পাইকগাছায় কোরবানি ঈদে চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে

ইমদাদুল হক,পাইকগাছা (খুলনা)।।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে পাইকগাছায় চুইঝালের দাম ও চাহিদা বেড়েছে। মাংসের স্বাদ বাড়াতে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে অন্যান্য মশলার সাথে চুইঝাল ব্যবহার করে আসছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে মশলাটি অনেক প্রিয়।চুই ঝালের কাণ্ড মাংসের মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। চুইঝাল ছাড় মাংস বা বিরিয়ানী রান্না যেন পূর্ণতা পায় না।চুইঝাল লাগবেই লাগবে।
খুলনা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট যশোর এলাকায় বিখ্যাত মসলা এই চুইঝাল। চুইঝালের শিকড়, পাতা ও ফুল ,ফলে ঔষধি গুণ আছে। চুইঝাল মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের জেলা খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এ সব এলাকায় চুইঝাল মসলা খুব জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ঝাল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
খুলনা অঞ্চলে চুইঝালের কাণ্ড, শিকড় বা লতাকে ছোট ছোট টুকরো করে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেকোনো ধরনের মাংস, গরুর বা খাসির মাংস রান্না করা হয়। চুইঝালের রান্না মাংস এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এবং খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তবে চুই এর শিকড়ের মধ্যে কাণ্ডের তুলনায় কড়া সুঘ্রাণ ও ঝাঁঝালো স্বাদ বেশি থাকার কারণে এটি কাণ্ডের তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। চুইঝাল দিয়ে রান্না করলে মাংসে একধরনের কড়া সুঘ্রাণ এবং ঝাল প্রকৃতির, ঝাঁঝালো ও টক স্বাদ যুক্ত হয় যা মাংসের মধ্যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের স্বাদ এনে দেয়।
সারাবছরই চাহিদা ও দামের দিক থেকে উপরে থাকে মশলাটি। তবে ঈদ আসলেই চুইঝালের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা পকেট কাটেন ভোক্তাদের। কুরবানির সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাইকগাছায় চুইঝালের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চুইঝালের দোকান নিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দোকানগুলোতে ভীড়ও বাড়ছে ক্রেতাদের। সাধারণ সময়ে চুইঝাল কেজি প্রতি ৪০০ থেকে হাজার টাকা থাকালেও বর্তমানে আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮শত থেকে ১৫শত টাকা পর্যন্ত।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা,নড়াইল এলাকায় চুইঝালের চাষ হয়। মশলাটি এসব জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও মশলা হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
গদাইপুর বাজারে চুইঝাল বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, চুইঝাল সারাবছর মোটামুটি ভালোই বিক্রি হয়। তবে কোরবানির উৎসবে চুইয়ের বিক্রি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।যার ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন,তাই ক্রেতাদের কাছে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। নতুন বাজারের চুইঝাল বিক্রেতা মীর কাজল বলেন, তার দোকানে মাংস বা বিরিয়ানী রান্নার সব রকম মশলা পাওয়া যায়। আর আদা-চুইঝাল তো আছেই। কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে চুইঝালের চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে। আর এক বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, আগে চুইঝাল চিকন (আকারে ছোট) ৪ শত থেকে ৬শ টাকায় ও কিছুটা বড় চুইঝাল ৮শত টাকা কেজিতে বিক্রি করতাম। কোরবানি উপলক্ষে বাজারে চাহিদা বাড়ায় পাইকারী দরে কিনতেই বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে। তাই চুইঝালের সাইজ অনুযায়ী কেজি প্রতি ৮শত থেকে ১৫শত টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চুইঝাল কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা বছর মাঝে মধ্যে চুইঝাল খাওয়া মাংসের সাথে। কিন্তু কুরবানির সময় গরুর মাংসের সাথে চুইঝাল না হলে চলে না।
গদাইপুর বাজারে চুইঝালের ক্রেতা আব্দুল করিম বলেন, চুইঝালের দাম ঈদের আগে আরো বাড়তে পারে। তাই ভিড় এড়াতে আগেভাগেই চুইঝাল কিনতে এসেছি। আমরা শুধু গরুর মাংস না, সব ধরণের মাংস,বড় মাছ ও মজাদার খাবারেই চুইঝাল খাই। তবে কুরবানি উপলক্ষে দাম কিছুটা বেড়েছে। ঈদের সময় চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস অতিথিদের খুবই পছন্দের। দাম একটু বৃদ্ধি পেলেও, মাংস খেতে চুইঝাল লাগবেই। চুইঝালের মাংস রান্নার স্বাদই অন্যরকম উপলব্ধ হয়।

ইমদাদুল হক,
পাইকগাছা, খুলনা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *