যমুনার চর কেটে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ- ভেকু ও ট্রাকসহ পাইপ ভাঙচুর

আল আমিন শোভন
টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি।।

শুকনো মৌসুমে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকদের রোপন করা ফসলি জমির বালুমাটি অবৈধভাবে কেটে তা বিক্রির মহোৎসবে মেতে উঠেছে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী। এসব বালুমাটি রাতের আঁধারে প্রশাসনের আড়ালে ট্রাকযোগ অবাধে বিক্রি করছেন তারা। ফলে স্থানীয় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে উপজেলার বলরামপুর, তারাই ও গারাবাড়ি এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়রা ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের গারাবাড়ী এলাকায় সড়কে আগুন ধরিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এতে করে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ খরব পেয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন এবং পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহিমা বিনতে আখতার ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের তিনিও একই আশ্বাস দেয়।

এরআগে সকালে স্থানীয় লোকজন তারাই স্কুল মাঠে সমবেত হন। পরে সেখান থেকে এলাকাবাসী গারাবাড়ী এলাকায় অবৈধ বালুঘাটে গিয়ে বালু উত্তোলনের বেশ কয়েকটি ভেকু (মাটিকাটার যন্ত্র), একটি ড্রাম ট্রাক ও পাইপ ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। পরে পাইপগুলো মহাসড়কে নিয়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে সুইট, মোজাম্মেল হোসেন ও যুবদল নেতা টিপুর নেতৃত্বে এই বালুঘাটটি পরিচালনা হতো। তাদের একাধিকবার বাধা দিলেও শোনেনি। তারা রাতের আধারে আমাদের ফসলি জমি কেটে অবাধে বালু বিক্রি করে।

এছাড়াও ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের উপজেলার তারাই, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা ও নলিন এলাকার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যমুনা নদীতে বাঁধ দিয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইড ভেঙে গাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরি করে চর কেটে বালু বিক্রি করছে এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব বালুর ঘাট নিয়ন্ত্রণ করছে।

তারাই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক রজমান আলীসহ অনেকে বলেন, যমুনা নদী শুকিয়ে যাওয়ার পর বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে বালু কাটা শুরু হয়েছে। দিন-রাত ভেকু দিয়ে বালু কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করছে। এতে ফসলি জমি কেটে নিচ্ছে তারা। এছাড়া এভাবে নদীর চর কাটায় পাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বর্ষা মৌসুমে।

স্থানীয় সিফাত বলেন, যেভাবে বালু কাটা হচ্ছে তাতে আগামী বন্যায় ঘরবাড়ি ভেঙে যাবে। আমাদের জমিও কেটে নিচ্ছে। বাঁধা দিলেই হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয় বিএনপির নেতারা জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করছে। প্রশসানের কাছে দাবি, বালু উত্তোলন বন্ধে যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি পালন করব।

তারাই এলাকার বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন সুইট বলেন, আমি কিছু বলতে পারব না। অপর বিএনপি নেতা মোজাম্মেল বলেন, স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি উর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয় এবং তাদের মানববন্ধন না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপরও সড়ক অবরোধ এবং ঘাটের ভেকু ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে তারা।

এ ব্যাপারে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম জানান, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর বালু ঘাট বন্ধে আশ্বাস দেওয়ার পর তারা অবরোধ তুলে নেন। বালু উত্তোলনে জড়িতদের বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহিমা বিনতে আখতার জানান, যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি স্থানীয়দের কাছ থেকে। এছাড়া সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *