দেশের ইসলামী ধারার ছোট দলগুলোর কর্মী-সমর্থকরা ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির অনুসারী। তাদের কাছে টেনে নিতে হলে ভারতীয় জুজুমুক্ত হতে হবে।

ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী বলেন, আমরা বিএনপিকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দল মনে করি। কিন্তু বর্তমান বিএনপি জিয়ার আদর্শ থেকে সরে গেছে। যার কারণে ইসলামী ধারার দলগুলো বিএনপির কাছাকাছি হচ্ছে না। কাছাকাছি নেই বলে যে ভবিষ্যতে কাছাকাছি হবে না সেটি নয়। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যাইনি। বিএনপির উচিত জিয়ার আদর্শকে ধারণ করা। বিএনপির বর্তমান দায়িত্বশীল নেতাদের ইসলামী আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য আসতে হবে। আমরা ছোট দল বিএনপিকে ডাকতে পারি না। বড় দল হিসেবে বিএনপিকেই ইসলামী ধারার দলগুলোকে ডাকতে হবে। শুধু ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলে হবে না। ডিসেম্বরে তো ভারতও নির্বাচন চাচ্ছে। তাহলে কি বিএনপি ভারতের সঙ্গে সুর মেলালো? আমরা সেটি মনে করি না। ইসলামী দলগুলো ইসলামের উপর রয়েছে। শেখ হাসিনা মোনাফেকি করলেও তিনি ইসলামী দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করেছেন। অথচ বিএনপি নেতাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় তারা ফ্যাসিবাদের চেয়েও জঘন্য ফ্যাসিবাদী। জিয়া সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ শব্দগুলো যোগ করেন। সে কারণে বিএনপির প্রতি আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য হচ্ছে
. শক্তিতে আমরা দুর্বল হলেও ইসলামী ধারার দলগুলো ইসলামের পক্ষে থাকবে; অন্য কোনো শক্তির সঙ্গে নয়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগের ভাবনা প্রকাশ করা নিয়ে যেমন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়, তেমনি তাঁর এ ভাবনাকে অনেকে ইতিবাচকভাবে নেয়নি। তাদের কথা হচ্ছে, কখনো যদি জাহাজ ডুবে যেতে থাকে, তখন তার ক্যাপ্টেন সকল যাত্রীকে আগে নিরাপদে পার করে, সবশেষ যাত্রী হিসেবে জাহাজ থেকে নামেন। এতে যদি তার জীবনহানি ঘটে, তাহলে তাই হবে। টাইটানিক জাহাজ যখন ডুবছিল, সেটির ক্যাপ্টেনও নাকি তাই করেছিলেন। একে বলে দায়িত্ব পালনের চূড়ান্ত লেবেল। অন্যদিকে, চলমান যুদ্ধের মাঝপথে ফিরে আসা অপমান ও পরাজয় হিসেবে গণ্য হয়। গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর দেশের হাল ধরার ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ও বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জনগণ বেছে নেয়। সে সময় তার বিকল্প ব্যক্তিত্ব ছিল না। জনগণ একবাক্যেই মনে করেছে, তিনিই পারবেন হাসিনার বিধ্বস্ত করে যাওয়া দেশকে ডুবন্ত জাহাজের মতো ভাসিয়ে রাখতে। ভেঙে দেয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে পারবেন। জনগণের এই চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের আগে ফ্রান্সে থাকতেই তিনি তাঁর দূরদর্শী চিন্তা দিয়ে প্রথম যে কাজটি করেন তা হচ্ছে, বৈরী ভারতকে থ্রেট করেন, যা দেশের মানুষের অন্তরের কথা। এতে দেশের মানুষের সাহস বেড়ে যায়। বিপদে পড়া জাহাজের ক্যাপ্টেন যখন যাত্রীদের আশ্বস্ত করেন, নিরাপদে জাহাজ তীরে ভিড়বে, তখন যাত্রীরা নিরাপদবোধ করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কাজটিই করেছিলেন। তিনি ভারতীয় চ্যানেল এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরিস্কারভাবে বলেছিলেন, ভারত যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়, তাহলে তার সেভেন সিস্টার্সও এ থেকে বাদ যাবে না। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি ভারতকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, নতুন বাংলাদেশকে এখন আর তার দাদাগিরি বা চোখ রাঙানি দিয়ে করদরাজ্যে পরিণত করা যাবে না। দেশের মানুষ তাঁর এই দৃঢ় বক্তব্যে গর্বিত হয়। তাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়, দেশের কা-ারি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব দেয়া ভুল হয়নি। তিনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন হাসিনার দীর্ঘ দেড় দশকের শাসনে নিষ্পেষিত জনগণের সবচেয় আনন্দদায়ক ও স্বস্তির মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। বিশ্বের পরাশক্তি থেকে শুরু করে সবাই তাঁকে বিপুলভাবে অভিনন্দিত করে। দেশ পুনর্গঠনে তাঁকে সর্বাত্মক সহায়তা করার আশ্বাস দেয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী দেশের সকল রাজনৈতিক দল তাঁর পাশে দাঁড়ায়। দায়িত্ব নিয়ে তিনি হাসিনার ভেঙে দেয়া রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনে সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও আদালত সংক্রান্ত ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেন। কমিশনগুলোর বেশিরভাগকে গত জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিছু কমিশন এই সময়সীমার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয় এবং কিছু কমিশনের জন্য সময় বৃদ্ধি করে দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী তারা প্রতিবেদন জমা দেয়। শুরুতে সংস্কার কাজ দ্রুত তাকিদ থাকলেও দেখা যায়, তা যেন কিছুটা ধীর হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করা এবং ঐকমত্যে পৌঁছে সিদ্ধান্ত গ্রহণে এক ধরনের শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয়। এখনও এই অবস্থায় চলছে। ইত্যবসরে সংস্কার করা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা এবং ‘অল্প সংস্কার নাকি, বেশি সংস্কার’ এই বয়ানও হাজির করা হয়। শুরু হয় রাজনৈতিক বিতর্ক। বিএনপি ও তার মিত্রদলগুলো বাদে কিছু ইসলামী রাজনৈতিক দল, নবগঠিত এনসিপি ও তাদের সমর্থকরা বলা শুরু করে, সংস্কার করতে যতদিন লাগবে ততদিন পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। তাদের বয়ান, ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন প্রলম্বিত করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। পর্যবেক্ষকদের মধ্যে এ ধারণা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। বিএনপি ও তার মিত্রদলগুলো তা বুঝে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে বলে দাবি করে। সরকারের তরফ থেকে এ নিয়ে একেকবার একেক বক্তব্য আসতে থাকে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসে একাধিকবার ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেন। এতে বিএনপির অসন্তোষ বাড়ে। দলটি প্রয়োজনীয় সংস্কার, আওয়ামী লীগ ও জুলাই গণহত্যার বিচার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার দাবিতে অনড় থাকে এবং রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দশ মাসের মধ্যে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার প্রভু মোদির যৌথ ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত হয়েছে। ছাত্র-জনতা ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সরকারকে সহায়তা করে সেগুলো প্রতিহত করেছে। সরকারকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে কোনো কোনো উপদেষ্টা ও সরকারের ভেতরে এবং বাইরে থাকা একটি মহলের মধ্যে সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে। এর প্রকাশ ঘটে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক সরকারের মতো পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়ার মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য করিডোর দেয়া ও বিদেশিদের কাছে চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয় সামনে আনা হয়। এসব কাজ অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। এমনিতেই সরকারের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ দেয়া না দেয়া নিয়ে এক ধরনের তালবাহানা রয়েছে, তার মধ্যে উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারের প্রতি বাষ্পায়িত অসন্তোষ উসকে দেয়। রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা থেকে বিএনপি প্রবল আপত্তি জানায়। সবশেষ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও করিডোর, বন্দর এবং নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দেন। এতে সরকারের টনক নড়ে। মিয়ানমারকে করিডোর দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয় সরকার। নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে পরোক্ষভাবে এখতিয়ারবর্হিভুত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্ক সৃষ্টি করার মতো পদক্ষেপ কেন নিতে হবে? সে তো জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত কোনো সরকার নয়। তাকে জনগণ দায়িত্ব দিয়েছে, রাষ্ট্র সংস্কার, আওয়ামী লীগের বিচার এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে। এর বাইরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মানুষের আয় বাড়ানো, জীবনযাপন সহজ করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানোর মতো জনগণের নিত্যদিনের সমস্যার সমাধান করা। সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি করে দেয়া। এসবের দিকে ফোকাস না করে রেগুলার সরকারের মতো বড় বড় কাজে হাত দেয়ার অর্থই হচ্ছে, তার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা, কিছু রাজনৈতিক দল যারা সরকারে এবং প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করে সুবিধা নিচ্ছে, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, যেসব উপদেষ্টা ক্ষমতা উপভোগ করতে চায়, তাদের পক্ষাবলম্বন করা। সরকারের এ প্রবণতা গণতান্ত্রিক নয় এবং দেশকে গণতান্ত্রিক ধরায় প্রবাহিত করাকে প্রলম্বিত করা। সরকার দশ মাসে দেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, শিল্পকারখানার উৎপাদন গতিশীল করেছে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, এমন কোনো নজির দেখাতে পারেনি। সরকার প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যান উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের মানুষ এ সরকারের আমলে ভালো আছে বলে ফাঁকা অওয়াজ দিচ্ছে। সরকারের মধ্যে এমন প্রবণতা বিদ্যমান যে, জনগণ তাদের আদর করে বসিয়েছে, তাই তারা ভুল-ত্রুটি করলে আদরের দৃষ্টিতেই দেখবে। মান-অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে খুঁজতে বের হবে এবং আদর করে কোলে তুলে নেবে। এটা একটা সময় পর্যন্ত হয়। তারপর আর হয় না। তখন জনগণ তার কাছ থেকে চাহিদা পূরণ আশা করে এবং দায়িত্বশীল হয়ে তাকে তা করতে হয়। দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার যথেষ্ট সময় পেলেও তা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। জনগণের দোহাই দিয়ে এখতিয়ারভুক্ত দায়িত্ব দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখিয়ে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার বাসনা পোষণ করছে। বিপুল জনসমর্থিত ক্ষমতাকামী কোনো রাজনৈতিক দল তা মানতে পারে না। বিএনপিও মানতে পারছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি সরকারকে না জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছে, না আন্দোলন করতে পারছে। আন্দোলন করলেও তার জন্য বিপদ, আবার চুপ করে থাকলেও বিপদ। আন্দোলন করলে সরকারের টিকে থাকা কঠিন এবং নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আবার চুপ করে থাকলেও সরকার তার দুর্বলতাকে পুঁজি করে নির্বাচনকে প্রলম্বিত করবে।

বিএনপি দাবি করেছে, কোনো রকম সংস্কার করা এই সরকারের কাজ নয়। তাদের একমাত্র কাজ হলো, ইলেকশন করা। জানা গেছে, ড. ইউনূসও আর সংস্কার নিয়ে অনড় অবস্থানে থাকবেন না। নির্বাচিত পার্লামেন্ট এসে যা ভালো বোঝে, তা করবে।

কেনো তিনি আগামী বছরের জুন পর্যন্ত যেতে চেয়েছিলেন সেটি তিনি তার বয়সে কিছুটা কম, এমন একজনকে বলেছেন যে, শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মীর বিচার সম্পন্ন করে ইলেকশন দিতে চেয়েছিলেন। তিনি ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি শেখ মুজিবকে দেবতার আসন থেকে নামিয়েছেন। দেশের টাকা বা ব্যাংক নোট থেকে শেখ মুজিবের ছবি মুছে দিয়েছেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচন যে সময় হউক না কেন? ভোটারগণ যেন ভোট দিতে পারেন, নিজের ভোট নিজে যাকে খুশি তাকে দিতে পারেন। মানুষ ভোট দেয়ার কথা ভুলে গেছেন। মরা মানুষ, শিশু, কিশোরও ভোট দিয়েছেন। এক ব্যক্তি দুই বা ততোধিক নয় শতাধিক ভোটদেয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার, এজেন্ট, পুলিশে ব্যলোট পেপারে শিল মেরেছেন, ই-ভিএম এ ভোট দেয়ার সময় জোর করে পছন্দের মার্কায় ভোট দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ভোট গননা না করে ফলাফল দেয়া, কেন্দ্রে এক প্রার্থী বিজয়ী হয়ে বিজয় মিছিল করেন আর কন্ট্রোল রুমে গভীর রাতে অন্য প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষনা করার নজিরবিহীন ঘটনাও ঘটেছে। তাই ভোটরেরা ভোট প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই ১৮ কোটি প্রাণের দাবী দেশে বিদেশে সকলের নিকট একটি গ্রহনযোগ্য নিবাচন। ভোটার যেন আগ্রহ ফিরে পায়, ভোটকেন্দ্র থাকবে উৎসবমুখর। সে প্রত্যশায় মানুষ তীর্থের কাঁকের ন্যায় চেয়ে আছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দিকে। ২০১৪ সালে হলো বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ দিনের ভোট রাতে হলো এবং ২০২৪ সালে নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়ে ডামি নির্বাচন করেছেন সেটা দেখতে চাই না জনগণ।

মো. হায়দার আলী।।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD