চাপারহাটে পিঁড়িতে বসে চুল-দাঁড়ি কাঁটে না মানুষ 

মো.হাসমত উল্লাহ,লালমনিরহাট।।

মানুষ স্বভাবগতই সুন্দরের পূজারী।চুল দাড়ি মানুষের সৌন্দর্য বহন করে। এই চুল- দাঁড়ি নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। এই কারণেই ‘নরসুন্দরদের’ কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। চুল-দাঁড়ি কেটে মানুষকে দেখতে সুন্দর করাই যাদের কাজ তারাই হলেন ‘নরসুন্দর’। যারা আমাদের কাছে নাপিত হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় হরিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ফলে আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গতিধারায় এসেছে পরিবর্তন, লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, আধুনিক সভ্যতায় গড়ে উঠেছে আধুনিক মানের সেলুন। কদর বেশি হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন সেই সব সেলুনগুলোর দিকেই। এখনো হাট-বাজারে, গ্রামগঞ্জের পিঁড়িতে বা খাটে বসে চুল-দাঁড়ি কাঁটে ‘নরসুন্দরেরা’ হাঁটুর নিচে মাথা পেতে আবহমান বাংলার মানুষের চুল-দাঁড়ি কাটার রীতি চলে গেছে আসলেও সেই আদি পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। 

হারানোর পথে আবহমান কাল ধরে চলে আসা এই গ্রামীণ ঐতিহ্য।লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা অনেক হাট-বাজারে এখনো মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে চীর চেনা এই দৃশ্য শিমিত । অল্প খরচের কথা মাথায় রেখে এখনো তাঁদের কাছে অনেকেই চুল-দাঁড়ি কাটাতে অনেকে।

কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সতীরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মৃত প্রফুল্ল শীল, বংশ পরিক্রমায় হয়েছেন নরসুন্দর। দীর্ঘ দিন ধরে এ পেশায় ছিলেন । উপজেলার চাপারহাট সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে কাজ করতে তিনি। তার মৃত্যুর পর বাপ-দাদার এ পেশা ধরে রাখার মতো তার বংশে তার  ছেলে প্রদীব কুমার শীল আছে। 

প্রদীব কুমার শীল, জানান,অনেক আগে আমার বাবার চুল কাটা বাবদ দিতে হতো। হাটে বাজারে মানুষের সাথে চলা ফেরার জন্য বাদ দিতে পারে নাই। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বাবা চুল কাটতো ৩টাকা আর দাঁড়ি কাটার জন্য ২ টাকা। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলতো। কিন্তু বর্তমানে ৪০ টাকায় চুল ও ৩০ টাকা দাঁড়ি কেটেও সারা দিন যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করতে আমার হিমশিম খেতে হয়।

হযরত আলী,নামে এক ব্যক্তি জানান,এখনতো উপজেলার হাট বাজারে  অনেক আধুনিক সেলুন আছে।কিন্তু যখনই বাজারে যাই ও-ই চুল কাটা দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়।চিরচেনা পিঁড়িতে বা খাটে বসে চুল-দাঁড়ি কাঁটে ‘নরসুন্দরেরা’ হাঁটুর নিচে মাথা পেতে চুল-দাঁড়ি কাটার এ-ই দৃশ্য ছোটবেলায় স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। আরো জানান,আমরা এখনোm এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও, এমন একটা সময় আসবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই দৃশ্য গল্পই মনে হবে।

হাসমত উল্লাহ ।।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *