ব্যবসায়ী পরিচয়ে প্র*তারণায় লিপ্ত গরু চু*রি মামলার আসামি যুবদল নেতা জলিল

বাবুল হোসেন,
পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। একই সাথে জানা যায় সে গরু চুরি মামলার আসামি হওয়ার পরেও নিজেকে বিএনপির প্রধান অঙ্গসংগঠন যুবদলের তেঁতুলিয়া উপজেলা শাখার দেবনগড় ইউনিয়নের নেতা পরিচয় দিয়ে আসছে। আব্দুল জলিল তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের মাঝগ্রাম এলাকার ভ্যান চালক ছহির উদ্দিন ওরফে সরাফত আলীর ছেলে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গরু চুরি ও পাথর ব্যাবসায় প্রতারণা মামলার আসামি হলেও নারী দিয়ে ব্লাকমেই ব্যবসা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম সহ মাদক ব্যবসায়ী, সীমান্তে চোরাকারবারীদের সাথে তার সক্ষতা রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে পঞ্চগড়ে গরু চুরি ও নরসিংদী বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জলিল ও তার বাবাকে আসামি করে আইটিসি ধারায় প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানাগেছে। অপরদিকে ঢাকার শ্যামপুর মডেল থানা, ডি.এম.পিতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আর্তসাৎ করার অভিযোগ দায়ের করেছেন আরেক ভুক্তভোগী। একই সাথে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়ায় আব্দল জলিলকে আসামি করে জিডি মূলে অভিযোগ দায়ের করেছে আরেক ভুক্তভোগী।

এর মাঝে গত ২০২০ সালে পঞ্চগড় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি গরু চুরির মামলা দায়ের হয়। মামলার এজাহারে সুত্রে জানা যায়, গরু চুরি করে জবাই করে খাওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাকে আটক করে জেল হজতে প্রেরন করলে ১৮ দিন জেল হাজত বাস করেন আব্দুল জলিল।

একাধীক তথ্য পাওয়ার পর অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আব্দুল জলিল পাথর- বালি সরবরাহাকারী ব্যবসায়ী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) লোভনীয় প্রচারনা চালিয়ে পাথর- বালি দেয়ার নাম করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।

সাম্প্রতিক সময়ে পাথর দেয়ার কথা বলে নরসিংদী সদরের চিনিশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইজায়েত রহমান রিফাতকে পাথর দেয়ার কথা বলে ৭ লক্ষ আট হাজার টাকা নেয়। টাকা পাঠানোর পরেও কোনো পাথর দেয়নি। এর পর দেবনগড় এসে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সলেমান আলীকে সাথে নিয়ে জলিলের বাড়ি গেলে উল্টো রিফাদকে হুমকি দিয়ে তারিয়ে দেয়। এর পর রিফাদ জলিলের বিরুদ্ধে আইটিসি ধারায় অর্থ আত্মসাদের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে বলে জানান।

একই ভাবে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকার প্রথম শ্রেনির ঠিকাদার আসাদুজ্জামান খান ইসা ও মালেকুজ্জামান খান মাসুদ এর প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পর জামান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে অর্থ আর্তসাৎ করার অভিযোগ দায়ের করেন।

দীর্ঘ অনুসন্ধানে বিরিয়ে আসে আরো অনেক কিছু। একই সাথে ঢাকার বসুন্ধরা রিভার ভিউ এলাকার পাথর ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামের পচাশি হাজার টাকা, ঢাকার উত্তর বাড্ডা এলাকার মের্সাস আইলেট প্লাস এর সত্তাধিকারী ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের নব্বই হাজার টাকা, গাজিপুর ও ঢাকার পাথর ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান, উত্তম খান, শানভি আহম্মেদ, এম এ শাকুল ও মান্না হীরা এবং রন্জিৎ শর্মা সহ অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে আসছে। ভুক্তভোগী অনেকেই পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালালেও কখনো তাকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির যুবদল নেতা পরিচয়ে চুরি ও প্রতারণার পাশাপাশী নারী দেহ ব্যবসায়ীদেন নিয়ে এলাকার মানুষদের লোভে ফেলে ফাঁদ তৈরী করে। একসময় মানুষজনকে আটক করে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও ধারন করে তা প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ভুক্ত ভোগীরা লোক লজ্জার ভয়ে কেউ কখনো প্রতিবাদ করেনি। আর এসব কর্মকান্ডে একটি গ্যাং তৈরি করেছে।

এদিকে আব্দুল জলিল নিজেকে বিএনপি’র নেতা পরিচয় দিয়ে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নায়ন অগ্রযাত্রর বিরুদ্ধে প্রায় সময় ফেসবুকে লাইভে এসে সমালোচনা ও হেয় করে আসছেন।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দেবনগড় ইউনিয়নে নির্মাণাধীন করতোয়া সোলার লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার সুজা মিয়া জানান, দেশ ও জনগনের কল্যানে নির্মিত বিদ্যুৎ সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মানে ভূমি অধিগ্রহণ কাজে আব্দুল জলিল যুবদল নেতা পরিচয়ে বার বার চাঁদার দাবীতে বাধা সৃষ্টি করছে। যেহেতু দেশের উন্নয়ন প্রকল্প তাই কিছু কাজ এগিয়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

জলিল এর কোনো উচ্চ শিক্ষা না থাকার পরেও সে রংপুর থেকে প্রকাশিত একটি ছোট অনলাইনের পরিচয় পত্র নিয়ে বর্তমান এসব কার্যক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে অভিযোগ আছে তার বড় শক্তি হিসেবে পঞ্চগড় জেলা যুবদলের সিনিয়র কয়েক জন নেতা ও তেঁতুলিয়া যুবদলের দুজন, বিএনপির একজন এবং তেঁতুলিয়ার সাবেক এক জন প্রতিনিধি সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের কিছু নেতা কর্মী তাকে সহযোগীতা করে আসছেন।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক এনাম খন্দকার জানান, আমরা কাউকে তার ব্যক্তিগত কাজে দলের নাম ব্যবহার করার অনুমতি দেইনি। তবে তার অভিযোগে দ্রুত মিটিং ডেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে একাধীক অভিযোগের ভিত্তিতে মুঠোফোনে আব্দুল জলিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সার্বিক বিষয়ে কথা হয় তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু’র সাথে। তিনি জানান, বর্তমান সরকার দেশ ও জনগনের কল্যানে উন্নয়নে বিশ্বাসী, তারি ধারাবাহিকতায় প্রান্তিক এই উপজেলায় সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হচ্ছে। এর সুফল পঞ্চগড় তথা দেশবাসী ভোগ করবেন। কিন্তু বিএনপির কিছু কর্মী যারা চোর বাটপার তারা দেশের উন্নয়ন কাজে বাঁধা সৃষ্টি করছে। আমি জলিলের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তার বিরুদ্ধে জরালো ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে মৌখিক অনেক অভিযোগ পেয়েছি। অনেক ব্যবসায়ী প্রতারিত হয়ে আমাদের কাছে আসছে। সকল ব্যবসায়ীকে মামলা করার পরামর্শ দেই

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *