গোদাগাড়ীতে এককই ব্যক্তি কলেজ অধ্যক্ষ, চেয়ারম্যান, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, গ্রহন করেন দুই প্রতিষ্ঠানের বেতনভাতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ২০২১ সালে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তিনি ২০১৬ সালে প্রথমবার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সম্প্রতি তাকে গোদাগাড়ীর প্রেমতলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় অধ্যক্ষ নিয়োগ পেয়ে সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তার বেতনভাতার (এমপিও) সরকারি অংশ চালু হয়েছে। তিনি অধ্যক্ষ পদের বেতনও তুলছেন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে মজিবুর রহমান কলেজ অধ্যক্ষ হিসেবে সরকারি বেতনভাতা যেমন তুলছেন তেমনি একই সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্য বেতন-ভাতা গ্রহণ করছেন। শুধু তাই নয়, তিনি গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগেরও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতেও তিনি নিয়মিত অংশ নেন।

ওই প্রভাবশালী মজিবর রহমান উপজেলার ২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য গোপন করে সভাপতি হিসেবে ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন নিয়ে সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। একটি গোগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, অন্যটি বিড়ইল উচ্চ বিদ্যালয়। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য করেছেন ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পত্রিকায়, অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

শিক্ষা প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক পদটা বাদ দিলেও দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, বিধিমালায় এমন কিছু নেই যে তিনি একই সঙ্গে ২টি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু মজিবুর রহমান বিধিমালা লঙ্ঘন করে তাই করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা, মজিবুর রহমানের বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের বিড়ইল গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত আব্দুল কুদ্দুশ। তবে তিনি রাজশাহী মহানগরীর রানীবাজারে বসবাস করেন। ইতিহাস বিষয়ে থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি করা মজিবুর রহমান বেশ কয়েক বছর আগে নওগাঁর মান্দা উপজেলার একটি কলেজে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ করেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। বরং উপাধ্যক্ষ হিসেবে সরকারি বেতনভাতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বেতনভাতা ভোগ করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপাধ্যক্ষ পদে বহাল থাকলেও তিনি কলেজে যেতেন না।

এদিকে মজিবুর রহমান ২০২১ সালে দ্বিতীয়বার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে ওই কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়োগ লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি দুই জায়গা থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ মজিবুর রহমান কলেজে খুব কম সময় যান এবং অবস্থান করেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করে ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে সরকার নির্ধারিত সময়ে অফিসে অবস্থান করে বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে অন্যান্য সেবা প্রদান, গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ নানা সেবা দিয়ে থাকেন। জনগণ সাধারণত অফিস সময়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের এসব  সেবা নিয়ে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা সহজে এবং যথাসময়ে নিশ্চিতের লক্ষ্যে ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে সরকারিভাবে নির্ধারিত অফিস সময়ে পরিষদ কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো প্রয়োজনে ইউপি চেয়ারম্যানরা নিজ ইউনিয়ন অধিক্ষেত্রের বাইরে অবস্থান করলে বা অফিসে উপস্থিত থাকতে না পারলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বা প্রয়োজনে জেলা প্রশাসককে অবহিত রাখবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল ইসলাম বলেন, মজিবর রহমান একই সঙ্গে একটি ইউপির চেয়ারম্যান ও একটি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন। বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত। চেয়ারম্যান না অধ্যক্ষ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন সে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে বলা হয়েছে। তিনি নিজে সিদ্ধান্ত না নিলে বিধি অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী বলেন, কলেজ অধ্যক্ষের পদটি প্রতিষ্ঠান প্রধান বা প্রশাসনিক একটি পদ। দুই পদে একই সময়ে কারো পক্ষেই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। আর তিনি যদি দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনভাতা নেন সেটা আরও খারাপ। নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, দুই প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন জানতে চাইলে মজিবুর রহমান বলেন, আমি অধ্যক্ষ আমিই চেয়ারম্যান। সকালে কলেজে কাজ করি। পরে ইউনিয়ন পরিষদে কাজ করি। দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনভাতা তোলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আগে তুলতাম। এখন শুধু কলেজ অধ্যক্ষ পদের বেতনভাতা নিচ্ছি।

নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *