June 3, 2025, 6:50 am
হেলাল শেখঃ বাংলাদেশে স্বর্ণ ও মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ কারবার করে ১৬ বছরে অনেকেই অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বুনে গেছে বলে তথ্য রয়েছে। সূত্র জানায়, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরিয়েছে তারা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পদ পদবি না থাকলেও গত ১৬ বছরে বাড়ি গাড়িসহ শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
রবিবার (১ জুন ২০২৫ইং) জানা গেছে, রাজধানীর মিরপুর ১১ নং ও ১২ নং এবং তাঁতিবাজারসহ জেলা উপজেলায় বিভিন্ন মার্কেট ও জুয়েলারী দোকানের মালিক সোনার ১০ ভরি ওজনের বিস্কুট চোরাকারবারি করেছে, এমন কি উন্নত মাদকের কারবার করে শত শত কোটি টাকার মালিক বুনে গেছেন অনেকেই, সোনার হিসাব ও মাদকের বিষটি এবং কালো টাকার মালিকরা কৌশলে বাঁচতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় পাটনার হয়।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ১ভরি ২২ ক্যারেট সোনা বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, ২১ ক্যারেট ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। ‘স্বর্ণের দাম উঠানামা অব্যাহত-বাংলাদেশসহ বিশ্ব বাজারে এ যেন ভেলকিবাজি শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা’। সোনার দাম বাড়ালে দ্রুত বোর্ডে লেখা হয়, আর দাম কমালে তা বোর্ডে লিখতে দুই চারদিন লেগে যায় বলে ক্রেতাদের অভিযোগ, এ যেন অন্যরকম এক ভেলকিবাজি। সেই সাথে জুয়েলারি দোকানে স্বর্ণ পরিক্ষার জন্য এসিডের লাইসেন্স না থাকা ও সচেতনতার অভাবে বাড়ছে এসিড সন্ত্রাস। থেমে নেই সোনা বন্দকী অবৈধ চড়া সুদের কারবার। স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে স্বর্ণ চোরাচালানী বেড়েই চলেছে বলে বিমানবন্দরে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ব্যবসায়ীদের দাবী-এমন টানা দাম উঠানামা অব্যাহত থাকায় এই দামি ধাতুটি চোরাচালানী হয়। স্বর্ণের পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে বাড়ছে রুপা ও প্লাটিনামের ধাতুটিও। গত এক সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম অনেকটা বেড়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মার্কেটে স্বর্ণের দোকান বা জুয়েলারীতে ব্যবসায়ীরা সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামত জমজমাট কারবার করছে। সেই সাথে স্বর্ণ পরিক্ষা করার জন্য অবৈধ ভাবে এসিড ব্যবহার করছে, বেশিরভাগ জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের এসিড ব্যবহারিক লাইসেন্স নেই আর সচেতনতার অভাবে এসিড সন্ত্রাসের মতো ঘটনা ঘটছে, এসিড নিক্ষেপ করে অনেক মানুষের জীবন ধ্বংস করেছে এসিড সন্ত্রাসীরা।
উল্লেখ্য গত ০২/০১২/২০২০ইং রাত ১০ টা ৫মিনিটের দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়ার জামগড়া শিমুলতলা নামক স্থানে স্থানীয় রোমান ভুইয়া’র মসজিদের পাশের্ব রাস্তার উপর পৌছাইলে মোছাঃ রিমা আকতার (১৯), এর শরীর লক্ষ্য করিয়া এসিড নিক্ষেপ করায় তার মুখে ও শরীরে লাগিয়া মুখমন্ডলসহ বিভিন্ন স্থানে তার ঝলসিয়া গিয়েছে। স্থানীয়রা তার গুরুত্বর জখম ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে জামগড়া বেরণ সরকার মার্কেট আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন, এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এসময় এসিড নিক্ষেপকারী মোঃ রঞ্জু (৩২) কে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন স্থানীয়রা। এসিড নিক্ষেপকারী রঞ্জু জামালপুর মেলান্দহ গ্রামের মৃত ছামাদ মিয়ার ছেলে। এরকম অনেক ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।
অন্যদিকে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলা চরফ্যাশন থানার সালমা আক্তার মুন্নি (১৮), এক কলেজ ছাত্রীর উপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়। এ ব্যাপারে চরফ্যাশন থানায় মামলা হয়েছে। সারাদেশে এরকম অনেক এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। সূত্র জানায়, ‘এই এসিড সংগ্রহ করা হচ্ছে স্বর্ণের দোকান ও ব্যাটারির কারখানা থেকে।’ তথ্যসূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণ পরিক্ষা করতে প্রতিটি স্বর্ণের দোকানে এসিড ব্যবহার করা হয় কিন্তু ব্যবহারিক লাইসেন্স নেই ৯৮% দোকানের। স্বর্ণ ও বিভিন্ন মাদক বিক্রির সাথে স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ অনেকেই জড়িত রয়েছে বলে সূত্র জানায়। অনেকেই জানায, স্বর্ণের ব্যবসার আড়ালে অনেকেই মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক,গত ১৬- ১৭ বছর আগে যাদের লাখ টাকা ছিলো না তারা এখন শত শত কোটি টাকার মালিক।
এসিডের বিষয়ে কোনো ব্যবসায়ী মুখখুলছেন না, তবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশে স্বর্ণ শিল্পী হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেন। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও বৃদ্ধি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দায়িত্বশীলরা। এর আগে উক্ত বিষয়ে বাজুস সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম উঠানামা অব্যাহত আছে আমরা দেখছি, গত কয়েক দিন ধরে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম উচ্চমুখী। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববাজারে দাম কমার এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আমরা স্বর্ণের দাম কমাবো কিভাবে।
তথ্যমতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভালো মানের অর্থাৎ ২২ক্যারেট ৯১৬ প্রতি ভরি (১১দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ২১ ক্যারেট স্বর্ণ ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা বিক্রি করা হচ্ছে, কোনো জায়গায় আবার কিছু কম বা বেশি দামে সোনার অলংকার বিক্রি করা হচ্ছে। ৬ রতিতে ১ আনা, ১৬ আনা=৯৬ রতিতে এক ভরি হিসেবে স্বর্ণ ওজন করে বা গ্রাম এর মাপে তা বিক্রি করা হয়।
স্বর্ণ চোরাচালানী কিভাবে হয় মুন্সীগঞ্জের শরীফুল ইসলাম শরীফ জানায়, স্বর্ণের বিস্কুটসহ বিভিন্ন রকমের সোনা চোরাচালানী হয়, তিনি একবার ১০ ভরির ১০টি বার বিস্কুটসহ ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হয়েছিলেন, বর্তমানে জামিনে বাহিরে আছেন। তিনি জানান, প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ চোরাচালানী হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নয়। এদিকে স্বর্ণ ও মাদকের ব্যবসাসহ অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। তদন্ত করলে কেঁচো খুঁজতে সাপের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে অনেকেই জানান।