গোদাগাড়ীতে হেরোইনসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার মসজিদের ইমাম- বিষয়টি টক অফ দ্যা কান্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাধুর মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১০০ গ্রাম হিরোইনসহ মহিশালবাড়ী (পুরাতন) জামে মসজিদের ইমামকে গ্রেফতার করেছে এক র‌্যাব ৫ এর সদস্যগণ। বিষয়টি টক অফ দ্য কান্টিতে পরিনত হয়েছে। তার গ্রেফতারের পর নিন্দা প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কমিটির লোকজন জেনে শুনে কেন একজন মাদক ব্যবসায়ী বছরের পর বছর ইমাম রেখেছেন এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। কেউ বলছেন সে চর থেকে এসে ইমামতির আড়ালে মাদক ব্যবসা করতেন তার বাড়ী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের যাতায়াত ও সুসম্পর্ক ছিল।
তার প্রেফতারের খবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারনাকে পেছনে ফেলেছে।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাব নিয়মিত জঙ্গী, অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, অস্ত্রধারী অপরাধী, ভেজাল পণ্য, ছিনতাইকারী, ধর্ষণ, অপহরনসহ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে গোদাগাড়ী থানাধীন গোদাগাড়ী- কাঁকন‌হাট সড়কের সাধুরমোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে খালিদুজ্জামান ওরফে কাওসার নামে এক মাদক-কারবারিকে গ্রেফতার করে। সে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি।

ধৃত আসামী অবৈধ হিরোইন অজ্ঞাত স্থান হতে গোপনে সংগ্রহ করিয়া রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করার জন্য যাচ্ছিল এসময় তাকে সন্দেহ হলে তার দেহ তল্লাশি করে ১০০ গ্রাম হিরোইন উদ্ধার করে ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীকে অবৈধ মাদকদ্রব্য হেরোইন সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় যে, উক্ত হিরোইন বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসতেছিল। সে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী

স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামী খালিদুজ্জামান কাউসার মহিশালবাড়ী শাহ সুলতান রহ. কামিল মাদ্রাসার ফাজিলের ছাত্র ও গোদাগাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মহিশালবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। এই ইমামতির আড়ালে তিনি দীর্ঘদিন হতে হেরোইনের ব্যবসা করে আসছিল। র‌্যাবের জালে ধরা পাড়ায় এলাকাবাসী মাঝে প্রশ্ন জেগেছে আমারা কার পেছনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছে, সে একজন কুখ্যাত মাদক সম্রাট। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করে দিন।

সে একজন কুখ্যাত মাদক চোরাকারবারী। মাদক ব্যবসা করে সে শূন্য থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ তার পর বটবৃক্ষ হয়েছেন। মসজিদ কমিটির সদস্যদের অবহিত না করে তিনি কখনও কখনও রাজশাহী, নাটোর, সিলেট, ঢাকা চলে যেতেন। মাসে মাসে হোন্ডা পরিবর্তন করতেন, সর্বশেষ সাড়ে তিন লাখ টাকার হোন্ডা ব্যবহার করতেন এ মাদক চোরাকারবারী ইমাম।

অনেক দিন তিনি মসজিদে ফজরে ইমামতি করতে আসতেন না। তার শালক মুয়াজ্জিনকে দিয়ে ইমামতি করাতেন। তিনি জোর তদবির করে শালককে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ করেছেন। মাঝে মধ্যে মসজিদে ফরজের নামাজের আজানও দেয়া হত না। শালক দুলা ভাই অনুউপস্থিত থাকতেন। এজন্য মুসাল্লীগণ তাদের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন এবং মসজিদ কমিটি ফয়েক দফা ইমাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন কিন্তু প্রশাসনের তালিকাভুক্ত মাদকব্যবসায়ীরা কথিত ইমাম কাউসারের পক্ষ নেয়ার কারনে তাকে বাদ দিতে পারেন নি বলে কমিটির এক সদস্য দাবী করেন।

১৫ বছর ধরে সে এখানে বসবাস করছেন। প্রকৌশলী গোলাম মোস্তেফা ও খাতিজা খাতুনের বাড়ী ভাড়া থাকলেও বর্তমানে ১৫ লক্ষাধিক টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করে বাড়ী নির্মান করেছেন। বাড়ীতে বিলাস হোন্ডা, রাজকীয় আসবাবপত্র, ২০ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ রয়েছে। ছাত্র জীবনে নাম মাত্র মাসিক ৮ হাজার টাকার বেতনে ইমামতি করে এত অর্থ সম্পদের উৎস কোথায় জনমনে প্রশ্ন?

অনেক সময় তাকে প্রশাসনের তালিকাভুক্ত মাদকব্য বসায়ীদের সাথে বিভিন্ন স্থানে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতে দেখা যায়। সে যে মাদককারবারী সাথে জড়িত এলাকাবাসী সন্দেহ করতেন। কিন্তু বলতে পারতেন না।

উল্লেখ্য তার ভাই গোদাগাড়ী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের আলিপুর জামে মসজিদের খতিব ( ইমাম) মাদক সম্রাট মাও. মোঃ জাকির হোসেন ৩১০ গ্রাম হেরোইনসহ হাতেনাতে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।

নাটোর জজকোর্টের অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালের ২২ মে বনপাড়া বাইপাসে যাত্রীবাহী বাস থেকে ৩শ ১০ গ্রাম হেরোইনসহ জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে থানায় সোপর্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জাকির ঘটনার পর থেকেই কারাগারে রয়েছেন। মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ ও প্রমাণ শেষে জাকির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও একলাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন আদালত। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে রয়েছে। তারা পারিবারিকভাবে মাদক কারবারের জড়িত।

আটককৃত ব্যক্তি হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানীনগর এলাকার লোকমান হোসেনের ছেলে। তার পিতা লোকমান হোসেন রানীনগর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক বলে জানা গেছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা কয়েক ভাই চর রানিনগর এলাকা থেকে এসে বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গেড়ে ইমামতি করার যোগ্যতা না থাকলেও মাদক ব্যবসা আড়াল করতেই লেবাসধারি ইমামের পথ বেছে নিয়েছেন। মাদক ব্যবসা করে অল্প সময়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

মূলত মাদক ব্যবসায় সমস্যা হওয়ার কারণে তার ভাই জাকির হোসেন ইমামতি থেকে ছুটি নিয়ে ঘন ঘন নাটোর, পাবনা, ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও ভারতে গমন করতেন। এলাকার ১ টব কেজি স্কুলের সহকারি শিক্ষক হিসেবে আছে তারই নিজ ভাই এবং তার স্ত্রী। সেখানে চলে মাদক ক্রয় বিক্রয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তার আর এক ভাই মাও. হাফিজুর রহমান গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে ফাজিলপুর জামে মসজিদের খতিব ( ইমাম) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় দেড় বছর আগে জেএমবি ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতার আভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে গ্রেফতার হন। দীর্ঘ ৫ মাস পর ছাড়া পান, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ওই সংস্থা তাকে তিন মাস পূর্বে এককই অভিযোগে মাও. হাফিজুর কে গ্রেফতার করেন, তিনি জামিনে ছাড়া পেয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহনীর চোঁখ ফাকি দিয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান বর্তমানে সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন।

গত ঈদুল আযহার জামায়াতে ৪৫ মিনিট দেরী করে এসেছিলেন ইমাম কাউসার মাদক ব্যবসায়ীদের সুসম্পর্ক থাকার কারণ, যখন তখন ছুটি নিয়ে বাহিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চেয়েছিলেন কমিটির সদস্য প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ করে বলেন, কমিটির সদস্যরা ইমামের তুয়াজ করেন, ইমাম তো যা ইচ্ছে তাই করবেন। ইতিপূর্বে পত্রিকায় ইমামের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিউজ প্রকাশ হওয়ায় বেশীর ভাগ সদস্য এ ইমামকে বাদ দেয়ার পক্ষে মতামতদেন। কিন্তু কমিটির সভাপতি নূর বকত হাজি, সদস্য নূরুল ইসলাম ফিটু তাকে ভুল স্বীকার করে রাখার পক্ষে জোরালো মতামত দেন। পরে ইমাম কুকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করেন এবং ভবিষ্যতে নিয়মিতভাবে মসজিদে ইমামতি করবেন এমর্মে অঙ্গিকার করেন বলে ওই যাত্রা রেহায় পান।
এ ব্যপারে আলহাজ্ব নূর রকত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি নিউজটি ফটোকপি করে পড়েছিলাম, ইমাম সাহেব ও পড়েছেন। কার ভিতরে কি আছে আমরা তো এটা বুঝতে পারি না। গ্রেফতারের কয়েক দিন আগেই আমরা মিটিং করে তাকে বাদ দোয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি।

এ ব্যপারে বিশিষ্ট আলেম, প্রবীন খতিব মাও. আব্দুল মান্নান বলেন, একধরনের সমজিদ কমিটির সদস্যগণ কোন প্রকার যোগ্যতা, সদনপত্র না দেখে কম বেতনে ছাত্রদেরকে ইমাম, খতিব নিয়োগ দিচ্ছেন, তারা বির্তর্কিক ক্ষুদবা দিয়ে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছেন। এরা কথায় কথায় মিথ্যা বলেন। ইমামের আড়ালে মাদক ব্যবসা করে, মাদকসহ গ্রেফতার হাওয়ার পর প্রকৃত ইমাম, আলেমগণ আজ বেকায়দায় পড়ছেন। লজ্জা পাচ্ছেন, বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন, যেন আর কোন ইমাম মাদকের সাথে সংশ্রিষ্ট হতে না পারে।

গোদাগাড়ীতে মাদকের ছড়াছড়িতে রীতিমত হতাশ গনমাধ্যমকর্মী, সাধারণ মানুষ ব্যক্তিবর্গ। ইমামদের হেরোইন ব্যবসার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আলেম সমাজসহ সবাইকে ভাবিয়া তুলেছেন। মানুষ নানাভাবে টিচ করছেন। এদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। যেন আর কোন লেবাসধারি মাদক ব্যবসায়ী হতে না পারে। আর মসজিদ কমিটির উচিৎ যোগ্যতা অনুয়ায়ী সনদপত্র যাচাই বাছাই করেই ইমাম ও খতিব নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কম বেতনে ইমামতি করতে রাজি হন এধরনের মাদক ব্যবসায়ী কথিত ইমামগন।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *