January 29, 2025, 2:45 am
আরিফ রব্বানী,
নিজস্ব প্রতিবেদক
ময়মনসিংহের হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (র.)-এর মাজারে ওরস উপলক্ষে তোরণ বানানো হয়েছে। রোববার সদর উপজেলার পাথালিয়া গ্রামের আউলিয়া বাজারে ময়মনসিংহের হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (র.)-এর মাজারে ওরস উপলক্ষে তোরণ বানানো হয়েছে।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ১২ নং ভাবখালী ইউনিয়নের চকবন পাথালিয়া গ্রামের আউলিয়া বাজারে হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (র.)-এর মাজারের বার্ষিক ওরস মাহফিলকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনাসহ ভক্ত আশেকানদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ৫০ বছর ধরে ৩দিন ব্যাপী এই মাঝারটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলেও এবছর স্থাবীয় মুসল্লীদের তোপের মুখে মাজারের ৫০তম ওরস অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।ইতিমধ্যে গত শুক্রবার ওরসে গান,বাজনা,গাজার আসর বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেছে
স্থানীয় মুসল্লিদের একটি পক্ষ। তারা ওরশের আয়োজন প্রতিহতের ঘোষণা ও থানায় অভিযোগ দিয়েছে। এর মধ্যেই চলছে তিন দিনব্যাপী ওরস উদ্যাপনের প্রস্তুতি।
সুত্র মতে-ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নের চকবন পাথালিয়া গ্রামের আউলিয়া বাজারে হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (র.)-এর মাজারে ওই ওরসের আয়োজন চলছে। প্রতিবারই নিয়মিত তিনব্যাপী ওরশ মাহফিল হয়। এবারও এখানে ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫০তম বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় কিছু কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামেরা
ওরসের নামে বিদাত ও শিরক করা হয় বলে দাবি করে মাজারের লোকজনকে গিয়ে ওরস বন্ধ করার দাবি জানান। এ সময় মাজারের লোকজন তাঁদের কাছে গান–বাজনা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে স্থানীয় ভাবখালী বাজারে ইত্তেফাকুল উলামা ও ভাবখালী ঐক্য উলামা পরিষদের ব্যানারে গত শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন করেন মুসল্লিরা। ওরশ বন্ধের দাবিতে তাঁরা থানায় একটি আবেদনও করেন।
রবিবার বিকাল ৪টার দিকে মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাশের জমিতে দোকানপাট ও নাগরদোলা বসানোর প্রস্তুতি চলছে। মাজারের সামনে বড় একটি তোরণ করা হয়েছে। মাজারের কিছু স্থানে রং করাও হয়েছে। মাজারের ভেতরে কোরআন তিলাওয়াত করছেন একজন ভক্ত। মাজারের পাশে জামে মসজিদ এবং সামনে একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা।
ঢাকা থেকে আসা একজন ভক্ত বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই মাজারের মাহফিলে আসি; কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতি আর কখনো হয়নি। এখানে অন্যায় কিছু হয় না। কিন্তু অহেতুক ওরশ বন্ধের দাবি করছে একটি পক্ষ।’
মাজার কমিটির সদস্য স্থানীয় মনির উদ্দিন জানান, ওরশ উদ্যাপনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ৫ জানুয়ারি লিখিতভাবে আবেদন করা হয়। এত বছর ওরশ উদ্যাপনে কোনো বাধা আসেনি; কিন্তু এবার স্থানীয় কয়েকজন হুজুর এটি বন্ধ রাখতে বলছেন। মাজার ভাঙার হুমকি দিচ্ছেন। এরপরও তাঁরা যেকোনো মূল্যে ওরশ করবেন বলেও জানান।
মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ফকির সাংবাদিকদের বলেন, ‘৫০ বছর ধরে ওরসটি চলছে। দেশজুড়ে ওরশ হলেও আমাদের নিরীহ পেয়ে ওরশ বন্ধের পাঁয়তারা করছেন হুজুররা।’
উত্তেজনার মধ্যে রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান। মাজার কমিটির লোকজন এবং ইত্তেফাকুল উলামার লোকজন ওই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকে ওরশের নামে বাজার, গান–বাজনা ও অশ্লীলতা হবে না বলে আশ্বাস দেন মাজারের লোকজন।
ইত্তেফাকুল উলামার ভাবখালী ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, মাজারের ওরশের নামে সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। সেখানে মাদক, জুয়া ও গান–বাজনা হোক তাঁরা চান না। স্থানীয়ভাবে প্রথমে তাঁদের বোঝানোর পর প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। পুলিশ জানিয়েছে, কোনা গান–বাজনা, অশ্লীলতা চলবে না। কোনো দোকানপাট বসবে না। শুধু জিকির ও কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবে। যদি এর ব্যত্যয় হয় বিষয়টি প্রশাসন দেখবে।
এদিকে সোমবার (২৭জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে মাজার বন্ধের পায়তারার প্রতিবাদ জানিয়েছে মাজার ভক্ত আশেকানরা।প্রতিবাদ বক্তব্যে তারা বলেন শাহ নেওয়াজ আলী ফকির ভাবখালী ইউনিয়নের গর্ব। মাজার ভাবখালী ইউনিয়নের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য গত ৪৯ বছর ধরে চলছে, কারো কোন সমস্যা হয়নি,হঠাৎ কিছু উগ্রবাদীরা আমাদের এলাকার এই ঐতিহ্যকে ধ্বংশ করতে ওরশ মাহফিল বানচাল ও মাজার ভাংচুর লুটপাট করার পায়তারা চলছে অভিযোগ করে উগ্রবাদী ও ষড়যন্ত্রকারীদের হুমকি রুখে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুতে সকলের প্রতি আহবান জানান। দুপক্ষের এই পাল্টা পাল্টি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে টান-টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা বলছেন- হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (র.) ভাবখালী ইউনিয়নের একজন খ্যাতনামা ধার্মিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি আধ্যাত্মিক শিক্ষায় দীক্ষিত ছিলেন। অনেকেই মনের ইচ্ছা পুরণে তার মাজারে মানত থাকেন। প্রতিবছর এসব মানত নিয়ে অনেক ভক্ত আশেকানরা মাজারে আসেন। ছোট-বড় মানুষের আগমনে গণজামায়েত হওয়ার কারণে বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে দোকান বসানোর ফলে মেলার আয়োজন হয়।রং বেরং এর আয়োজনে বর্তমানে এটি একটি বিনোদনের অংশ হিসাবে পরিণত হয়ে পড়েছে। এটা একটা ঐতিহ্য, যা গত ৪৯ বছর ধরে চলছে। মাজারে মসজিদ রয়েছে। সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করা হয়। এখানে কোন গাঁজার আড্ডা,অসামাজিক বা অবৈধ কার্যক্রম কেহ করেনা,করার চেষ্টা করলেও স্থানীয়রা তা দমন করে। নামাজের সময় এসব বিনোদনমোলক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকে। বিগত দিনে মাজারের এসব বিনোদনে কারো কোন সমস্যা হয়নি। হঠাৎ আওয়ামী সরকারের পতনের পর কিছু উলামায়ে কেমরাগণ মাজার বন্ধ করতে উঠে পরে লেগেছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন বিগত দিনেও আলেম ওলামারা ছিলো,তারা কখনো এবিষয়ে কোন প্রতিবাদ করেন নি বরং ইউনিয়নের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সকলে মিলে মিশে এটি পরিচালনা করা হয়েছে। তবে এবার কেনো মাজার বন্ধ করতে এত তৎপরতা চালানো হচ্ছে? এমন প্রশ্ন সমালোচনা চলছে বিভিন্ন পেশাশ্রেণীর মানুষের মাঝে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান জানান, ওরস ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলে দুই পক্ষকে নিয়ে রবিবার থানায় আলোচনা হয়। গান–বাজনা, জুয়া না হলে হুজুরদের কোনো আপত্তি নেই। গান–বাজনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ করবে না বলে মাজারের লোকজন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের নজরদারি থাকবে বলেও জানান তিনি।
তবে গত ৪৯ বছরে এমন পরিস্থিতি কখনো হয়নি, এবার ওরশকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা মোখর পরিস্থিতি মাজারের ভক্ত আশেকানদের মাঝে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে এমনটাও দাবী উঠেছে স্থানীয় মহলের মাঝে।