গোদাগাড়ীতে নিলামে পানির দামে ৩৮ শাহীওয়াল গরু। এমপির নির্দেশ উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ নিলামে গরু কেনার জন্য ৩৫০-এর বেশি ব্যক্তি ব্যাংকে বিডি করে হাজির হয়েছিলেন রাজশাহীর রাজাবাড়িতে অবস্থিত দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে। সবার সামনে একে একে ডাকে তোলা হয় খামারে পালন করা পাকিস্তানি শাহীওয়াল জাতের গরুগুলো। কিন্তু নিলামে মাত্র ৫-৬ জন ছাড়া আর কেউ ডাকে অংশ নেননি। তারাই ঠিক করেন ৫-৬ জনের মধ্যে কে নেবেন কোন গরু। এভাবে ৩৮টি গরু নামেমাত্র দরে কিনেছেন তারা। প্রতিটি গরু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নির্ধারিত সর্বনিম্ন দামের চেয়ে মাত্র ৬০০ টাকা বেশি করে দিয়ে নিয়ে গেছেন তারা। এই নিলাম সিন্ডিকেটের মূলহোতা মেহরাব। তিনি স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছোট ভাই। এই সিন্ডিকের দাপটে অন্যরা নিলামে দাম হাঁকার সাহস পাননি। অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয় এমপি ফারুক চৌধুরী ফোন করে তাৎক্ষণিক নিলাম কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু তা কানে তোলেনি কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজাবাড়ি দুগ্ধ ও গবাদি খামারের ৫১টি গরু ‘পালনের অনুপযোগী’ দেখিয়ে উন্মুক্ত নিলামে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে গাভী ১০টি, বকনা ১৬টি, এঁড়ে ২১টি ও ৪টি বড় ষাঁড়। নিলামের জন্য গ্রেড ভেদে প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের দাম অনুমোদন করা হয় ২৭৫ টাকা ও ২৬০ টাকা। গতকাল গরু নিলামের নির্ধারিত দিন ছিল। নিলামে অংশ নিতে ৩৫৭ জন ব্যাংকে বিডি করেছিলেন।

গতকাল বেলা ১১টায় খামারে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ ব্যক্তি এসেছেন নিলামে অংশ নিতে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও নিলাম কমিটির সভাপতি ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন, দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারের উপ-পরিচালক ও নিলাম কমিটির সদস্য সচিব ইসমাইল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিলামের কার্যক্রম শুরু করেন। তবে কমিটির সদস্য হিসেবে স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি আব্দুর রশিদ নিলামে উপস্থিত ছিলেন না। প্রথমে একটি বড় ষাঁড় নিলামে তোলা হয়। সরকার নির্ধারিত দাম হিসাবে ষাঁড়টির মূল্য ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বলা হয়। তবে এই ডাকে তিনজন দর হাঁকেন। এর মধ্যে একজন ২০০ টাকা এবং আরেক জন ৪০০ টাকা দর বলেন। তবে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেহরাব মাত্র ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে ষাঁড়টি কিনে নেন। অর্থাৎ ওই ষাঁড়টি নিলামে ১ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। পরের ষাঁড়টির সরকারি দাম হাঁকা হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এবারও মেহরাব সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মাত্র ৮০০ টাকা দিয়ে এটি কিনে নেন। নিলামে মেহরাব, লতিফ, তাজমুল, উৎসব, কালু ও রেজোয়ান ছাড়া আর কেউ ডাকে অংশ নেয়নি।

সিন্ডিকেটের বাইরের ওয়াকিল নামে একজন নিলামে ডাক দিতে চাইলে তাকে তাড়িয়ে দেয় মেহরাবের লোকজন। এমনকি মেহরাবই নিলাম কমিটির কর্মকর্তাদের বলে দেন খাতায় কার নামে কত দর লিখতে হবে। এভাবে নিলাম কমিটি প্রতিটি গরু মাত্র ৬০০ টাকা বেশি দরদাতার কাছে বিক্রি করা হয়। ফলে ৩৮টি গরু ২৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

এ খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা দিতে স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারের উপ-পরিচালক ও নিলাম কমিটির সদস্য সচিব ইসমাইল হককে ফোন করে নিলাম কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। এ সময় সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য ইমন মণ্ডলের কাছে পরামর্শ চান ইসমাইল হক। ইমন ওই কর্মকর্তাকে বলেন, ‘আমরা কোনো দুর্নীতি করছি না। আপনি নিলাম চালিয়ে যান।’ ফলে এমপির নির্দেশের পরও নিলাম বন্ধ হয়নি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মেহরাব বলেন, ‘কাউকে নিলামে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেওয়া হয়নি। কেউ না ডাকলে আমাদের কিছু করার নেই।’

এ বিষয়ে উপ-দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারের পরিচালক ইসমাইল হক ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, ‘মেহরাব সিন্ডিকেটের কাছে আমরা অসহায়। তারাই এখানে বড় পার্টি। সবকিছু বুঝি। কিন্তু করার কিছু নেই। এই নিলামে জন্য ৩৫০ জনের ওপরে বিডি করেছিল। কিন্তু দর বলেছে ওদের ৪-৫ জনই। অন্য কেউ আসেনি।’

রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবছর একটি সিন্ডিকেট এ কাজ করে। তার লোক ছাড়া আর কেউ ডাক দিতে পারে না। এটা তো অপরাধ। অভিযোগ পাওয়ার পর নিলাম স্থগিত করতে ডিডি সাহেবকে ফোন করেছিলাম। উন্মুক্ত নিলামের ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম।

মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *