প্রাথমিক শিক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন ইউএনও

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
তিনি একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শনে ছুটে যান। আর পর্যবেক্ষণ করেন পাঠদান কার্যক্রম। মতবিনিময় করেন শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে।

এ সময় আলোচনায় উঠে আসা বিদ্যালয়ের সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণের পরামর্শও দেন তিনি। শুধু পরামর্শই নয় বরং বাস্তবে সমাধান করেও দেখান। বিভিন্ন স্কুলের সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, মাঠ সংস্কার, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এর সাক্ষ্য বহন করা। প্রায়ই আবার শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময়ের সময় শুরু করেন বিশেষ পাঠদান। এ সময় তার চমৎকার উপস্থাপনা আর আনন্দময় পাঠদানের ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝেও থাকে সুনসান নীরবতা। শিক্ষক না হয়েও প্রায়ই শিক্ষার্থীদের পাঠাদানে এভাবেই শিক্ষকের ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছেন তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজাবে রহমত ।

তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মিজাবে রহমত গত ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল যোগদান করে অদ্যাবধি ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তারাকান্দায় যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তার পরিদর্শন ইতিবাচক ফল বয়ে এনেছে। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন নির্ধারিত সময়ে শিক্ষকদের আগমন-প্রস্থান নিশ্চিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে, ঝরে পড়া রোধ ও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধিকরণে শিক্ষক, অভিভাবকদের সাথে পরামর্শক্রমে নিয়েছেন বিশেষ পরিকল্পনা। ইউএনওর উদ্ভাবনী ধারনা ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যান তহবিল’ গঠন উপজেলায় আলোড়ন তুলেছে। এ তহবিল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা দেয়া হবে, চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরন সহায়তা দেয়া হবে। উঠান বৈঠক, মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ আর শিক্ষক সমাবেশ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধিসহ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি কো-কারিকুলার (সহ-পাঠ্যক্রম) কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে শিক্ষকদের পরামর্শ প্রদান, শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রীড়া ও আইসিটি সামগ্রী বিতরণ, মিড-ডে মিল কার্যক্রমের জন্য টিফিন বক্স বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মেছেড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রতিটি বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাব ও সংগীত ক্লাব গঠন এবং আর্ট গ্যালারী করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন।যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে অনেক বিদ্যালয়ে।

এছাড়াও বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য ২০টিরও অধিক বিদ্যালয়ে ফুলের টব বিতরণ করার পাশাপাশি বাগান ও করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য রোপন করেছেন গাছের চারা। বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষগুলো রঙিন করে তুলতে দিয়েছেন নির্দেশনা। তার নির্দেশনা মেনে ইতোমধ্যে অনেক বিদ্যালয় রং তুলির আচড়ে রঙিন হয়ে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে স্কুলের আঙ্গিনায় থাকা অনাবাদী জমিতে সবজীর চাষাবাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে চলেছেন নিজের উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘সবুজ পাঠশালা’।
ফলে শিক্ষার্থীদের চাষাবাদের অভ্যাস গড়ে উঠছে। সবুজ পরিবেশের পাশাপাশি পুষ্টিহীনতার অভাব পুরণ করতেও সক্ষম হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

খিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক বিতরণকৃত ক্রীড়া সামগ্রী একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে অন্যদিকে আইসিটি সামগ্রী কম্পিউটার শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

উপজেলার দাদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এখানে যোগদানের পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একজন শিক্ষাবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে তিনি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি নিজে পাঠদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন আরা বেগম বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয় দৃষ্টিনন্দন ও পাঠদান কার্যক্রম গতানুগতিক ধারার বাইরে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যে ভূমিকা রেখে চলেছেন তা অভূতপূর্ব।

উপজেলার রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান (বুলে ডাঃ) বলেন, প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজাবে রহমত বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যত ও চালিকা শক্তি। ইউএনও হিসেবে প্রতিটি সেক্টরে আমাকে দেখতে হয়। সে হিসেবে শিক্ষার মানন্নোয়নে কাজ করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমার প্রচেষ্টার ফলে যদি শিক্ষার পরিবেশ উন্নত হয় তাহলে সেটিও আমার সন্তুষ্টির জায়গা। মূলত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *