January 15, 2025, 5:03 pm
সাইফুল ইসলাম জয় (হেলাল শেখ)ঃ হাই কোর্টের নির্দেশ না মেনে অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ দূষণ ও ফসলি জমি নষ্ট করছে, অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব ভুমিকায় রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার প্রধান শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পাশে রাঙ্গামাটি এলাকা ও ধামরাইয়ে শতাধিক ইটভাটা স্থাপন করে ফসলি জমি নষ্ট করে অবৈধ ভাবে ইট তৈরি করছে এবং পরিবেশ দূষণ করার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
বুধবার ( ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ইং) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়ার দক্ষিণ শিমুলিয়ায় ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রফিক ব্রিকস এন্ড কোং, মেসার্স শওকত ব্রিকস এন্ড কোং, চালাপাড়া মেসার্স হাবিবুর ব্রিকস এন্ড কোং, দক্ষিণ শিমুলিয়া মেসার্স বছির ব্রিকস এন্ড কোং, গোহাইলবাড়ী নিউ ব্রিকস ম্যানুফ্যাক্সারিং কোম্পানি, গনকপাড়া (ভাটিয়াকান্দি) মেসার্স গাজী ব্রিকস, টেংগুরী ইউনিয়ন ব্রিকস ম্যানোফ্যাক্সারিং কোম্পানি, রাঙ্গামাটি ক্লাস ব্রিকস এন্ড সিরামিক লিঃ। এসব ইটভাটার মধ্যে একটিমাত্র ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
জানা গেছে, হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করে অবৈধভাবে ইট তৈরি করছে, কিছু ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে ফলের গাছসহ বিভিন্ন গাছ। ফলের গাছের কাঠ পোড়ানোর কারণে কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এর আগে সাভারে ৬টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট উইং। তার আগে সাভার উপজেলার নামাগেন্ডা ও বিরুলিয়া এলাকায় বায়ু দুষণকারী এসব ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। সেসময় অভিযানের সময় বায়ু দুষণের অপরাধে সাভার পৌরসভা এলাকার নামাগেন্ডা মহল্লার মেসার্স কর্ণফুলী ব্রিকসকে ৫ লাখ, মেসার্স এখলাছ ব্রিকসকে ২০ লাখ, মেসার্স মধুমতি ব্রিকসকে ৫ লাখ, ফিরোজ ব্রিকসকে ৬ লাখ, বিরুলিয়া সাদুল্লাহপুর এলাকার মেসার্স মাহিন ব্রিকসকে ২০ লাখ ও রিপন ব্রিকসকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখতে সেগুলো ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানা কার্যক্রম পরিচালনা করায় মধুমতি কেমিক্যালস এবং একটি টায়ার পুড়ানোকারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে অনেক ইটভাটা বন্ধ থাকলেও অনেকেই ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার সড়কের পাশে ফসলি জমিতে ইটভাটা করে আবার অন্য ফসলি জমির মাটি কেটে জমি নষ্ট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীবসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেন, হাইকোর্টের রীট পিটিশন নাম্বার ৯১৬/২০১৯ এর প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী বায়ু দুষণ রোধে অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটা এবং প্রতিষ্ঠানসমুহ বন্ধ করার লক্ষ্যে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। মূলত এসব এলাকায় জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স এবং মাটি কাটার লাইসেন্স না থাকায় ভাটাগুলোতে অভিযান চালানো হয়। তারা আরও বলেন, এ ধরণের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, শুধু একটি এলাকায় অভিযান চালানো হলেও অন্যসব এলাকায় অবাধে চলছে অবৈধ ইটভাটার মাটি কাটা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ও ধামরাইয়ে ইটভাটাগুলোতে ইট পোড়ানো অবাধে চলছে। জানা গেছে, পরিবেশ ও ফসলি জমি রক্ষায় সম্প্রতি এ বিষয়ে হাই কোর্ট নিষিদ্ধ করে ঢাকার আশপাশের ইটভাটা কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশের পরও অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেছে প্রভাবশালী মালিকরা। আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই ইটভাটা চালাচ্ছে তারা। এসব অবৈধ ইটভাটা পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। অল্প উচ্চতার ড্রাম-সিটের চিমনির ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হয় বলে বেশি উচ্চতার ইটভাটার চিমনি বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। সরকারের এই আদেশ মানছেন না ইটভাটার বেশিরভাগ মালিক।
রাজধানী ঢাকার আশপাশের এলাকা সাভার আশুলিয়া, ধামরাই, মানিকগঞ্জ ও অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে বেশিরভাগ এলাকায় জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতিত, ইটভাটাগুলোতে ইট প্রস্তুত করছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কৃষি জমিতে গড়ে উঠা ইটভাটার কারণে পরিবেশ চরমভাবে দূষিত হচ্ছে। এতে একদিকে কৃষকদের জমি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে আম গাছ, কাঁঠাল গাছসহ বেশিরভাগ ফলের গাছ নষ্ট করে কাঠ পুড়ানোর কারণে কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ইটভাটার আশপাশে কৃষকের কৃষি জমিতে ফসল ও ফলের গাছ নষ্ট হচ্ছে। এসব ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন জেলা প্রশাসক।
বিশেষ করে পরিবেশ আইন-১৪৫ পাতায় “ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩” (গ) জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতীত, ইট প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে মজা পুকুর বা খাল বা বিল বা খাঁড়ি বা দিঘি বা নদ-নদী বা হাওড়-বাওড় বা চরাঞ্চল বা পতিত জায়গা হইতে মাটি কাটা বা সংগ্রহ করা যাইবে না। (ঘ) ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে নির্ধারিত মানমাত্রার অতিরিক্ত সালফার,অ্যাশ, মারকারি বা অনুরূপ উপাদান সংবলিত কয়লা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যাইবে না। এরপর (ঙ) (১) আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, (২) সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, (৩) কৃষি জমি। (৪) পার্বত্য জেলায় ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে, পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কতর্ৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। (৫) বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হইতে কমপক্ষে ১ (এক) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে হতে হবে। অঙ্গীকার নামাঃ ১৪৪ পাতায় ৪। শর্তাবলিঃ (ক) ইটভাটায় কোনো অবস্থাতেই কোনো প্রকার জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাইবে না। (খ) লাইসেন্সের কোনো শর্ত লঙ্ঘন বা প্রতিপালন করা হইতেছে কিনা, অথবা আইনের অধীন শাস্তিযোগ্য কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে বা হইতেছে কিনা উহা তদারকির জন্য জেলা প্রশাসক স্বয়ং বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জেলা কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বা তাদের মনোনীত কোনো বন কর্মকর্তা (ফরেস্টার পদের নিম্নে নহে), তারা যেকোনো সময় বিনা নোটিশে ইটভাটায় প্রবেশ ও ভাটা পরিদর্শন করতে পারেন। যে কোনো ইটভাটার মালিক বা ব্যক্তিকে রিমান্ডে বা যে কোনো দলিলাদি তলব করিতে পারেন। আইনে আরও অনেক নিয়ম রয়েছে। জানা গেছে, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর বিভাগ ও ঢাকা বিভাগসহ দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে প্রায় বেশিরভাগ এলাকায় জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতিত অনেক ইট ভাটায় ইট তৈরি করে পুড়ানো হয়। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অভিযান শুরু করে, এরপরও পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়নি অবৈধ ইটভাটা। ঢাকা জেলার ধামরাই, সাভার আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে উক্ত ব্যাপারে সত্যতা পাওয়া গেছে। উক্ত ইটভাটার বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়ার ১নং শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ চাঁন মিয়া বলেন, ৯টি ইটভাটার মধ্যে এই ইউনিয়নের ১টি ইটভাটা বৈধ রয়েছে। সূত্র জানায়, এরকম অবৈধ ইটভাটার কোনো হিসাব নাই। পর্ব-১।