বেনাপোল সীমান্তে প্রতারনার শিকার পাসপোর্টধারীর মৃত্যু,অসহায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনী

আজিজুল ইসলামঃ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতে সব নিরাপত্তা ব্যবস্থার নজর এড়িয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারনাকারীর কবলে পড়ে অর্থ খুইয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন পাসপোর্টধারীরা। এবার প্রতারনার কবলে অর্থ হারিয়ে চিকিৎসা করাতে না পেরে দুঃচিন্তায় জীবন হারিয়েছেন অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ঢাকার মনোজ কুমার। দির্ঘদিন ধরে চিহ্নিত চক্রটি পাসপোর্টধারীদের সাথে প্রতারনা চালিয়ে আসলেও তাদের কাছে যেন অসহায় সীমান্তের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ আটকিয়ে জেল হাজতে পাঠালেও বারবার ছাড়া পেয়ে প্রতারনার ফিরছে এসব অপরাধীরা।

সবশেষ গত ২১ ডিসেম্বর ভারতে যাওয়ার সময় এ চক্রটির প্রতারনার শিকার হয় ঢাকা কদমতলীর সারই মসজিদ রোড ধানিয়া এলাকার অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মনোজ কুমার। মেয়ে অবন্তি করকে সাথে নিয়ে গত শনিবার চিকিৎসার জন্য বেনাপোল বন্দরে এসেছিলেন। এসময় চিহ্নিত ৫ ছিনতাইকারী পরিবহন স্টাফ পরিচয়ে ইমিগ্রেশন সংলগ্ন ওয়ান ব্যংকের এটিএম বুথের পাশে নিয়ে জিম্মি করে। পরে মেয়েকে প্রাণ নাশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ৩৫ হাজার টাকা। এ ঘটনায় মনোজ কুমারের মেয়ে অবন্তি করের দায়েরকৃত এজাহারে ঐ দিন পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামের গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে শোয়েব আক্তার ও

জাবের শেখের ছেলে শেখ রাহাদ অন্তর ও ইউসুফ আলীর ছেলে আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করে। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ছিনিয়ে নেওয়া টাকার মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার। এ মামলায় এজাহারনামীয় ৫ জন ও অজ্ঞাতনামা ৭থেকে ৮ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের হয়। তবে ছিনতাইকৃত টাকা সব ফেরত না পাওয়ায় ভারতে চিকিৎসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এ শিক্ষকের। এ অবস্থায় দুঃচিন্তায় পড়ে হৃদ ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঘটনার ২ দিন পর ২৪ ডিসেম্বর কলকাতায় মারা যায় মনোজ কুমার। ২৬ ডিসেম্বর বাবার মরদেহ নিয়ে দেশে ফিরে চেকপোষ্ট এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানান ভুক্তভোগী অবন্তি কর।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যে জানা যায়, বেনাপোল চেকপোষ্ট বন্দর এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের মধ্যে আলোচিতরা রয়েছে, পোর্টথানার বড়আঁচড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে বাবু, শাহাজামালের ছেলে মারুফ,ছোটআঁচড়া গ্রামের দাউদ হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম হোসেন সাগর, সাদিপুর গ্রামের হারুনের ছেলে এবাদত। এছাড়া বেনাপোল চেকপোষ্টে চৌধুরী সুপার মার্কেটের রবি,সাইদুর সুপার মার্কেটের বাবুল,রেজাউল সুপার মার্কেটের হামিদ,ইউনুস সুপার মার্কেটে বরিশালের শামীম,রবি, হৃদয়,শিমুল, ইমরান ও মারুফ পেশাদার ছিনতাইকারী ।

জানা যায়, দেশের গুরুত্বপুর্ণ এলাকা এবং রাষ্ট্রের ভারত গমনের প্রধান ফটক বেনাপোল চেকপোষ্ট। এই পথে প্রতিদিনি ৫ থেকে ৭ হাজার দেশী বিদেশী লোক যাতায়াত করে থাকে। আর ওইসব যাত্রীদের এক শ্রেনীর ছিনতাইকারী লাইনের আগে অনলাইন ট্যাক্স, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হবে না এসব প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসে তাদের নির্দিষ্ট ঘরে। তারপর অনলাইন ফর্মপূরণ এবং টাকার নাম্বার লিখতে হবে, না লিখলে কাস্টমস আটক করবে বলে নানা ভাবে দুর দুরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের বুঝিয়ে তাদের কাছে থাকা টাকা গুনতে গুনতে পাসপোর্ট যাত্রীর অগোচরে ফেলে দেয় টেবিলের নীচে। এভাবে প্রতিনয়ত সাধারন এসব যাত্রীদের টাকা ছিনতাই করছে এই চক্রগুলো।

দিনে দুপুরে এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বন্দর প্যাছেঞ্জার টার্মিনালের ইনচার্জ আব্দুল হাফিজ জানান, পাসপোর্টধারী মনোজ কুমারের মহদেহ দেশে ফেরত এসেছে নিশ্চিত করে জানান, বাবার মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মেয়ে। প্রতারনাকারীরা দির্ঘদিন ঘরে চেকপোষ্ট এলাকায় প্রতারনা চালিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে পাসপোর্টধারীদের সতর্ক করা হলেও তারা ফাঁদে পড়ছেন।

বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশের উপপরিদর্শক(এসআই) রাশেদুজ্জামান জানান জানান, ঐ পাসপোর্টধারীর সাথে প্রতারনা করে যারা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল তাদের ৩ জনকে ঐদিন গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রতারনা প্রতিরোধে সবার সহযোগীতা প্রয়োজন জানিয়ে বলেন, পাসপোর্টধারীদেরও সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশ এ চক্রের অনেককে গ্রেফতার করেছেন এবং প্রতারনাকারীদের আস্তানায় তালাও ঝুলিয়েছে।

ভারতগামী পাসপোর্টধারী নজরুল ইসলাম জানান, পাসপোর্টধারীদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বন্দর এলাকায় পুলিশ,বিজিবি,আনসার ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থ্যা কাজ করছে। এত নিরাপত্তার মধ্যে একটি চক্র প্রতিদিন পাসপোর্টধারীদের সাথে প্রতারনা চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা দুঃখজনক।

বেনাপোল চেকপোষ্ট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মশিয়ার রহমান জানান, সীমান্তে বিভিন্ন পরিচয়ে ছিনতাইকারীরা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছিনতাইয়ের ঘটনা চালাচ্ছে। যা বেনাপোল বন্দর এলাকার ভাবমূর্তীও ক্ষুন্ন করছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছে প্রশাসনিক নিরাপত্তা বাড়ানোর আহবান জানানো হয়েছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *