নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখার সাবেক ম্যানেজার মোঃ আমিনুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (AGM), তিনি একজন দক্ষ, কর্মঠ, উত্তরা ব্যাংকের একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ঋনের কিস্তি উত্তোলন, ঋন প্রদান, নতুন একাউন্ট খোলা, স্টুডেন্টস একাউন্ট খোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে ছিলেন। তাই তো গোদাগাড়ীর সকল ব্যাংককে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পেরেছিল উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখা। ওই সময় উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখার গ্রাহকগণ যে সেবা পেয়েছিলেন বলে সবাই আমিনুল ইসলাম ম্যানেজারকে এক নামে চিনে তার প্রশাংসা করে, ব্যাংককে তার উদাহরণ দেন। এখন সে ব্যাংক গ্রাহক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অনেকে অভিযোগ করছেন। উত্তরা ব্যাংক থেকে হিসেব গুটিয়ে নিয়ে অন্য ব্যাংকে চলে যাচ্ছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গোদাগাড়ীর একটি ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক নাম প্রকাশ না করা শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, মহিশালবাড়ী উত্তরা ব্যাংক চলে হন্ডি ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ীদের টাকায়। তাদের খেলাপী ঋন, খারাপ ঋনের সংখ্যা অনেক বেশী। ওদের ওখানে শিক্ষিত, বৈধ ব্যবসায়ীদের সম্মান নেই, সম্মান আছে লুঙ্গী পড়া, ব-কলম অবৈধ টাকার মালিকদের, একজন ব্যাংক কর্মকতা হিসেবে লজ্জা পায় যখন শুনি ম্যানেজার, সেকেন্ড অফিসার
হেরোইন ও হন্ডি ব্যবসায়ীর বাসায় ভাড়া থাকেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকে আমাদের এখানে গ্রাহক হচ্ছেন। একই মন্তব্য করেন, গ্রাহক নাজমুল হক, মাহাতাব, শাহীন, মাসুদ আলম, এমএন রেদওয়ান, শহিদুল ইসলাম তুসারসহ অনেকে।
উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখা ম্যানেজার হিসেবে গত ১৪ জানুয়ারী যোগদান করেছেন মেহেদী হাসান। তিনি যোগদান করে হেরোইন, হন্ডি ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। এমনি তিনি নিজেই গরুর রাখাল দিয়ে কর্মজীরন শুরু করা হন্ডি, মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ী ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।
এ ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার হিসেবে সম্পতি আরঙ্গজেব দেওয়ান যোগদান করে ম্যানেজারের পথ ধরে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী, মাদক মামলার আসামী, তিন তিন টি বিয়ে করা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাট রাজকীয় বাড়ীতে ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।
ম্যানেজার মেহেদী হাসান ও সেকেন্ড অফিসারের মাদক, হন্ডি ব্যবসায়ীদের বাড়ী ভাড়া নেয়া এবং সখ্যতা গড়ে তোলার বিষয়টি সাধারণ বৈধ ব্যবসায়ী, শিক্ষিত মানুষ উত্তরা ব্যাংকের প্রতি বিমুখ হয়েছে পড়েছেন। অনেকে এ দুই ব্যাংক কর্মকর্তার আচারনে নাখোশ। গত ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি এ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে পূবালী ব্যাংক গোদাগাড়ী উপ-শাখায় একজন আওয়ামীনেতা, ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা, দুজন শিক্ষক যথাক্রমে ১০ লাখ ও ৩ লাখ টাকা এফডিআর করেছেন। শিক্ষক সমিতি করেছেন ৩৭ লাখ টাকার এফডিআর।
এমনি তো উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখার কর্মকর্তা আবু তাহের কর্মরত থাকা এসডিপিস, সঞ্চয়, বিভিন্ন হিসেব নম্বরে টাকা জমা দেয়ার সময় এন্টি না করে ভাউচার নষ্ট করে ১০ লাখ লাখ টাকা আত্নসাৎ করার অভিযোগে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। এ নিয়ে অনেকে উত্তরা ব্যাংক বিমুখ রয়েছে। অনেকে এ ব্যাংককে গ্রামীণ বলে আখ্যায়িত করছেন।
গত ৮ এপ্রিল রমিসা বেগম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল পড়া প্রকৌশলী মেয়ে নিয়ে উত্তরা ব্যাংক মহিশালবাড়ী শাখায় গিয়েছিলেন। স্বামী নকিমুদ্দিন শাহ গত বছর ডিসেম্বরে মারা যান। তিনি হাটপাড়ার বাড়ী মরগেজ রেখে ৫ লাখ টাকা সিসি লোন নিয়েছিলেন। ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিলেন। ৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা বেড়ে হয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। মেয়ের প্রাইভেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে কিছু টাকা ম্যানেজ করে ব্যাংক, লোন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। ম্যানেজার মেহেদী হাসানের নিকট অনুরোধ করেছিলেন রমিসা বেগম ও তার মেয়ে। আমাদেরকে টাকা কমানোর জন্য ঢাকায় আবেদন করার সুযোগ করে দেন। কিন্তু তিনি কোন কর্নপাত করেন নি। তারা জানান, নকিমুদ্দিন মারা যাওয়ার সময় সাবেক ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম আমাদের কথা দিয়েছিলেন এব্যপারে সাহায্য করবেন একথা শুনার বর্তমান ম্যানেজার খুব রাগ করেন। এসময় ব্যাংকে আসেন এক মাদক ব্যবসায়ী হোন্ডি ব্যবসায়ীর গড ফাদার ৮ লাখ টাকা জমা দেয়ার জন্য। ম্যানেজার চিয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান তার সাথে কুশালাদি বিনিময় করে তাকে সেকেন্ড অফিসারের নিকট নিয়ে গিয়ে পরিচয় করে দেন। এদিকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মেয়েটি মা রমিসা বেগমকে বলেন, কান্না কর না তুমি দোয়া কর একদিন বড় হয়ে তোমার মুখে হাসি ফুটাবো। বাবা নেই আমি আছি মা। এ বলে ৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ম্যানেজারের মাধ্যমে পরিশোধ করে মৃত্যু বাবাকে ঋণ মুক্ত করেন। ওই সময় ব্যাংকের ক্যাশে তুমুল হৈ চৈ শুনা যায় এক গ্রাহককে ছেঁড়া টাকা দিয়েছেন এক বাউন্ডিল গ্রাহক বুঝতে না পেরে বাড়ী চলে যান। পরে ফিরে এসে ছেঁড়া টাকাগুলি পরিবর্তন করতে এলে বর্কবির্তক হৈ হুল্লা শুরু হয়। আর ম্যানেজার সেকেন্ড অফিসার মাদক ও হোন্ডি ব্যবসায়ীর গড় ফাদারের সাথে খোস গল্পে ব্যস্ত ছিল। ওই গ্রাহক ছেঁড়া টাকা পরিবর্তন না পেয়ে রাগ করে ব্যাংক ত্যাগ করেন। বিষয়টি সেদিন উপস্থিত অনেক গ্রাহক অবগত আছেন।
এ দিকে মহিশালবাড়ী শাখার সাবেক ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম তার ফেসবুক ভেরিভাই পেজে লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে উত্তরা ব্যাংকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক (AGM) হিসাবে পদোন্নতি পেলাম। ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট সহ সকল শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী এবং পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার জোনাল হেড স্যারদের প্রতি যাদের দিক নির্দেশনায় আমি আজ এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার গ্রাহকদের প্রতি যাদেরকে সেবা দিতে পেরে আজকে আমার এই পদোন্নতি। বিশেষ করে ম্যানেজার হিসেবে আমার সাবেক শাখা সিরাজগঞ্জ জেলার শুভগাছা শাখা এবং রাজশাহী জেলার মহিসালবাড়ি শাখার সকল গ্রাহকদেরকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। মহিশালবাড়ি শাখার মাটি ও মানুষের সাথে আমি একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম। এমনকি ওই শাখার মাটি ও মানুষগুলো আজও আমাকে নেশার মতো কাছে টানে।
উত্তরা ব্যাংকের ডিজিএম অলক কুমার সাথে দুই ব্যাংক কর্মকর্তা হেরোইন ব্যবসায়ী, হোন্ডি ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতার, তাদের বাড়ী ভাগা থাকা, গ্রাহকের সাথে খারাপ আচারণের ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নয়, তবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবো। এ ব্যপারে ম্যানেজার মেহেদী হাসানের সাথে মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইল কেটে দেন।
এ ব্যপারে সেকেন্ড অফিসার অরঙ্গজেব দেওয়ানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি নতুন এসেছি এখানে আমার এক সহকারী ওই বাসায় থাকে, সে আমাকে উঠিয়েছে। সে যে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী এটা অবগত নয়।

Leave a Reply