তানোরে অসময়ে বৃষ্টি নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে

আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর তানোরে দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে উঠতি ফসল বিশেষ করে আলুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পেঁয়াজ, ভুট্টা, আলু, লাউসহ বিভিন্ন সবজি খেতে হালকা জমেছে পানি। ইটভাটার কাঁচা ইট পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উপজেলার ২টি ইটভাটায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছ। এমনটাই দাবি করেছেন ইটভাটার মালিকেরা। গত বুধবার উপজেলার দুটি ইটভাটার প্রস্তুতকৃত কাঁচা ইট বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। এছাড়াও তানোরের সীমান্তবর্তী মান্দার বাঁকাপুর অনেক ইটভাটায় পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন শ্রমিকেরা দেখা গেছে।উপজেলায় মৌসুমের শুরুতে ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। তবে হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ায় সাজানো কাঁচা ইটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই এত বড় ক্ষতির কারণে ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে ভাটার মালিকদের এমনটিই জানালেন মালিকেরা।
সরেজমিনে তানোরের মুন্ডুমালা ও মান্দার বাঁকাপুর ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, বুধবার দিনের বৃষ্টিতে প্রায় সব ইটভাটার কাঁচা ইট ভিজে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ইটভাটা নিচু এলাকায়। ইট ভাটার শ্রমিক আব্দুল রশিদ ও আলমগীর হোসেন জানান, তাঁরা এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ভাটায় প্রতিদিনই কাজ হচ্ছিল। কিন্তু মঙলবার দিবাগত রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই কাজ বন্ধ তাঁদের। কাজ বন্ধ থাকলে টাকাও পান না। মুন্ডুমালা পৌর এলাকার ইটভাটার মালিক শামসুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে ভাটায় আগুন দেওয়া হয়েছে মাত্র। এছাড়াও প্রায় এক লাখ কাঁচা ইট প্রস্তুত করা হয়েছিল। গত এক দিনের বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে প্রায় সব কাঁচা ইট ভিজে গেছে। এতে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাঁকাপুর গ্রামের হিরোভাটা মালিক টোকেন বলেন, ‘ভাটাতে প্রায় দেড় লাখ কাঁচা ইট প্রস্তুত করা হয়েছিল। হঠাৎ বৃষ্টি মোকাবিলায় তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এক দিনের বৃষ্টিতে কাঁচা ইট ভিজে গেছে। ভিজা ইট আগুনে পোড়ালেও ভালো দাম পাওয়া যায় না। সব ইটভাটা মালিকরাই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তানোরের আলু চাষি শামসুল ও আব্দুল বলেন একদিন আগে জমি থেকে আলু গাছ তোলা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জমিতে হালকা পানি জমেছে। আর এক দিন এ ধরনের বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আলু পচে যাবে। এতে তাদের ব্যাপক লোকসান হবে।’ তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন,গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে উঠতি ফসলে কিছু সাময়িক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে আজ কালের মধ্যে বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে আশা করছি ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
এদিকে বৃষ্টিতে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তানোরের সীমান্তবর্তী শ্যামপুর গ্রামের ভ্যানগাড়ি চালক মজিবুর বলেন, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে মানুষজন তেমন বের হচ্ছে না। ভ্যানগাড়ির যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এ সপ্তাহে কিস্তি দিতে হবে এক হাজার টাকা। সে টাকা বৃষ্টির কারণে উঠবে বলে মনে হচ্ছে না।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বলেন,
রাজশাহীতে গত ২৪ ঘন্টায় ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে সকাল থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টি বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ৮ মিলিমিটার রের্কড করা হয়েছে। তবে এই বৃষ্টি আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।এছাড়া আগামীকাল ও পরশুদিনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ অবস্থায় বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের অনেক জায়গায় এবং কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে তিন ডিগ্রি এবং রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি হ্রাস পেতে পারে।#

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *