January 15, 2025, 6:03 pm
কে এম সোয়েব জুয়েল,
বরিশালের গৌরনদীতে ৪০০০ চার হাজার একর জমির সেচ প্রকল্প বন্ধ করে দেয়ার হুমকিতে হতাশায় দিন পাড় করছে স্থানীয় কৃষকরা। গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের সাতটি ও বাটাজোর ইউনিয়নের পাঁচটি বোরো প্রকল্পের সেচ বন্ধ করে দেওয়ার অব্যাহত হুমকির মুখে দুই ইউনিয়নে ১২টি বোরো প্রকল্পের তিন হাজার কৃষকের চার হাজার একর জমিতে বোরোর আবাদ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় হিমসিম খাচ্ছে সেচ প্রকল্পের মালিক মোঃ ছানাউল হক মৃধা
ছানাউল হক জানায়, দীর্ঘ ১২ বছর যাবত তার (ছানাউল) বাবার ফুপাতো ভাইর ছেলে নলচিড়া ইউনিয়নের স্হানীয় মোঃ মাসুদ মীর বিএডিসি থেকে সেজ প্রকল্প বরাদ্দ নেন কিন্তুু বর্তমান সময় আর্থিক সমস্যার কারনে তার (মাসুদ) আত্বিয় বাটাজোর ইউনিয়নের বাসুদেব পাড়ার ছানাউলকে সেচ প্রকল্প চালানোর জন্য প্রয়োজনিয় কাগজ পত্র হস্তান্তর করেন প্রকল্পের মালিক মাসুদ। প্রকল্পের ২৭ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ ছাড়া ছানাউল প্রকল্প চালু করতে প্রয়োজনীয় বৈদ্যতিক সামগ্রিক বাবদ আরো দের লক্ষাধিক টাকা খরচ করে গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের হোসনাবাদ উত্তর সীমানায় আড়িয়াল খাঁর শাখা নদী পালরদী নদীর স্টিমারঘাট এলাকায় সেচপাম্প বসিয়ে প্রাইমারি প্রকল্পের মাধ্যমে নলচিড়া খাল ও বাটাজোর ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া খালে সেচ প্রকল্প গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার চালু করেন বাটাজোর ইউনিয়নের বাসুদেবপারা গ্রামের কাঞ্চন আলী মৃধার পুত্র ছানাউল হক মৃধা। অপরদিকে বাছার গ্রামের আব্দুল হামিদ সরদারের পুত্র মোঃ জাকির সরদার বিএডিসি থেকে সদ্য প্রকল্পটি বরাদ্দ নিলেও সেখানে সেজ প্রকল্প চালনোর মত সরকারের বেঁধে দেয়া নিতিমালার কোন ব্যাবস্হা লক্ষ করা যায়নি । ফলে জাকিরের ভাই আনোয়ার সরদারের বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ সম্পুন্ন ভিত্তিহীন বলে প্রতিয়মান হওয়ার দৃশ্য লক্ষ করা গেছে।
প্রকল্পটি তদারকি করেন তার বড় ভাই মোঃ আনোয়ার হোসেন। আনোয়ারের অভিযোগ, গত ২ জানুয়ারি তিনি সেচপাম্প বসিয়ে প্রাইমারি প্রকল্প থেকে সেকেন্ডারি ১২টি প্রকল্পে সেচ দিয়ে পানি সরবারহ শুরু করেন। এ সময় উপজেলার বাসুদেবপাড়া গ্রামের কাঞ্চন মৃধার ছেলে মোঃ সানাউল মৃধা ও শংকরপাশা গ্রামের কালাম খানের ছেলে মামুন খানের নেতৃত্বে সাত-আটজন সন্ত্রাসী এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় সেচপাম্প বন্ধসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়।
সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে গত ৫ জানুয়ারি পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করলে বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাকি টাকা না দেওয়ায় পাম্প বন্ধ করে দেয় এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। সন্ত্রাসী সানাউল চলে যাওয়ার সময় তাদের নির্দেশ ছাড়া সেচযন্ত্র চালু করলে হত্যার হুমকি দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের একাধিক ব্যবস্থাপক বলেন, বোরোর চলতি মৌসুমে জমিতে পানি সরবারহ শুরু হলে আমরা জমি প্রস্তুত করি। কিন্তু হঠাৎ পানি সরবারহ বন্ধ হওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।
মোঃ রুস্তুম সরদার, সান্টু খলিফা, নজরুল খলিফাসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, গুটিকয়েক চাঁদাবাজদের জন্য কয়েক হাজার কৃষক জমিতে সেচ দিতে পারছে না। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মো. সানাউল মৃধা বলেন, ‘আগের সেচ প্রকল্পের মালিকের কাছ থেকে আমি লিখিতভাবে প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি। সেই প্রকল্প জাকির হোসেন দখল করতে চান বলে আমি তাতে বাধা দিয়েছি।
চাঁদা দাবির অভিযোগ সঠিক নয়।’ তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সরকারি নদীর পানি তুলে যে কেউ সেচ দিতে পারে। সেখানে কেউ প্রকল্প ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে প্রকল্প চালু করেছি।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেকেন্দার শেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, এ ঘটনায় প্রাইমারি সেচ প্রকল্পের তদারককারী মোঃ আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গত শুক্রবার ১০ জনকে আসামি করে গৌরনদী থানায় মামলা দাখিল করেছে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত পুর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।