মাদারীপুরে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য কামালকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে ভূক্তভূগীরা

মোঃ মোঃমিজনুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
মাদারীপুরে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য কামাল মাতুব্বার মানবপাচারের মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে ভূক্তভূগীরা গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।

বৃহস্পতিবার ( ২৩ জানুয়ারী) বেলা ১২ ঘটিকার সময় অভিযুক্ত কামাল মাতুব্বার মাদারীপুর জেলা জজ আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত কামাল মাতুব্বার ডাসার উপজেলার পূর্ব কমলাপুর গ্রামের কাদের মাতবরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মানবপাচারের অর্ধশত মানুষের অভিযোগ রয়েছে। মানবপাচারের ঘটনায় কামাল মাতুব্বারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বর্তমানে তদন্ত করছে সি আই ডির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

এবিষয়ে মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার উত্তর খিলগ্রামের বাসিন্দা রাজিব মাতবর, নিজাম সরদার, তাইফুল ইসলাম, তারেক মাতুব্বার সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্ত কামাল মাতুব্বার তাদেরকে সরাসরি ইতালী নেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা করে নিয়েছে।

তাদের চুক্তি মোতাবেক টাকা দিলেও গত মার্চ মাসে ইতালীর পরিবর্তে সবাইকে নেয়া হয় লিবিয়ায়। সেখানে এই যুবকদের বিক্রি করে দেয়া হয় মাফিয়াদের কাছে। নির্যাতন করে প্রত্যেকের পরিবার থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপনণের লাখ লাখ টাকা।

লিবিয়ায় বন্দিদের মুক্তির জন্য ভূক্তভূগী পরিবার কয়েক দফায় টাকা দিয়ে কারো মুক্তি হলেও অনেকের খোঁজ পাচ্ছে না তাদের স্বজনরা। এঘটনায় অভিযুক্ত মাফিয়া চক্রের সদস্য কামাল মাতুব্বারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য পূর্ব কমলাপুর এলাকার কামাল মাতুব্বার অল্প খরচে যুবকদের ইতালিতে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। একদিকে মাফিয়া চক্রের দাবিকৃত মুক্তি পনের লাখ লাখ টাকা ধারদেনা করে দিয়ে দিশেহারা ভুক্তভোগী পরিবার।

অন্যদিকে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে পাগল হয়ে দারে দারে ঘুরছে স্বজনরা। পরে কোথাও কোন সমাধান না পেয়ে বাধ্য হয়ে ডাসার থানা ও বিজ্ঞ আদালতে একাধিক মামলা করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এ মামলায় হাজিরা দিতে বৃহস্পতিবার সকালে লোকজন নিয়ে আদালতে আসেন, এসময় প্রধান অভিযুক্ত কামাল মাতুব্বার কে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন।

এবিষয়ে ভুক্তভোগী রাজিব মাতুব্বার বলেন, পূর্ব কমলাপুর এলাকার কামাল মাতুব্বার আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে ইতালী নেয়ার কথা বলে। কামালের দুই ছেলে ইতালী থাকে, এজন্য আমি তার প্রলোভনে পড়ে যায়। কিন্তু ইতালীর পরিবর্তে কামাল আমাদের লিবিয়া নিয়ে বন্দিশালায় আটকে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

পরে মাফিয়ারা আমাদের অমানবিক নির্যাতন করে লাখ লাখ আদায় করে কামাল ও তার চক্রের সদস্যরা। একপর্যায়ে একটি ছোটনৌকায় করে লিবিয়া থেকে ইতালী পাঠালে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ৬ মাস জেলখানায় ছিলাম। সেখান থেকে বাংলাদেশ সরকার আমাকে ফেরত আনে। আমি ও আমার পরিবার এখন পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছি। এ ঘটনার বিচার চাই।’

আরেক ভুক্তভোগী তাইফুল মাতুবরের মা অফিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়া নেয়। পরে সেখানে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয় কামাল। প্রথমে ইতালী পাঠানোর জন্য কামাল দালালকে ৩০ লাখ টাকা দেয়। পরে মাফিয়াদের ২০ লাখ টাকা দেই। এখন আমার ছেলের কোনো সন্ধান পাচ্ছি না।

তারেক মাতুবর বলেন, ‘মার্চ মাসের ২৪ তারিখ মাফিয়া কামাল আমাদের প্রথমে দুবাই নেয়। পরে সেখান থেকে লিবিয়া নিয়ে একটি রুমে আটকিয়ে রাখে। সেখানে আমাকে ৫ মাস বন্দি করে রাখে ছোট্ট একটি রুমে। ঠিক মতো খাবারও দেয় নাই। মাফিয়ারা মারধর করে আমাদের পরিবারকে ফোন দিয়ে নির্মম নির্যাতনের শব্দ শোনায়। পরে বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন মুক্তিপণের টাকা দেয়। আমি ভাগ্যক্রমে কোনোমতে দেশে ফিরে এসেছি। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

অভিযুক্ত কামাল মাতবরের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব অর্ধশত পরিবার। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন। বলেন, কামাল মাতুব্বারের বিরুদ্ধে ডাসার থানায় মামলা হয়েছে। সেই মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তধীন রয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়েছে, তার কাছে আসামিকে হস্তান্তর করা হবে। তিনিই কামালের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *