নড়াইলের মধুমতী নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা কয়েকশ পরিবার

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নে মধুমতী নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কয়েকশ পরিবার। তীব্র ভাঙ্গনে ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে আবাদি জমি, ভিটেমাটিসহ সহায় সম্পদ। এমনকি ভাঙ্গনে বিদ্যুৎ সরবারাহ লাইনের খুঁটিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন কবলিত এসব এলাকার মানুষেরা প্রতিনিয়ত আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, শনিবার (সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ভাঙ্গনের এই ভয়াবহ চিত্র।
স্থানীয়রা জানান, একাধিকবার মধুমতী নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন ওই এখানকার মানুষ। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড ইউনিয়নের শিয়রবর গ্রামের ভাঙ্গন রোধে জিও ব্যাগ ফেললেও এবার ভাঙ্গনে ভেসে যাচ্ছে সেগুলো। ফলে আবারও ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে কয়েকশ পরিবার। তাই ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই এলাকাবাসী।

স্থানীয় তোতা মিয়া, সাদ্দাম, আলাউদ্দিন, বালাম, চুন্নুমিয়া, আফজাল মোল্যা, হুমায়ুন কবির, আরফিন মোল্যা, ওসমান মুন্সী জানান, মধুমতী নদীর ভাঙ্গনে তাদের বাড়ি বারবার ভেঙ্গে গেছে নদীগর্ভে। নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আবারও নদীর কিনারে চলে এসেছে তাদের বসতভিটা। যেভাবে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তাতে করে বসতভিটা কখন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এবার বাড়ি ভাঙ্গলে মাথা গোঁজার ঠাই থাকবে না তাদের।

ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের তোতা মিয়া জানান, তাদের ৫ বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ৩ বার ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন তিনি। এবারও ভাঙ্গনের দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে। কি করবেন ভেবেই পারছেন না তিনি। তিনি ভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন।

বৃদ্ধ আরফিন মোল্যা জানান, বসতভিটা ছাড়াও তাদের আবাদি জমি, সুপাড়ি বাগান, পুকুরসহ ভাঙ্গনে ৫ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে অন্যের জমিতে বসতঘর তৈরি করে বসবাস করছেন তিনি। সেটিও ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। এরপর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোথায় থাকবেন সে ঠিকানাও নেই তাদের। এ কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন এই বৃদ্ধ। বালাম মোল্যার স্ত্রী তহমিনা জানান, ইতোপূর্বে ২ বার তাদের বসতভিটা নদীগর্ভে ভেঙ্গে গেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আশিকুল আলম জানান, মধুমতী নদীর ভাঙ্গনে বসতবাড়ি, আবাদি জমি,
মাদরাসা, মসজিদ ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নদী গর্ভে পুরো এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। তিনি মধুমতী নদীর ভাঙ্গন রোধে জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল – ২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষেয়ে নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘লোহাগড়া উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের ভাঙ্গনরোধে আপাতত কোন বরাদ্দ নেই, এ কারণে কোনো ধরণের কাজ করতে পারছি না’। তবে বরাদ্দ পেলে আগামীতে ওই এলাকায় ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *